বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে খাদ্যের ডিলারশিপ বিক্রির অভিযোগ
Published: 12th, June 2025 GMT
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খোকনের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এমন অভিযোগ তোলেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন সাগর। অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বিকেলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা।
যুবদল নেতা সাগর ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘রায়পুরা উপজেলার যে সকল নেতা ৫০ হাজার, ১ লাখ টাকার বিনিময়ে খাদ্যের ডিলারশিপ লাইসেন্স বিক্রি করেছেন, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে।’ এই পোস্টে কয়েকজন তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। আশিক আহমেদ নামে একজন লিখেন, ‘একদিন উপজেলায় গেছিলাম, আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাইছে। আপনি পরিচিত দেখে মনে হয় ৫০ হাজার চাইছে, ৫ জন নেতার এক সিন্ডিকেটে।’
আসাদুজ্জামান আসাদ নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘৫ তারিখের (গত বছরের ৫ আগস্ট) পরে রায়পুরার কিছু সিনিয়র নেতাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় আগেই ভালো আছিলাম।’
ফেসবুক পোস্টের ব্যাপারে যুবদল নেতা মোশাররফ হোসেন সাগর সাংবাদিকদের জানান, বিগত সময়ের নির্যাতিত কিছু দলীয় নেতা ডিলারশিপের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তাদের বঞ্চিত করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের একটি অংশকে ডিলারশিপের জন্য নাম দেওয়া হয়। এই ডিলারশিপের জন্য ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে টাকা চাইলে স্পষ্ট করে বলে দিই– ১০ পয়সা খরচ করেও লাইসেন্স নেব না।’ তাঁর ভাষ্য, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নিয়োগ প্রকল্পের সভাপতি রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা। তিনি স্বাধীনভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি দলীয় নেতাকর্মীর চাপের কারণে। এই সিন্ডিকেটে কাজ করেছে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খোকনসহ উপজেলা বিএনপি ও যুবদলের কয়েক নেতা। আব্দুর রহমান খোকন টাকা ছাড়া কিছু বোঝেন না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খোকন বলেন, ‘সাগর বিকারগ্রস্ত লোক। কারও কাছে টাকা নেব– এটা চিন্তা করাই ভুল। পাপ হবে এই কথা বললে। আমি ইউএনওর কাছে কোনো নাম দিইনি। আমি সব বিষয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করি। সাগর নিজের নামে না করে আরেকজনের নামে চুক্তিতে আবেদন করছে। এখন তার নাম না থাকায় টাকা পাবে না বলে এসব করছে।’
এ ব্যাপারে ইউএনও মাসুদ রানার ভাষ্য, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগে ১১৫টি আবেদন পড়েছে। উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নে ৪৮ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে। এই ডিলার নিয়োগে তাদের অগোচরে অনেক কিছু হয়েছে, যা নিয়ে অভিযোগ আসছে। যার কারণে ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে অফিস খোলা হলে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নরস দ ৫০ হ জ র ব এনপ উপজ ল য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বন্য হাতির মৃত্যু ঠেকাতে বন বিভাগ আসলে কী করছে
সারা দেশে বন্য হাতির সংখ্যা হাতে গোনা। ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, এই সংখ্যা মাত্র ২৬৮টি। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগড়া—এ তিন উপজেলায় হাতি আছে ৩৫ থেকে ৪০টির মতো। তবে গত ১০ বছরে শুধু বাঁশখালী উপজেলায় ১৭টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। প্রায় প্রতিবছর হাতি মারা গেলেও হাতি রক্ষায় বন বিভাগ দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞদের মতে, বন বিভাগের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকায় বন্য হাতির মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।
বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতি চলাচলের রাস্তা বা করিডর সংকুচিত হয়ে পড়া, হাতির আবাসস্থলে লোকালয় গড়ে তোলা, বনাঞ্চলে খাদ্যসংকট, বিদ্যুতের ফাঁদ বা বেড়ার এবং নানা রোগের সংক্রমণে হাতির মৃত্যু হচ্ছে। বন বিভাগ এসব ক্ষেত্রে থানায় ডায়েরি বা মামলা করেই দায় সারছে। এখন পর্যন্ত বন বিভাগ এ নিয়ে বড় কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি নেয়নি। বন্য প্রাণী রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হয়েও হাতির মতো বিপন্ন প্রাণী রক্ষার কোনো উদ্যোগই নেয়নি। এমনকি অসুস্থ হাতির শুশ্রূষারও নেই কোনো ব্যবস্থা।
বাঁশখালীতেই ১৭ হাতির মৃত্যু, বন বিভাগের ভূমিকা
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দুটি বন রেঞ্জে গত ১০ বছরে ১৭টি হাতির মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে জলদী রেঞ্জে মারা গেছে ৬টি আর কালিপুর রেঞ্জে ১১টি হাতি। এসব হাতির মৃত্যু হয়েছে কৃষকের পেতে রাখা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে, বনদস্যুদের আক্রমণে, ঝিরির কাদায় আটকে, পাহাড় থেকে পড়ে ও খাদ্যে বিষক্রিয়ায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতির মৃত্যু ঘটেছে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে।
দেখা গেছে, বিদ্যুতের ফাঁদ অপসারণ, এলাকার কৃষকদের সচেতন করা, হাতির আক্রমণ ঠেকাতে রেসপন্স টিম গঠনের মতো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেসব স্থায়ী হয়নি।
বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাতি রক্ষায় বন বিভাগের কাছে প্রশিক্ষিত জনবল নেই। দুর্গম পাহাড়ে কোনো কারণে হাতি আক্রান্ত কিংবা অসুস্থ হলে সেটি নিয়ে এসে চিকিৎসা করানোর মতো ব্যবস্থা নেই। এর বাইরে বনাঞ্চলগুলোতে যথেষ্ট জলাধার না থাকায় হাতি লোকালয়ে আসে এবং আক্রান্ত হয়।
বাঁশখালীতে ১০ বছরে ১৭টি হাতির মৃত্যু উদ্বেগজনক এবং এতে স্পষ্ট হয় যে হাতি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ ছিল নাআমিনুল ইসলাম, বন্য প্রাণী সংরক্ষক ও প্রধান নির্বাহী, বেঙ্গল ডিসকভারবন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতি রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে হাতির অভয়ারণ্যে নাগরিক সুবিধা বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি বন্ধ করে দিতে হবে নতুন রাস্তা তৈরির কাজও। এর বাইরে সভ্যতার ছোঁয়া থেকে দূরে রাখতে আলো বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা প্রয়োজন। শুধু তা–ই নয়, পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ের আশপাশে জনসাধারণের খতিয়ানভুক্ত জমিগুলো অধিগ্রহণ করে জনসাধারণের যাতায়াত কমিয়ে আনা এবং বনাঞ্চল বৃদ্ধি করা দরকার।
হাতির ১২টি করিডরের কী অবস্থা
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে হাতির ১২টি হাতির চলাচলের পথের (করিডর) সন্ধান পায়। বাংলাদেশে হাতি চলাচলের জন্য চিহ্নিত এসব করিডরের মধ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের তিনটি, উত্তর বন বিভাগের পাঁচটি এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চারটি রয়েছে।
আইইউসিএন বাংলাদেশে যে ১২ হাতির করিডর চিহ্নিত করেছিল সরকার সেগুলো নির্দিষ্ট করে গেজেট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, হাতির আবাসস্থল ও পরিবেশ টেকসই রাখতে, তাদের খাদ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি চলাচলের করিডর উন্মুক্ত রাখার প্রতি সরকার গুরুত্ব দিয়েছে।
বন বিভাগ জানায়, ১২ করিডরের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন চুনতি-সাতগড় করিডর অনেকটা বন্ধ আছে। রেললাইন স্থাপনের কারণে এ করিডর দিয়ে হাতি চলাচল কমে এসেছে। ওই রেললাইনের কারণে চুনতি এলাকার হাতি চুনতিতে এবং বাঁশখালী এলাকার হাতি বাঁশখালীতে আটকা পড়েছে। এতে হাতির প্রজনন ও বংশবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বারবার একই এলাকায় হাতির প্রজনন হলে, হাতির আকার ছোট হয়ে আসে এবং ওই হাতিশাবক অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়। তাই সরকার স্বীকৃত ১২টি করিডরসহ অন্য করিডরগুলোতে নির্বিঘ্নে হাতি চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু এসব করিডরের অনেকগুলোতেই মানববসতি গড়ে উঠেছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড় থেকে পড়ে মৃত হাতি