রূপগঞ্জে মামুন হত্যা : মাহবুবের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে মানবব
Published: 14th, June 2025 GMT
রূপগঞ্জে ব্যবসায়ী মামুন ভুঁইয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাহবুবের নাম জড়িয়ে ‘অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা।
শনিবার (১৪ জুন) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাহবুবুর রহমানকে জড়ানোর চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান এবং প্রতিপক্ষকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ ও ‘গডফাদার শামীম ওসমানের ব্যবসায়ী অংশীদার’ বলে আখ্যায়িত করে নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত জায়েদুল ইসলামকে মাহবুবুর রহমানের 'ভাতিজা' বলে চালানো প্রচারণাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নির্লজ্জ মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করেন। তারা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “জায়েদুল ইসলাম মাহবুবুর রহমানের রক্তের সম্পর্কের কেউ নন।
সে অপরাধ করলে তার শাস্তি তাকেই পেতে হবে। তার ব্যক্তিগত অপরাধের দায় কোনো নেতা নিতে পারে না। রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই একটি মহল এই মিথ্যা অপপ্রচারে নেমেছে।”
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, যারা বিএনপির দীর্ঘ ১৭ বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় থেকে এখন সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে, তারাই রাজপথের ত্যাগী নেতা মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
তারা বলেন, "যারা আজ মাহবুব ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তারা আওয়ামী লীগের গডফাদার শামীম ওসমানকে দেশ থেকে পালাতে সহায়তা করেছেন এবং এখন তার ব্যবসা-বাণিজ্য ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন।"
বক্তারা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলে বলেন, "এই রফিকুল ইসলাম গত বছরের জুলাই মাসে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তাবলিগ জামাতের কথা বলে রাজপথ থেকে সরে গিয়েছিলেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপির সুদিনে তিনি আবার আবির্ভূত হয়ে রূপগঞ্জে লুটপাট ও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন।"
কর্মসূচি থেকে রফিকুল ইসলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় এবং তাকে আশ্রয়দাতা নেতার বিরুদ্ধেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা রাসেল মাহমুদ উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, "আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মতো জগদ্দল পাথরকে দেশ থেকে সরাতে পেরেছি। আপনি তো সেই তুলনায় ছোট একটি টুকরা। অপপ্রচার থেকে সরে না দাঁড়ালে আপনার পিঠের চামড়া তুলে সোজা করতে বাধ্য হব।"
বক্তারা মাহবুবুর রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তুলে ধরে বলেন, তিনি ছাত্রদল থেকে শুরু করে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে তৃণমূল থেকে আজকের অবস্থানে এসেছেন। তাকে ষড়যন্ত্র করে থামানো যাবে না।
মানববন্ধন শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাষাঢ়ায় গিয়ে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১০ জুন) রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন খোকাকে স্থানীয়রা আটক করলে তাকে ছাড়িয়ে নিতে যান ছাত্রদল নেতা জায়েদুল ইসলাম। এ সময় সৃষ্ট সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ব্যবসায়ী মামুন ভুঁইয়া (৩৫) নিহত হন।
এই ঘটনায় মামুনের ভাই ও যুবদল নেতা বাদল ভুঁইয়া বাদী হয়ে জায়েদুলকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই রূপগঞ্জে বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু এবং কাজী মনিরুজ্জামানের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। নিহত মামুনের পরিবার দিপু ভূঁইয়ার অনুসারী এবং অভিযুক্ত জায়েদুল কাজী মনিরুজ্জামানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য স ঘর ষ র পগঞ জ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ স ব চ ছ স বক হত য ক ণ ড র পগঞ জ ল ইসল ম বক ত র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের বিষয়ে নমনীয় থাকবে বিএনপি
তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদসহ আগের দাবিগুলোর বিষয়ে নমনীয় থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপি। সরকারকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখার জন্য দলটি এসব দাবি সামনে নিয়ে এসেছিল। লন্ডনে ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকের পর জ্যেষ্ঠ নেতারা এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মতৈক্য হয়। সংস্কার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে অগ্রগতি হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একমত হন তারা।
বিএনপির একাধিক নেতা সমকালকে বলেন, এর মধ্য দিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের দূরত্ব যেমন কমে আসবে, তেমনি জনগণও নির্বাচন নিয়ে স্বস্তি অনুভব করবে। অন্তর্বর্তী সরকারও স্বাচ্ছন্দ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে পারবে।
বিএনপি সম্প্রতি যে তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিল, তারা হলেন– জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। শেষের দু’জন অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের প্রতিনিধি। তরুণরা নতুন দল করায় এবং এ দু’জন সরকারে থাকায় সরকারের নিরপেক্ষতা থাকছে না বলে দাবি করেছিল বিএনপি।
আর করিডোরসহ একাধিক বিষয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় খলিলুর রহমানের পদত্যাগ চেয়েছিল বিএনপি। লন্ডন বৈঠকের প্রথম পর্বে ড. ইউনূসের সঙ্গে খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। হোটেল ডরচেস্টারে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান এবং বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিং করেন এই নিরাপত্তা উপদেষ্টা। বিএনপির সূত্র জানায়, এখন এই তিনজনের বিষয়ে নমনীয় থাকবে দলটি।
বিএনপি নেতাদের প্রত্যাশা, এখন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার উদ্যোগ নেবে। সরকার সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ করবে। এর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়াও এগিয়ে যাবে, দেশ নির্বাচনমুখী হবে।
দক্ষিণ সিটির মেয়র পদ
আদালতের রায়ের পর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে শপথ অনুষ্ঠানের দাবি করে নগর ভবন ঘেরাও করে ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। তারা নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। রাস্তা অবরোধ করে। সেখান থেকে এসে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাস ভবন যমুনার কাছে কাকরাইলে অবস্থান নেয়। ঈদের কারণে এ কর্মসূচিতে বিরতি ছিল।
গতকাল বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বিষয়েও তারা নমনীয়তা দেখাবেন। আজ রোববার বেলা ১১টায় ইশরাক হোসেন নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। এখান থেকে ঢাকাবাসীর কষ্ট লাঘবে নাগরিক সেবা চালু করার কথা ঘোষণা করতে পারেন তিনি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে সবার মধ্যে স্বস্তি এসেছে। এটিকে ধরে রাখতে হবে। সবাই সবার অবস্থান থেকে করণীয় নির্ধারণ করে এগিয়ে যাবেন। সংস্কার হবে, বিচার হবে, নির্বাচনও হবে।
মতৈক্যে স্বস্তি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সমকালকে বলেন, লন্ডন বৈঠকটি ছিল যুগান্তকারী ও জাতির জন্য দিকনির্দেশনামূলক। এ বৈঠকে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। জাতি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।
স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘পলিটিক্স ইজ অ্যান আর্ট অব কম্প্রোমাইজ, অর্থাৎ রাজনীতি আপসের শিল্প। এ কথাটি আমরা অনুসরণ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা অনুধাবন করেছেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে আবহাওয়া, রমজান, পাবলিক পরীক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রমজান মাস শুরুর এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছেন। আশা করি, সেই সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে তিনি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) যথাযথ প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতি গঠনের প্রক্রিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শকে কাজে লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছি। দেশের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে তিনি অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ প্রদান করবেন বলেও আশা করি।’