কয়েক দশকের মধ্যে ১৩ জুন ইরানে আগ্রাসী হামলা চালায় ইসরায়েল। লেবাননে অতীত সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে হামলার ছক কষেছিল দেশটি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে চালানো ওই হামলায় হিজবুল্লাহর অভিজাত রাদওয়ান ইউনিটকে নেতৃত্বশূন্য করা হয়েছিল। অত্যন্ত দ্রুতগতির সঙ্গে পরিচালিত সেই হামলায় শেষ পর্যন্ত মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করেছিল তেল আবিব। তবে ইরানে সেই কৌশল কাজ করেনি। 

প্রথম দিন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানজুড়ে একাধিক আক্রমণ চালায়। একটি আবাসিক টাওয়ারে ৬০ জন বেসামরিক লোক নিহত হন, বেশ কয়েকজন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সিনিয়র সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিমান প্রতিরক্ষা এবং পারমাণবিক অবকাঠামোগত স্থাপনাগুলোয় আঘাত করা হয়। 

একটি ব্যর্থ কৌশল 

অপ্রতিরোধ্য শক্তি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে শত্রুর ওপর দ্রুত আধিপত্য অর্জনের এই কৌশল লেবাননে সাফল্য পেয়েছিল। তবে ইরানের আরও অনেক বেশি স্থিতিস্থাপক জাতির সঙ্গে এ কৌশলে সফলতা পাওয়া সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। তবে অন্তত কৌশলগতভাবে ইসরায়েল তার হামলার মাধ্যমে ইরানকে হতবাক করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এর বেশির ভাগই অভ্যন্তরীণ অনুপ্রবেশ এবং নাশকতামূলক অভিযানের কারণে হয়েছিল। 

তেহরানের জবাব 

ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরানের প্রতিক্রিয়া ছিল দ্রুত। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তেহরান তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রতিশোধমূলক অভিযান শুরু করে। দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার, ড্রোন ইউনিট পুনরায় সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড পোস্টগুলো পূরণ করা হয়। আবার অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর ছবি ও ভিডিও তেহরানের অপারেশনাল পুনরুদ্ধার এবং কৌশলগত বার্তারও ইঙ্গিত দেয়। 

সবার জন্য অথবা কারও জন্য নয় 

যুক্তরাষ্ট্র যদি আক্রমণ করে, তবে ইরান স্পষ্টভাবে তার কৌশল ঘোষণা করেছে। সবার জন্য অথবা কারও জন্য নয়– যার অর্থ সমুদ্র নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন ঘাঁটির নিরাপত্তা। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা জাওয়াদ লারিজানি যেমনটা বলেন, পারস্য উপসাগরে একটি পুরোনো নিয়ম রয়েছে। যদি আমাদের (ইরানের) তেল স্থাপনাগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা এই অঞ্চলের কোনো দেশকে তাদের তেল ব্যবহার করতে দেব না। 

সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কাউসারির যুক্তি– হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার মাধ্যমে সহজেই ইরান এ কাজ করতে পারে। 

ইরানের যুদ্ধক্ষেত্রের ভুল ব্যাখ্যা 

তেল আবিব ভুল করে ধরে নিয়েছে যে, লেবাননের কৌশলটি ব্যাপক ফলপ্রসূ। ইরানের নেতৃত্বকে সরিয়ে দিতে তাদের কপি-পেস্ট পরিকল্পনায় বেশ কিছু ভুল গণনা দুর্বল করে দিয়েছে। প্রথমত, ইরানের সামরিক কমান্ড বিশাল, অভিজ্ঞ ও দ্রুত পরিবর্তনযোগ্য। 

দ্বিতীয়ত, ইরানের বিশাল আকার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের কৌশলগত বিস্তৃত করার সুযোগ করে দেয়। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় হামলা করলেও দেশটির বেশির ভাগ অবকাঠামো পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে রাখা আছে। 

তৃতীয়ত, ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যবস্থা ইরানি কমান্ড পর্যায়ে প্রবেশ করলেও এটি পূর্ণমাত্রায় আধিপত্য অর্জন করতে পারেনি। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অপারেশনের ক্ষমতা ধরে রেখেছে। 

সংহতির ইরানি সংস্করণ 

তেল আবিবের সবচেয়ে বড় ভুল হিসাব ছিল, ইরানের অভ্যন্তরীণ সংহতির বিচার করায়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিশ্বাস, হঠাৎ বহিরাগত হামলা ইরানের বিরোধী শক্তিগুলোকে সক্রিয় করবে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী, জঙ্গি ও সরকার সমালোচকরা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে দেবে। কিন্তু বহিরাগত হুমকির মুখে ইরানের রাজনৈতিক ঐক্য বারবার প্রদর্শিত হয়েছে। 

তেল আবিব তিন দিনের মধ্যে ২২৪ জন ইরানি নাগরিককে হত্যা করেছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। এই ধরনের উস্কানির পরিণতি রয়েছে। এই সংঘাতে ইরানের প্রতিরোধ কেবল সামরিক নয়, এটি সামাজিক। 

যে কোনো সংঘাতের মতো এ যুদ্ধের ফলাফলও অনিশ্চিত। এটি আরও বিস্তৃত যুদ্ধে পরিণত হবে নাকি আরেকটি আঞ্চলিক অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দেবে, তা ইসরায়েলের ওপর কম নির্ভর করছে। বরং তেল আবিবকে অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র পুরো অঞ্চলকে আগুনে পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছুক কিনা, তার ওপর বেশি নির্ভর করে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল কম ন ড ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কম দায়ী নয়: উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বনভূমি উজাড় ও গাছপালা কমে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাঙামাটি শহরের জিমনেশিয়াম মাঠে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।

সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে যদি বলা হয় যে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই, তাহলে খুব বেশি ভুল হবে না। ৮০ সাল পর্যন্ত এখানে বন ছিল, গাছপালা ছিল, ঝোপঝাড় ছিল। এই অঞ্চলে বা দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কোনো অংশ কম দায়ী নয়।

সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চেয়ে বড় আকারের বনভূমি এখন মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী কিংবা সিলেটে দেখা যায়। পার্বত্য অঞ্চলে এই অবস্থা কেন সৃষ্টি হলো সবার ভাবতে হবে।

পার্বত্য উপদেষ্টা আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সাধারণত ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে শীতের অনুভূতি পাওয়া যেত। এখন কার্তিক মাসেও শীতের অনুভূতি পাওয়া যায় না। যারা আদিকাল থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করে আসছে, তারা প্রকৃতি সচেতন ছিল। তাই তাদের ওপর খুব বেশি ভূমি ধস হয়েছে শোনা যায় না। তাদের বাড়িঘরেও হয়নি। প্রকৃতিকে যারা চেনে না, তাদের ওপর ভূমিধস হয়।

বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব এ কে এম আকমল হোসেন আজাদ, রাঙামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. আবদুল আওয়াল সরকার, জেলা পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, সিভিল সার্জন নূয়েন খীসা, দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এসম সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। এর আগে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করা হয়। ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই মেলা চলবে। বৃক্ষমেলায় ২১টি স্টল অংশগ্রহণ করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ