মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলে আধারা এলাকায় মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে বালুমহালের সীমানা অতিক্রম করে কৃষিজমির মাটি কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। ভুক্তভোগীরা কয়েক দিন ধরে বাধা দিলেও কর্ণপাত করেনি ইজারাদার সিন্ডিকেট। গতকাল বৃহস্পতিবারও বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় ‘বালুদস্যুরা’ আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ গ্রামের বাসিন্দাদের। তারাও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে এলে সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচ ড্রেজার শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ সময় একটি ড্রেজারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জেলা সদরের আধারা ইউনিয়নের চরআব্দুল্লাহ গ্রাম-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে সকালে এ ঘটনা ঘটে। 
সংঘর্ষে আহত ড্রেজার শ্রমিক মো.

মোস্তফাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মো. সাইফুরসহ আহত অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
কৃষকের অভিযোগ, প্রভাবশালী ইজারাদার ও ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কৃষিজমির মাটি কেটে নিচ্ছে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বালুমহালের অংশীদার মেঘনার কিবরিয়া মিয়াজির লোকজন জড়িত বলে তারা অভিযোগ করেন। বালুমহালের নির্ধারিত স্থান ছেড়ে গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলন করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা জানিয়েছেন। যদিও ইজারাদারদের দাবি, তারা নির্ধারিত সীমানাতেই বালু উত্তোলন করছেন।
সদরের চরআব্দুল্লাহ গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরে আলম সাগরের ভাষ্য, ‘বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে ভাসানচর মৌজায়। আর তারা চরআব্দুল্লাহ মৌজায় কাটছেন। এখানে সর্বশেষ বিএস জরিপে নদীঘেঁষা রেকর্ডীয় জমি রয়েছে। আমাদের চার একর জমি এখানে। গ্রামবাসী জমি রক্ষায় তা প্রতিহত করছেন। আওয়ামী লীগ আমলের বালুদস্যু কিবরিয়া মিয়াজিকে বালুমহালের ব্যবসায়িক পার্টনার করে বর্ষার শুরুতেই তারা ফসলি জমি কেটে নেওয়া শুরু করেছে।’
গ্রামের বাসিন্দাসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মেঘনা নদীর বালুমহালের ইজারা পাওয়া লোকজন কয়েক দিন ধরে গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছিল। দিনে প্রায় ৭০টি ড্রেজার দিয়ে এ কার্যক্রম চালানো হয়। রাতে ড্রেজার দিয়ে নদীতীরবর্তী ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতীরবর্তী চরআব্দুল্লাহ, বকচর ও কালিরচর গ্রামও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। 
এর প্রতিবাদ করায় ইজারাদারের লোকজন গ্রামের ওপর কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বালু উত্তোলনে বাধা দিতে যান। এ সময় তারা কয়েকজন ড্রেজার শ্রমিককে মারধর করেন। এক পর্যায়ে তারা একটি ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সদরের চর ভাসানচর ও রমজানবেগ বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। দুটিই ইজারা পেয়েছে মনির এন্টারপ্রাইজ ও সম্রাট এন্টারপ্রাইজ। এর স্বত্বাধিকারী বিএনপি নেতা মো. মনিরুজ্জামান মনির ওরফে জিএস মনির ও শাহাদাত হোসেন। ইজারামূল্য দিয়ে বালু উত্তোলনও শুরু করেছেন ইজারাদার। কিন্তু নির্ধারিত এলাকার বাইরে নদীতীরবর্তী চর আব্দুল্লাহ, বকচর ও কালিরচর এলাকা থেকে বালু কাটা শুরুর অভিযোগ তুলে বাধা দেন গ্রামের লোকজন।
চর আব্দুল্লাহ বালুমহালের ইজারাদার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘তিন দিন আগে আমরা বালু উত্তোলন শুরু করি। প্রশাসনের নির্ধারিত সীমানার মধ্যেই উত্তোলন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সহযোগিতায় গ্রামবাসী লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে শ্রমিকদের মারধর ও ড্রেজারে আগুন দিয়েছে।’
গ্রামবাসী বালুমহালের ড্রেজারে হামলা চালালে কয়েক শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানান সদরের চর আব্দুল্লাহ নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুব আলম। তিনি বলেন, একটি ড্রেজারে আগুন দেওয়ার খবর পেয়েছি। নৌ পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ইজারাদারকে বালুমহালের নির্ধারিত সীমানার মধ্যে বালু উত্তোলনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সীমানা চিহ্নিত করে লাল নিশানা টানিয়ে দেওয়া হবে। ফসলি জমির ক্ষতি হলে তদন্ত করে দেখা হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইজ র দ র গ র মব স স ঘর ষ সদর র ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

বালু তোলায় বাধার পর গ্রামবাসী ইজারাদার সিন্ডিকেট সংঘর্ষ

মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলে আধারা এলাকায় মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে বালুমহালের সীমানা অতিক্রম করে কৃষিজমির মাটি কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। ভুক্তভোগীরা কয়েক দিন ধরে বাধা দিলেও কর্ণপাত করেনি ইজারাদার সিন্ডিকেট। গতকাল বৃহস্পতিবারও বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় ‘বালুদস্যুরা’ আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ গ্রামের বাসিন্দাদের। তারাও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে এলে সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচ ড্রেজার শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ সময় একটি ড্রেজারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জেলা সদরের আধারা ইউনিয়নের চরআব্দুল্লাহ গ্রাম-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে সকালে এ ঘটনা ঘটে। 
সংঘর্ষে আহত ড্রেজার শ্রমিক মো. মোস্তফাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মো. সাইফুরসহ আহত অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
কৃষকের অভিযোগ, প্রভাবশালী ইজারাদার ও ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কৃষিজমির মাটি কেটে নিচ্ছে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বালুমহালের অংশীদার মেঘনার কিবরিয়া মিয়াজির লোকজন জড়িত বলে তারা অভিযোগ করেন। বালুমহালের নির্ধারিত স্থান ছেড়ে গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলন করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা জানিয়েছেন। যদিও ইজারাদারদের দাবি, তারা নির্ধারিত সীমানাতেই বালু উত্তোলন করছেন।
সদরের চরআব্দুল্লাহ গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরে আলম সাগরের ভাষ্য, ‘বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে ভাসানচর মৌজায়। আর তারা চরআব্দুল্লাহ মৌজায় কাটছেন। এখানে সর্বশেষ বিএস জরিপে নদীঘেঁষা রেকর্ডীয় জমি রয়েছে। আমাদের চার একর জমি এখানে। গ্রামবাসী জমি রক্ষায় তা প্রতিহত করছেন। আওয়ামী লীগ আমলের বালুদস্যু কিবরিয়া মিয়াজিকে বালুমহালের ব্যবসায়িক পার্টনার করে বর্ষার শুরুতেই তারা ফসলি জমি কেটে নেওয়া শুরু করেছে।’
গ্রামের বাসিন্দাসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মেঘনা নদীর বালুমহালের ইজারা পাওয়া লোকজন কয়েক দিন ধরে গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছিল। দিনে প্রায় ৭০টি ড্রেজার দিয়ে এ কার্যক্রম চালানো হয়। রাতে ড্রেজার দিয়ে নদীতীরবর্তী ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতীরবর্তী চরআব্দুল্লাহ, বকচর ও কালিরচর গ্রামও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। 
এর প্রতিবাদ করায় ইজারাদারের লোকজন গ্রামের ওপর কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বালু উত্তোলনে বাধা দিতে যান। এ সময় তারা কয়েকজন ড্রেজার শ্রমিককে মারধর করেন। এক পর্যায়ে তারা একটি ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সদরের চর ভাসানচর ও রমজানবেগ বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। দুটিই ইজারা পেয়েছে মনির এন্টারপ্রাইজ ও সম্রাট এন্টারপ্রাইজ। এর স্বত্বাধিকারী বিএনপি নেতা মো. মনিরুজ্জামান মনির ওরফে জিএস মনির ও শাহাদাত হোসেন। ইজারামূল্য দিয়ে বালু উত্তোলনও শুরু করেছেন ইজারাদার। কিন্তু নির্ধারিত এলাকার বাইরে নদীতীরবর্তী চর আব্দুল্লাহ, বকচর ও কালিরচর এলাকা থেকে বালু কাটা শুরুর অভিযোগ তুলে বাধা দেন গ্রামের লোকজন।
চর আব্দুল্লাহ বালুমহালের ইজারাদার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘তিন দিন আগে আমরা বালু উত্তোলন শুরু করি। প্রশাসনের নির্ধারিত সীমানার মধ্যেই উত্তোলন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সহযোগিতায় গ্রামবাসী লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে শ্রমিকদের মারধর ও ড্রেজারে আগুন দিয়েছে।’
গ্রামবাসী বালুমহালের ড্রেজারে হামলা চালালে কয়েক শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানান সদরের চর আব্দুল্লাহ নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুব আলম। তিনি বলেন, একটি ড্রেজারে আগুন দেওয়ার খবর পেয়েছি। নৌ পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ইজারাদারকে বালুমহালের নির্ধারিত সীমানার মধ্যে বালু উত্তোলনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সীমানা চিহ্নিত করে লাল নিশানা টানিয়ে দেওয়া হবে। ফসলি জমির ক্ষতি হলে তদন্ত করে দেখা হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ