কুমিল্লায় পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ আটকের পর শেখ জুয়েল নামের এক বিএনপি কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুয়েলের মৃত্যু হয়। এদিকে পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে থানার সামনে বিক্ষোভ করছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

শেখ জুয়েল (৪৫) পেশায় একজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী। তিনি মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের বাসিন্দা।

তার পরিবারের দাবি, পুলিশের নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যু হয়েছে। তবে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ। 

পুলিশ জানায়, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঙ্গরা বাজার ব্রিক ফিল্ড এর পূর্ব পাশে জনৈক হেলালের বাড়ি থেকে ৭০ পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় আনা হয়। রাতে হাজতে জুয়েল অসুস্থ হয়ে পড়লে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  

জুয়েলের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমার স্বামী ইন্টারনেটের বিল কালেকশন করতে যায়। দুপুরের পরপরই খবর পাই যে আমার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে থানায় গিয়ে আমার স্বামীর সাথে কথা বলতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। অনেক অনুরোধ করে তার সাথে দেখা করি। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় আমার স্বামী আমাকে বলেছে যে আমি কিছু করি নাই। আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো। 

তিনি আরও বলেন, রাতে খবর পাই আমার স্বামীকে মুরাদনগর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামী আর বেঁচে নেই। পুলিশ আমার স্বামীকে মেরে ফেলছে।

জুয়েলের ছেলে শেখ সিহাব বলেন, বিনা অপরাধে পুলিশ আমার বাবাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলছে। আমার বাবাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাপারেও পুলিশ আমাদের কিছু জানায়নি। আমরা হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে মৃত দেখতে পাই।

জুয়েলের  চাচাত ভাই বিএনপি নেতা শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই জুয়েল বিএনপির কর্মী। বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই আল আমিন তাকে ধরে নিয়ে গেছে খবর পেয়ে রাত সাড়ে আটটায় কল দিয়ে জুয়েলের বিষয়ে জানতে চাই। তখন তিনি আমাকে মুরাদনগর হাসপাতালে আসতে বলে। হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাইকে মৃত অবস্থায় ফেলে রেখেছে।

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে জুয়েলকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। আমরা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তাকে মৃত অবস্থায় পাই। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। 

এদিকে মৃত্যুর খবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয়রা রাতে বাঙ্গরা বাজার থানার সামনে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।   

এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে রাত পৌনে ১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭০ পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার আরও ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে রাতে থানায় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  

ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, আটক জুয়েলকে পুলিশ নির্যাতন করেনি। অন্য কোন কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। শুক্রবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ম র দনগর উপজ ল আম র স ব ম খবর প ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত

নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার মুরাদনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. ইদন মিয়া (৬০)। তিনি মুরাদনগর এলাকার বাসিন্দা। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে মোস্তাকিম (৩০) ও আবুল হোসেন (৬০) নামের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে গেলে সেখানে বিএনপির দুটি পক্ষকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। একটি পক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী এবং আরেক পক্ষে সদ্য বহিষ্কৃত সদস্যসচিব আবদুল কাইয়ুম মিয়া নেতৃত্ব দেন। মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি দলীয় পদ থেকে বহিষ্কৃত হন আবদুল কাইয়ুম। স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয় থাকার বিষয়টি মানতে পারছিল না শাহ আলম পক্ষ।

অভিযোগ আছে, আবদুল কাইয়ুমকে ঠেকাতে শাহ আলম চৌধুরীর ইন্ধন ও হস্তক্ষেপে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের আবার এলাকায় ফেরানোর পরিকল্পনা করা হয়। এর অংশ হিসেবে আজ ভোর পাঁচটার দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে এলাকায় ফিরতে শুরু করে আত্মগোপনে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ খবর পেয়ে আবদুল কাইয়ুমের সমর্থকেরা বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষ টেঁটা, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ইদন মিয়াসহ অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ইদন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানারা কবীর। তিনি জানান, ইদন মিয়াকে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনায় হয়। ওই সময় তিনি মৃত ছিলেন। মরদেহ এই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে শাহ আলম চৌধুরী ও আবদুল কাইয়ুম মিয়ার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত