সরকারি সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে গত এক বছরে প্রায় ৩২ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়েছে। তার মানে প্রতি তিনজনের মধ্যে গড়ে একজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে। সেবা পেতে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। তার পরের অবস্থানে আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, পাসপোর্ট অফিস ও ভূমি নিবন্ধন অফিস। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) বা নাগরিক ধারণা জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সিপিএস প্রকল্পের পরিচালক রাশেদ-ই-মাসতাহাব।

বিবিএস জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬৪ জেলার ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সের ৮৪ হাজার ৮০৭ নারী-পুরুষ এই জরিপে অংশ নেন। এই জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুনীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্যবিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ১৬ অভীষ্টের ছয়টির অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। 

নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে এই জরিপে উঠে আসে, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। গ্রাম ও শহরে এই হারটি কাছাকাছি হলেও পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম নিরাপদ বোধ করেন। ৮০ শতাংশ নারী সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন নারীর একজন নিরাপদ বোধ করেন না। অন্যদিকে ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ একা চলাফেরায় নিরাপদ বোধ করেন। 

এ ছাড়া সন্ধ্যার পর নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করেন ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ নাগরিক। এ ক্ষেত্রেও ৯৩ শতাংশ পুরুষ নিজ বাড়িতে নিরাপদ বোধ করলেও নারীদের ক্ষেত্রে হারটি ৯২ শতাংশ। 

জরিপের তথ্যানুযায়ী, সরকারি সেবা নিতে গিয়ে গত এক বছরে প্রায় ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়েছে। গ্রামে এই হার ৩২ শতাংশ হলেও শহরে ৩০ শতাংশ। অবশ্য পুরুষের চেয়ে নারীরা তুলনামূলক কম ঘুষ দিয়েছেন। 

গত এক বছরে বিআরটিএতে সেবা নিতে যাওয়া নাগরিকদের ৬৩ শতাংশ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হন। এ ছাড়া আইনপ্রয়োগকারীর সংস্থায় ৬২, পাসপোর্ট অফিসে ৫৭, ভূমি নিবন্ধনে ৫৫ শতাংশ, আদালতে ৫৪, ভূমি রেকর্ড বা সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে ৫১ শতাংশ, কাস্টমস ও ভ্যাট কার্যালয়ে ৩৫, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ৩৩, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ২৬, কর কার্যালয়ে ১৪, কৃষি কার্যালয়ে ৯, শিক্ষা কার্যালয়ে ৩ শতাংশ নাগরিককে সেবা নিতে ঘুষ দিতে হয়েছে।

জরিপে উঠে আসা ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘গড় সংখ্যা দেখে খারাপ বলে মনে হয় না। আমার ধারণা ছিল, সরকারি সেবা নিতে সবাইকেই ঘুষ দিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, যেসব দপ্তরে কম ঘুষ দিতে হয় বলে জরিপে দেখানো হয়েছে, সেখানেও যে কম দিতে হয়, তা নয়। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রচণ্ড ঘুষ-বাণিজ্য হয়। বেশি হয় বদলি-বাণিজ্য।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করার হারটি শতভাগ হওয়া দরকার। এটিই সভ্য সমাজে হওয়া উচিত। সন্ধ্যার পর নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করেন ৯৩ শতাংশ নাগরিক। এটি খুবই উদ্বেগজনক।

সরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সন্তুষ্টি কম 

জরিপের তথ্যানুযায়ী, এক বছরের মধ্যে অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন ৪৭ শতাংশ নাগরিক। তাঁদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ সহজে ও ৮৯ শতাংশ কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করলেও সন্তুষ্টি তুলনামূলক কম। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান, সেবাগ্রহীতার সঙ্গে আচরণ এবং চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় দেওয়ার বিষয়ে সেবা গ্রহণকারীদের সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬৫, ৬৩ ও ৬৩ শতাংশ। 

এ ছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ৪১ শতাংশ নাগরিকের অন্তত একজন সন্তান সরকারি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬ শতাংশ সহজে যাওয়া-আসা ও ৯৩ শতাংশ শিক্ষা ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে থাকার বিষয়ে মতামত দেন। তবে শিক্ষার মানের বিষয়ে নাগরিকদের সন্তুষ্টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৬৮ ও মাধ্যমিকে ৭২ শতাংশ। 

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বাইরে অন্য সরকারি সেবা (যেমন জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদ, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিবাহ বা বিচ্ছেদ নিবন্ধন সনদ, টিআইএন ইত্যাদি) নেওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের ৭৮ শতাংশ সহজে ও ৭৬ শতাংশ সেবার ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে বলে মতামত দেন। যদিও সেবাদান প্রক্রিয়া, সবার জন্য সমান আচরণ ও সময়মতো সেবা পাওয়ার বিষয়ে সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬৩, ৫৬ ও ৫১ শতাংশ। 

 বিবিএসের জরিপ অনুসারে, গত এক বছরে দেশের ১৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন। 

এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রভাব বিষয়ের ক্ষেত্রে মাত্র ২৭ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তাঁরা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। এ ছাড়া ২২ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তাঁরা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। 

এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, গত ১৫ বছর তো ভোটই হয়নি। কাজেই মতামত কোথা থেকে দেবে মানুষ। যদিও ভালো গণতান্ত্রিক দেশ থাকলেও খুব সন্তোষজনক উত্তর মিলবে না। স্থানীয় সরকার যখন শক্তিশালী ও প্রতিনিধিত্বশীল হবে, তখন সাধারণ মানুষ মনে করবে, তাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে; সরকারকে মতামত দেওয়ায় অংশগ্রহণ বেড়েছে। 

অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য কাইয়ুম আরা বেগম, বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র জন ত ব ব এস মত মত সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

আমানত রক্ষা করা ইসলামের সামাজিকতার সৌন্দর্য

আধুনিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান আত্মকেন্দ্রিকতার প্রভাবে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে ইসলামের একটি মৌলিক মূল্যবোধ—‘আমানত’—চিন্তা ও চর্চা থেকে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে।

অথচ আমানত শুধু একটি সামাজিক বা অর্থনৈতিক ধারণা নয়, বরং এটি একটি বিস্তৃত আত্মিক ও নৈতিক দায়িত্ব, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানুষের ওপর অর্পণ করেছেন।

পবিত্র কোরআনে এই আমানতের গুরুত্ব অত্যন্ত জোরালোভাবে বর্ণিত হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই আমরা আমানত পেশ করেছিলাম আসমান, জমিন ও পাহাড়ের সামনে, তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তা হতে ভীত ছিল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয়ই সে ছিল অত্যন্ত জুলুমকারী ও মূর্খ।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৭২)

এই আয়াতে আমানতের মর্যাদা ও এর ওজনের গভীরতা প্রকাশ পায়। আল্লাহর এই দায়িত্ব মানুষের ওপর অর্পিত হওয়া তার বিশেষত্বের প্রমাণ, তবে এটি একই সঙ্গে তার জন্য একটি বড় পরীক্ষা।

নিশ্চয়ই আমরা আমানত পেশ করেছিলাম আসমান, জমিন ও পাহাড়ের সামনে, তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তা হতে ভীত ছিল। কিন্তু মানুষ তা বহন করল।সুরা আহযাব, আয়াত: ৭২আমানতের ব্যাপকতা

‘আমানত’ শব্দটির অর্থ শুধু আর্থিক বা সামাজিক বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি ব্যাপক ধারণা, যা মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমানতের মধ্যে রয়েছে:

ব্যক্তিগত আচরণে সততা: কথায়, কাজে ও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সত্যবাদিতা।

সামাজিক দায়িত্ব: পরিবার, সমাজ ও সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন।

পরিবেশের প্রতি যত্ন: আল্লাহর সৃষ্টির খিলাফা হিসেবে প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা।

আধ্যাত্মিক আনুগত্য: আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সমর্পণ ও তাঁর আদেশ পালন।

আমানত একটি ইবাদতের অংশ, যা শুধু দুনিয়ার জন্য নয়, বরং আখিরাতের জবাবদিহির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলে।

আরও পড়ুনইসলামে আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার গুরুত্ব২২ জুলাই ২০২২নবী–যুগে আমানতের উদাহরণ

ইসলামের প্রাথমিক যুগে নবীজি (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত মদিনার সমাজ আমানতের একটি জীবন্ত উদাহরণ। মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে অভূতপূর্ব ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠেছিল, তা আমানতের বাস্তব প্রয়োগ। আনসাররা তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ এবং এমনকি হৃদয়ের ভালোবাসা মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন।

এই সম্পর্ক শুধু সম্পদের বণ্টন নয়, বরং পারস্পরিক দায়িত্ব ও বিশ্বাসের একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এমনকি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর আনসারি ভাই সা’দ ইবনে রাবী (রা.) তাঁর সম্পদের অর্ধেক এবং এমনকি তাঁর স্ত্রীদের একজনকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই ত্যাগ ও বিশ্বাস আমানতের প্রকৃত চিত্র। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৭৮০)

মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে অভূতপূর্ব ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠেছিল, তা আমানতের বাস্তব প্রয়োগ। আনসাররা তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ এবং এমনকি হৃদয়ের ভালোবাসা মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন।

এই ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে মদিনার সমাজে একতা, সহানুভূতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে উঠেছিল, যা আজও মুসলিম সমাজের জন্য একটি আদর্শ।

আধুনিক সমাজে আমানতের অবক্ষয়

দুর্ভাগ্যবশত, আজকের সমাজে আমানতের চর্চা দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে অভিবাসী মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস, গোষ্ঠীবদ্ধতা ও সংকীর্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মসজিদগুলোতে জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বিভেদ, পারিবারিক স্বার্থপরতা এবং একে অপরের প্রতি সন্দেহ সমাজের ঐক্যকে ভঙ্গ করছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও প্রায়ই দেখা যায়, অসৎ আচরণ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও বিশ্বাসের অপব্যবহার।

এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও ‘নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা’ একটি নতুন সামাজিক আদর্শ হয়ে উঠেছে। মানুষ অন্যের প্রতি দায়িত্ব পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এটি শুধু সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, বরং পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধ: আল্লাহ তা’আলা মানুষকে এই পৃথিবীর খলিফা বানিয়েছেন, যার মধ্যে পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বও অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু আজকের উন্নয়নের নামে বনভূমি ধ্বংস, নদী ও বাতাসের দূষণ এবং প্রাণপ্রবাহের ক্ষতি আমানতের এই দিকটিকে উপেক্ষা করছে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার পর পৃথিবীতে পুনরায় বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৬)

প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব হলো এটিকে সংরক্ষণ করা, অপচয় রোধ করা এবং সৃষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখা।

আরও পড়ুনপ্রলোভনের এই যুগে নিজেকে রক্ষার উপায়০২ আগস্ট ২০২৫আমানতের নষ্টের ভবিষ্যদ্বাণী

নবীজি (সা.) আমানতের অবক্ষয় সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন: ‘মানুষ ঘুমাবে আর আমানত তার হৃদয় থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে...এমন সময় আসবে যখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন বিশ্বস্ত মানুষ আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭০৮৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৫)

এই হাদিসটি একটি গভীর সতর্কবাণী। এটি ইঙ্গিত করে যে একটি সময় আসবে যখন বিশ্বস্ততা এতটাই বিরল হয়ে পড়বে যে একজন আমানতদার ব্যক্তিকে ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য করা হবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী আধুনিক সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে স্বার্থপরতা ও অবিশ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানুষ ঘুমাবে আর আমানত তার হৃদয় থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে...এমন সময় আসবে যখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন বিশ্বস্ত মানুষ আছে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭০৮৬আমানতের পুনর্জাগরণের উপায়

আমানতের মূল্যবোধকে পুনরায় জীবন্ত করতে হলে আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে:

সত্যবাদিতা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা: কথা ও কাজে সততা বজায় রাখা এবং প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।

দায়িত্বশীলতা ও সততা: পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ।

ন্যায়পরায়ণ আর্থিক আচরণ: ব্যবসা ও আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও বিশ্বস্ততা।

প্রকৃতির প্রতি যত্ন: পরিবেশ সংরক্ষণ, অপচয় রোধ ও সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষা।

পারস্পরিক সহযোগিতা: সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য গড়ে তোলা।

আমানত শুধু একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ইবাদত, যা আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্যের প্রকাশ। এটি ব্যক্তি, সমাজ ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। আমানতের চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে আমরা একটি দয়ালু, ন্যায়ভিত্তিক ও ঐক্যবদ্ধ মুসলিম সমাজ গড়ে তুলতে পারি। এটি আমাদের দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের সাফল্যের পথ প্রশস্ত করবে।

আরও পড়ুনআখিরাতে বিশ্বাস সত্কর্মের অনুপ্রেরণা০৪ মে ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ