দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ সন্ধ্যার পর একা চলাফেরায় নিরাপদ বোধ করেন
Published: 20th, June 2025 GMT
সরকারি সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে গত এক বছরে প্রায় ৩২ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়েছে। তার মানে প্রতি তিনজনের মধ্যে গড়ে একজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে। সেবা পেতে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। তার পরের অবস্থানে আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, পাসপোর্ট অফিস ও ভূমি নিবন্ধন অফিস।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) বা নাগরিক ধারণা জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সিপিএস প্রকল্পের পরিচালক রাশেদ-ই-মাসতাহাব।
বিবিএস জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬৪ জেলার ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সের ৮৪ হাজার ৮০৭ নারী-পুরুষ এই জরিপে অংশ নেন। এই জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুনীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্যবিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ১৬ অভীষ্টের ছয়টির অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে।
নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে এই জরিপে উঠে আসে, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। গ্রাম ও শহরে এই হারটি কাছাকাছি হলেও পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম নিরাপদ বোধ করেন। ৮০ শতাংশ নারী সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন নারীর একজন নিরাপদ বোধ করেন না। অন্যদিকে ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ একা চলাফেরায় নিরাপদ বোধ করেন।
এ ছাড়া সন্ধ্যার পর নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করেন ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ নাগরিক। এ ক্ষেত্রেও ৯৩ শতাংশ পুরুষ নিজ বাড়িতে নিরাপদ বোধ করলেও নারীদের ক্ষেত্রে হারটি ৯২ শতাংশ।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, সরকারি সেবা নিতে গিয়ে গত এক বছরে প্রায় ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়েছে। গ্রামে এই হার ৩২ শতাংশ হলেও শহরে ৩০ শতাংশ। অবশ্য পুরুষের চেয়ে নারীরা তুলনামূলক কম ঘুষ দিয়েছেন।
গত এক বছরে বিআরটিএতে সেবা নিতে যাওয়া নাগরিকদের ৬৩ শতাংশ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হন। এ ছাড়া আইনপ্রয়োগকারীর সংস্থায় ৬২, পাসপোর্ট অফিসে ৫৭, ভূমি নিবন্ধনে ৫৫ শতাংশ, আদালতে ৫৪, ভূমি রেকর্ড বা সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে ৫১ শতাংশ, কাস্টমস ও ভ্যাট কার্যালয়ে ৩৫, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ৩৩, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ২৬, কর কার্যালয়ে ১৪, কৃষি কার্যালয়ে ৯, শিক্ষা কার্যালয়ে ৩ শতাংশ নাগরিককে সেবা নিতে ঘুষ দিতে হয়েছে।
জরিপে উঠে আসা ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘গড় সংখ্যা দেখে খারাপ বলে মনে হয় না। আমার ধারণা ছিল, সরকারি সেবা নিতে সবাইকেই ঘুষ দিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, যেসব দপ্তরে কম ঘুষ দিতে হয় বলে জরিপে দেখানো হয়েছে, সেখানেও যে কম দিতে হয়, তা নয়। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রচণ্ড ঘুষ-বাণিজ্য হয়। বেশি হয় বদলি-বাণিজ্য।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করার হারটি শতভাগ হওয়া দরকার। এটিই সভ্য সমাজে হওয়া উচিত। সন্ধ্যার পর নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করেন ৯৩ শতাংশ নাগরিক। এটি খুবই উদ্বেগজনক।
সরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সন্তুষ্টি কম
জরিপের তথ্যানুযায়ী, এক বছরের মধ্যে অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন ৪৭ শতাংশ নাগরিক। তাঁদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ সহজে ও ৮৯ শতাংশ কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করলেও সন্তুষ্টি তুলনামূলক কম। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান, সেবাগ্রহীতার সঙ্গে আচরণ এবং চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় দেওয়ার বিষয়ে সেবা গ্রহণকারীদের সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬৫, ৬৩ ও ৬৩ শতাংশ।
এ ছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ৪১ শতাংশ নাগরিকের অন্তত একজন সন্তান সরকারি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬ শতাংশ সহজে যাওয়া-আসা ও ৯৩ শতাংশ শিক্ষা ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে থাকার বিষয়ে মতামত দেন। তবে শিক্ষার মানের বিষয়ে নাগরিকদের সন্তুষ্টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৬৮ ও মাধ্যমিকে ৭২ শতাংশ।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বাইরে অন্য সরকারি সেবা (যেমন জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদ, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিবাহ বা বিচ্ছেদ নিবন্ধন সনদ, টিআইএন ইত্যাদি) নেওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের ৭৮ শতাংশ সহজে ও ৭৬ শতাংশ সেবার ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে বলে মতামত দেন। যদিও সেবাদান প্রক্রিয়া, সবার জন্য সমান আচরণ ও সময়মতো সেবা পাওয়ার বিষয়ে সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬৩, ৫৬ ও ৫১ শতাংশ।
বিবিএসের জরিপ অনুসারে, গত এক বছরে দেশের ১৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন।
এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রভাব বিষয়ের ক্ষেত্রে মাত্র ২৭ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তাঁরা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। এ ছাড়া ২২ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তাঁরা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, গত ১৫ বছর তো ভোটই হয়নি। কাজেই মতামত কোথা থেকে দেবে মানুষ। যদিও ভালো গণতান্ত্রিক দেশ থাকলেও খুব সন্তোষজনক উত্তর মিলবে না। স্থানীয় সরকার যখন শক্তিশালী ও প্রতিনিধিত্বশীল হবে, তখন সাধারণ মানুষ মনে করবে, তাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে; সরকারকে মতামত দেওয়ায় অংশগ্রহণ বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য কাইয়ুম আরা বেগম, বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র জন ত ব ব এস মত মত সরক র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে এমপি প্রার্থী বাছাই করছে ইসলামী আন্দোলন
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে তিনশ আসনে প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম শুরু করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। প্রার্থী বাছাই করতে সারা দেশ সফর করছে কেন্দ্রীয় টিম।
এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার (২০ জুন) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩টি আসনে প্রার্থী বাছাই উপলক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
দিনভর তৃণমূল নেতাকর্মীদের (পুরুষ ও মহিলা ইউনিট উভয়) থেকে ব্যালটের মাধ্যমে মতামত নেওয়া হয়। তাদের মতামত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে।
যাত্রাবাড়ীর কাজলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওতাধীন ঢাকা-৫ আসন, দুপুর ২টায় সূত্রাপুরে ঢাকা-৬ এবং সন্ধ্যা ৬টায় বাসাব খেলার মাঠে ঢাকা-৯ আসনের বাছাই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে বাছাই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) মুফতি দেলোয়ার হোসাইন সাকি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, আলহাজ্ব এমএইচ মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ।
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম তার পৃথক ৩টি বক্তব্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে সাংগঠনিক দাওয়াতি কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, বিগত আমলে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে এখন দেশের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষ এখন কাঙ্খিত মুক্তির জন্য আদর্শিক পরিবর্তন চায়। আর ইসলামকে বিজয়ী করা ব্যাতিত দেশে স্থায়ী শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
তিনি বলেন, “সন্ত্রাস, চাদাবাজ ও দখলদারমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ঢাকাবাসীকে ইসলাম ও মানবতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করতে হবে। ভবিষ্যতেও যাতে কেউ ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে না পারে সেজন্য ঢাকাবাসীসহ সর্বস্তরের দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি