রাজশাহীতে আম কিনে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে নাটোর সদর উপজেলার বনবেলঘরিয়া এলাকায় নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কে বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে তাঁদের মৃত্যু হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম সাগর হোসেন (২৪)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশার চালক মো.

বাবু (৪২)। তিনি নাটোর সদর উপজেলার হারিগাছা গ্রামের বাসিন্দা। নিহত অন্য দুজনের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ঝলমলিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও রাজশাহীর রাজপাড়া থানার কর্তব্যরত এএসআই মো. লাবলু চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঝলমলিয়া হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, সাগর হোসেনসহ তিনজন রাজশাহীর বানেশ্বরে আম কিনতে গিয়েছিলেন। তাঁরা বানেশ্বরে আম কিনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নাটোরে আসছিলেন ট্রেনযোগে ঢাকায় যাওয়ার জন্য। শুক্রবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে তাঁদের বহনকারী অটোরিকশা বনবেলঘরিয়া এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা রাব্বী পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই চালক মো. বাবুর মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সাগরসহ তিন জনকে নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছার আগেই সাগরের মৃত্যু হয়। অন্য দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে রাত ১০টার কিছু পরে তাঁদের মৃত্যু হয়। তবে তাঁদের পরিচয় জানাতে পারেনি রাজশাহীর রাজপাড়া থানার কর্তব্যরত এএসআই মো. লাবলু।

ঝলমলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে বাসের চালক ও সহযোগীরা পালিয়েছেন। দুজনের মৃতদেহ তাঁদের হেফাজতে আছে। অন্যদের ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানেন না। রাজপাড়া থানা তাঁদের ব্যাপারে বলতে পারবে।

আরও পড়ুনময়মনসিংহে দুই স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১০১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

পরিদের জন্য একটি দিন

ছোটবেলায় আমরা প্রায় সবাই কোনো না কোনো এক পরির গল্প শুনে ঘুমিয়েছি। দাদি-নানির মুখে শোনা কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছি, অথবা মায়ের কণ্ঠে ঝিমিয়ে পড়েছি একজোড়া ডানাবিশিষ্ট এক অলৌকিক সত্তার গল্প শুনতে শুনতে। সেই পরিরা হেসে উঠত গোলাপি ঠোঁটে, ঝলমলে পোশাক পরে ঘুরে বেড়াত প্রজাপতির মতো ডানায়, হাতে থাকত ইচ্ছাপূরণের জাদুর কাঠি। তারা কখনও বাঁচাত রাজকন্যাকে, কখনও পথ দেখাত হারিয়ে যাওয়া পথিককে আর আমরা শিশুরা ছোট ছোট কষ্ট ভুলে হারিয়ে যেতাম সেই রূপকথার মধ্যে।
২৪ জুন, আন্তর্জাতিক পরি দিবস। এমন এক দিন, যখন আমরা ফিরে তাকাই সেই ছোটবেলার দিকে, আবারও একটু পরি হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখি।
পরি চরিত্রের শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের নানা সংস্কৃতিতে। ইতালীয় লোককথা হোক কিংবা মধ্যযুগীয় ফরাসি সাহিত্যে চার্লস পেরোঁর ‘ফেয়ারি টেলস’–সব জায়গাতেই পরির উপস্থিতি চোখে পড়ে। পিটার প্যানের পাশে থাকা টিংকারবেল, সিন্ডারেলার পাশে থাকা গডমাদার বা শিশুর দাঁত নিয়ে যাওয়া টুথ ফেয়ারি–সব চরিত্রই পরিকে নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা কেবল সুন্দর নয়, তারা সাহায্য করে, পথ দেখায়, রক্ষা করে।
বাঙালির কল্পনায় পরি এসেছে নানা রূপে। শাড়ি পরে, টিকলি আর টিপ পরে; যে মুখটিপে হাসে। সবচেয়ে সুন্দর রূপ– সেই পরি দেখতে মায়ের মতো।
পরির গল্প শুনে একটি শিশু মনে করে– সেও পরি। সে উড়তে পারে, শুধু ডানাগুলো এখন অদৃশ্য। মায়ের কোলে লাফিয়ে এসে পড়া এক উড়ন্ত পরি; সে কখনও ধবধবে সাদা ডানাওয়ালা, আবার কখনও নিজের মতো সাদামাটা, শ্যামলা ও ঢ্যাঙা। যাদের ডানা আছে, কিন্তু কেউ দেখে না।
আবার ছোটবেলায় গল্পখেকো মেয়েটি যে বইয়ের মলাটে প্রথম পরি দেখেছিল, সে এখন বড় হয়ে নিজেকেই পরি ভাবে। সে জানে, পরি মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, তার থাকে ইচ্ছা পূরণ করার ক্ষমতা। পরি মানে স্বাধীনতা। নিজে উড়তে পারা। কাউকে ঠেস না দিয়ে নিজেই হাল ধরতে পারা।
আমরা অনেক সময় বলি, ‘ডানাকাটা পরি’। এই কথার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক নির্মম বাস্তবতা। আমাদের সমাজে বহু মেয়েকে আমরা সেই ডানাকাটা পরিতে পরিণত করি; যাদের স্বপ্নগুলো আমরা নিঃশব্দে ছেঁটে দিই। তারা পড়তে চায়, সাজতে চায়, উড়তে চায়– কিন্তু বলা হয়, এত স্বাধীনতা তোমাদের জন্য নয়। যেন পরি হতে গেলে তাকে শুধু সুন্দর হতে হবে; ওড়ার সাহস কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার নেই। আসলে ডানাটা ওড়ার প্রতীক। সেই ওড়াকে পশ্চাৎপদ সমাজ ভয় পায়। যে নারী নিজে পথ বেছে নেন, নিজের মতো করে বাঁচেন, তাঁকে আমরা পরি না বলে ‘বিদ্রোহী’ বলি। অথচ তিনিই তো প্রকৃত পরি, যে কারও দয়ার পাত্র নন, নিজের শক্তিতে উড়তে জানেন।
আজকের দিনেও আমাদের চারপাশে অনেক পরি আছেন। যারা হয়তো পরির মতো দেখতে নন; যাদের ডানাগুলো তাদের মন আর মস্তিষ্কে লুকানো। তারা কেউ মা, কেউ শিক্ষক, কেউ চিকিৎসক, কেউবা একা ঘর সামলে চাকরি করেন। তারা হয়তো রূপকথার পরির মতো ঝলমলে নন; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজের ইচ্ছাপূরণ করেন। অন্যদের ইচ্ছেও পূরণ করতে জানেন। তাদের ডানাগুলো হয়তো ধবধবে সাদা নয়; কিন্তু সেই ডানাতেই উড়ে সাহস, সহমর্মিতা, মমতা আর শক্তি।
আন্তর্জাতিক পরি দিবসে আমরা চাই পরিকে শুধু রূপকথায় নয়, জীবনের বাস্তবতায় স্বীকৃতি দিতে। আমাদের কন্যাদের শেখাতে পারি– তারা পরি হতে পারে শুধু রূপে নয়, সাহসে। আমাদের বোন, মা, প্রেমিকা বা বন্ধুরা– তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো গল্পের পরি। তারা যেন নিজস্ব স্বপ্ন নিয়ে উড়তে পারে, সেই স্বাধীনতা যেন আমরা দিতে শিখি।
আজ একটি ছোট উৎসব করা যেতে পারে– পরির থিমে সাজানো একটি পার্টি, ছোটদের অঙ্কন প্রতিযোগিতা বা শুধু একটি বই পড়া, যেখানে একটি পরি একা লড়ে জিতেছে। এমন গল্প পড়া, যেখানে পরি শুধু সুন্দর নয়, সাহসীও।
এই বিশেষ দিবসে আমরা যেন ভুলে না যাই পরির ডানার যত্ন নিতে হয়। যাদের আমরা ভালোবাসি, যাদের আমরা সম্মান করি, যারা আমাদের পাশে থাকে তাদের ডানাগুলো আমরা যেন না ছেঁটে ফেলি। বরং তাদের ওড়ার সাহস দিই। তাদের বলি– ‘তুমি পারবে। তুমি পরি।’ এটুকুই চাওয়া প্রত্যেক নারী যেন তাঁর ভেতরের পরিকে চিনতে পারেন আর তাঁর ডানাগুলো ছড়িয়ে দিতে পারেন আকাশজুড়ে। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পরিদের জন্য একটি দিন
  • এখন পেসারদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ