চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। ফজিলাতুন্নেছা (৭১) নামের ওই রোগী আগে থেকে ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন। আজ শনিবার দুপুরে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সবশেষ মারা যাওয়া নারী বাকলিয়ার বাসিন্দা। কোভিড-১৯ পজিটিভ আসার পর গত মঙ্গলবার তাঁকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে শুক্রবার দুপুরে তিনি মারা যান। তিনি ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নগরের এপিক হেলথ কেয়ারে ২ জন, শেভরনে ৩ জন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে চলতি মাসে মোট আক্রান্ত দাঁড়াল ৬২ জনে, মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার ছেলেকে গোসল করাতেও দেয়নি ওরা’

রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের অডিটরিয়াম শহীদদের বাবা-মায়ের অশ্রুতে ভিজেছে। অনেক মা উঠে দাঁড়িয়েছেন, আর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বলেছেন, “আমার ছেলে গুলি খেয়েছিল রাস্তায়, কিন্তু হাসপাতালে নিয়েও চিকিৎসা পায়নি।”

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট)‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ এর ১ বছর পূর্তিতে ঢাকা জেলা প্রশাসন ৮২ শহীদ পরিবার ও ১ হাজার ৪৮৩ জন জুলাইযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। কিন্তু এই সংবর্ধনা শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, এটি ছিল স্মরণ, শ্রদ্ধা, বিচার চাওয়ার আর্তি আর রাষ্ট্র পুনর্গঠনের অঙ্গীকার।

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিল। ৫ আগস্ট শুধু স্মরণ করার মতো দিন নয়, এটা প্রতিজ্ঞার দিন, মাফিয়াতন্ত্রকে চিরতরে নির্মূল করার শপথ।”

আরো পড়ুন:

বীরদের উৎসর্গ করে জুলাইয়ের গল্প শোনালেন সায়ান

চব্বিশের অভ্যুত্থানে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি

তিনি আরো বলেন, “আজ আমরা শ্রদ্ধা জানাই শুধু জুলাই শহীদদের নয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদেরও, যাদের আত্মত্যাগে আমরা প্রথম স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। এবার এসেছে গণতন্ত্রের পূর্ণ মুক্তির সময়।”

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে শহীদ শুভ’র মা রেনু কাঁপা কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলেকে গুলি করার পর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওকে বাঁচাতে কেউ আসেনি। মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলে গোসল করাতে দেয়নি পুলিশ। আমার ছেলে অপরাধ কী করেছিল? ছাত্রদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল, এটাই ছিল ওর অপরাধ?”

শহীদ আকরাম খান রাব্বির মা বলেন, “আমরা এখানে কোনো উৎসব করতে আসিনি। এসেছি বিচার চাইতে। আমাদের সন্তানদের খুন করে কেউ যেন নিরাপদে না থাকে। স্বৈরাচারী শাসকের বিচার চাই। এমন শাস্তি চাই, যেন দুনিয়া কাঁপে।”

এই স্মৃতিচারণ অংশে অডিটোরিয়ামের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। দর্শকসারিতে অনেকেই চোখ মুছছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ বলেন, “যে সরকার গুলি চালিয়েছিল, তারা পালিয়ে গেছে। তাদের দোসররাও আত্মগোপনে। সেই শূন্যতার সময় নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে আমরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। এখন সেই সংকট পেরিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি উপস্থিত শহীদ পরিবার ও আন্দোলনকারীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার তুলে দেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সমাজকল্যাণ ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

অনুষ্ঠানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। যেখানে আন্দোলনের ভয়াবহতা ও আন্দোলনকারীদের সাহসিকতা ফুটে ওঠে।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ