নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বসতঘরের ভেতর বৃদ্ধ নারী সেতারা বেগমকে (৭০) গলা কেটে হত্যার পর তাঁর জানাজায়ও অংশ নিয়েছিলেন খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. মাহফুজুন নবী (৩৩)। সেতারা বেগম হত্যা মামলার দুই আসামি মাহফুজ ও মোরশেদ আলমকে (৩২) গ্রেপ্তারের পর ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারে পুলিশ।

স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে সেতারা বেগমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় ওই নারী বাড়িতে একা ছিলেন। লাশ উদ্ধারের সময় নারীর বসতঘরের এক পাশে সিঁধ কাটা দেখা যায়। যার ভিত্তিতে পুলিশের ধারণা ছিল, চুরি করতে আসা ব্যক্তিদের চিনে ফেলায় ওই নারীকে হত্যা করা হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত নারীর ছেলে মো.

রুমন বাদী হয়ে মাহফুজ ও মোরশেদকে আসামি করে সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

সেতারা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাহফুজের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার বিনয়নগর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নুর নবী খোকন। মাহফুজ নিহত সেতারা বেগমের আত্মীয় ছিলেন। অপর আসামি মোরশেদ আলম মাহফুজের বন্ধু। তিনি বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দুর্গাপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আজ শনিবার ভোর সোয়া চারটার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর এলাকা থেকে প্রথমে মোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা বাজার থেকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত মাহফুজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম সেতারা বেগম হত্যার ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বিকেলে তাঁরা নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দোষ স্বীকার করে দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।

হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ওসি মোরশেদ আলম জানান, আসামি মাহফুজুন নবীর বোনকে বিয়ে করেছিলেন সেতারা বেগমের ছেলে। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মাহফুজ কিছুটা অর্থের কষ্টের মধ্যে পড়েন। যার কারণে তিনি সেতারার বাড়িতে চুরি করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাহফুজ তাঁর বন্ধু মোরশেদ আলমসহ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সোনাইমুড়ীর সোনাপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে সেতারা বেগমের বাড়িতে যান। দুই আসামি ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে ঢোকেন। এরপর ঘরের মালামাল চুরির সময় সেতারা বেগমের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি চিৎকার দিতে চাইলে মাহফুজ তাঁকে ঘটনাটি কাউকে না জানাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সেতারা তাতে রাজি হননি। একপর্যায়ে মাহফুজ ও মোরশেদ ঘর থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁরা আবার ঘরে ঢুকে সেতারাকে হত্যা করেন।

ওসি মোরশেদ আলম জানান, আসামি মাহফুজ হত্যাকাণ্ডের পর সোনাইমুড়ী এলাকাতেই ঘোরাফেরা করেছিলেন। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার রাতে বাড়িতে অনুষ্ঠিত জানাজায়ও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ঘটনার সময় খোয়া যাওয়া সেতারা বেগমের মুঠোফোনের সূত্র ধরে প্রথমে মোরশেদ আলমকে, পরে মাহফুজকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মোরশেদ আলমের বাড়ি থেকে চুরি করে নেওয়া মুঠোফোন, কয়েকটি শাড়ি, জামাকাপড় ও একটি সাউন্ড বক্স উদ্ধার করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড দ ই আস ম উপজ ল র কর ছ ন ব গম র হত য র র সময় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

শুভ জন্মদিন, জীবনের ২২ গজে ‘একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান’

নরমান গর্ডন যখন ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে, পুরো বিশ্বকে থামিয়ে দিতে হাজির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই মহাযুদ্ধের আগে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সবার চোখ কেড়েছিলেন এই ডানহাতি ফাস্ট বোলার। ওয়ালি হ্যামন্ড ও লেন হাটনের মতো সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যান তো ভক্তই হয়ে গিয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী গর্ডনের। ইংল্যান্ড ওপেনার হাটন গর্ডনকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ও শুধু ইংল্যান্ড সফরে যাক, দেখবেন কত বড় তারকা হয়ে যাবে।’

কিন্তু সেই সুযোগ পাননি গর্ডন। ১৯৩৯ সালে হিটলারের জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে যায় মহাযুদ্ধ। ১৯৪৫ সালে জাপানের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি সে যুদ্ধের। যুদ্ধ থামার পর আবার সবকিছু স্বাভাবিক হলে ১৯৪৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু সেই দলে ছিলেন না গর্ডন। বয়স হয়ে গেছে ৩৫, তাই ‘বুড়ো’ এই ফাস্ট বোলারকে দেশে রেখেই ইংল্যান্ডে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

তখন কে জানত, একদিন এই বয়সই গর্ডনকে অমর করে রাখবে ক্রিকেট বিশ্বে! সবচেয়ে বেশি বয়স পাওয়া টেস্ট ক্রিকেটার যে এই দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারই। শুধু এটুকু বললেই খুব বেশি কিছু বলা হয় না। জীবনে ইনিংসে নড়বড়ে নব্বই পেরিয়ে ‘সেঞ্চুরি’ ছোঁয়া একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার তিনিই। ২০১১ সালে ‘১০০’ পুরো করা সেই গর্ডনের আজ জন্মদিন।

২০১৪ সালে মারা গেছেন নরমান গর্ডন

সম্পর্কিত নিবন্ধ