টানা বৃষ্টিতে খাল-বিলে বাড়ছে পানি। নতুন পানিতে উজানে ছুটছে নানা প্রজাতির মিঠাপানির মাছ। বর্ষা মৌসুমে গ্রামে মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রির ধুম পড়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি মাছ ধরার ফাঁদ চাঁই বিক্রি হয় পটিয়ায়। দেশীয় পদ্ধতিতে বাঁশের শলাকা দিয়ে তৈরি হয় এই চাঁই। এটি তৈরিতে সহায়তা করেন গ্রামের মেয়েরাও। চাঁই দিয়ে চিংড়ি, পুঁটি, খৈলশা, দারকানা ও টেংরা, টাকিসহ ছোট মাছ শিকার করা হয়। বিভিন্ন ফাঁদ দিয়ে মাছ ধরা গ্রামীণ ঐতিহ্য।
পটিয়া পৌর সদরের থানার হাটে শোনা যায় মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রেতার হাঁকডাক, ‘যদি কিনন চাঁই, মাছর অভাব নাই’ (যদি মাছ ধরার ফাঁদ ছাঁই কিনেন, তাহলে মাছের অভাব হবে না।’ দোকানে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পলো, ছাঁই। হাটে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে মাছ ধরার নানা ফাঁদ। ক্রেতারা জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বাড়ির পুকুর, আশপাশের জলাশয় পানিতে ডুবে গেছে। পুকুর-জলাশয়ের মাছ প্রবেশ করছে খাল-বিল, নদীতে। সেই মাছ ধরার জন্য বাঁশের তৈরি ফাঁদ বিক্রির ধুম পড়েছে। বছরের এ সময়ে এই চাঁই বেশি কেনাবেচা হয়।
কাশিয়াইশ ইউনিয়নের মাছ শিকারি খোরশেদ আলম বলেন, ‘বৃষ্টিতে এলাকার বিভিন্ন স্থানের ডোবা, নালা, খাল-বিল পানিতে ভরে গেছে। এ সময় গ্রামের মানুষের তেমন কোনো কাজ থাকে না। এ সময় আমরা খাল-বিলে এক প্রকার ফাঁদ (চাঁই) দিয়ে মাছ ধরি। স্থানীয় হাটে এই ফাঁদ কিনতে পাওয়া যায়।
খরনা ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের ছাঁই কারিগর মোহাম্মদ জাফর জানান, তারা প্রথমে বাঁশ কেটে শলাকা তৈরি করেন। পরে সেগুলো হালকা রোদে শুকিয়ে নাইলনের সুতা দিয়ে বেঁধে চাঁই বা ফাঁদ তৈরি করেন। এ কাজে গৃহবধূরাও হাত লাগান। কচুয়াই ইউনিয়নের হাজমপাড়ার ফাঁদ তৈরির কারিগর আবদুস সালাম জানান, ‘একটি বাঁশের দাম ২৫০-৩০০ টাকা। একটি বাঁশে ৬-৭টা চাঁই তৈরি করা যায়। একটি তৈরি করতে ২ জনের ৩ দিন সময় লাগে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। প্রতিটি বড় চাঁই ৩৫০-৪০০ টাকা এবং ছোট চাঁই ২৫০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়।
একই এলাকার কারিগর আবদুর রহিম বলেন, ‘একটা বড় চাঁই তৈরিতে মজুরি লাগে ১৫০ টাকা, বিক্রি হয় ৩০০-৩৫০ টাকায়, লাভ থাকে ১৫০–২০০ টাকা। ছোট চাঁই তৈরিতে খরচ ১৮০ টাকা, বিক্রি হয় ২৫০ টাকায়। কারিগররা বলেন, আমাদের মজুরি হিসাব করলে লাভ খুব বেশি লাভ হয় না। তবে এটা আমাদের পেশা, তাই পরিবারের বউ–মেয়েদের নিয়ে এটি তৈরি করা হয়।’
পৌর সদরের থানার হাটের মাছ ধরার ফাঁদ ছাঁই বিক্রেতা দিদারুল আলম বলেন, ‘আমাদের এই দোকান প্রায় ২০ বছরের পুরনো। আগে আমার বাবা করতেন। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই হাটে ছাঁই বিক্রি করি।’
পটিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে বলেন, ‘বর্ষায় নদী ও খাল–বিল পানিতে টইটুম্বর থাকে। সেই পানিতে দেশি মাছ ধরার জন্য সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়। এসময় হাট-বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার সরঞ্জাম কেনাবেচা হয়, চাঁই তেমনই একটি মাছ ধরার ফাঁদ। চাঁই বিক্রি করে কারিগররা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি যারা কিনছেন তারাও মাছ ধরে সংসার চালাতে বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় পঞ্চকবির গান
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
বঙ্গোপসাগরে পুণ্যস্নান ও পূজার মধ্য দিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় শেষ হয়েছে রাস উৎসব। বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সমুদ্রে নেমে স্নান সম্পন্ন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সৈকত সংলগ্ন শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমে ১৭ জোড়া যুগল প্রতিমা দর্শন করেন তারা।
এর আগে, মোমবাতি, আগরবাতি, ফুল, ফল, দুর্বা, হরতকি, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পণ করেন তারা। লক্ষাধিক নারী-পুরুষের উপস্থিতি এবং উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত এলাকা। অনেকে প্রায়শ্চিত্ত ও পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় পিন্ডদানের পাশাপাশি মাথা ন্যাড়া করেন। মতুয়া সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা সৈকতে স্নানের আগে ঢাকা-ঢোলের তালে হরিনাম জপে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন।
আরো পড়ুন:
বাউফলে খেলার মাঠে মেলা বন্ধের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ
লালন মেলায় ৭৮ মোবাইল ফোন চুরি
রাসপূজা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দিরে পাঁচ দিনব্যাপী চলবে মেলা।
রাস উৎসবে অংশ নিকে আসা পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর ছিল পুলিশ, নৌ-পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
পিরোজপুরের নাজিরপুর থেকে আসা পুণ্যার্থী মুক্তা রানী বলেন, “প্রতিবছরের মতো এবারো আমরা রাস পূজা উপলক্ষে কুয়াকাটায় এসেছি। রাতভর ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান উপভোগ করেছি। সকালে পুণ্যের আশায় স্নান করেছি এবং কৃষ্ণের কাছে মনোবাসনা ব্যক্ত করেছি।”
ঢাকার কাকরাইল এলাকা থেকে আসা অর্চনা রানী বলেন, “জাগতিক পাপ মোচনের আশায় স্নান করেছি। পৃথিবীর সব জীবের জন্য শান্তি কামনা করেছি। এখানে হাজার হাজার মানুষ এসেছেন। সবাই খুব ভোরে স্নান করেছেন। এর আগে, মন্দিরসহ পুরো সৈকত এলাকায় সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপভোগ করেছি।”
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, “মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়ন ছিলেন। সবার সহযোগিতায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ