ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর বিশ্ববাজারে এবার কী হতে পারে
Published: 22nd, June 2025 GMT
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা বিশ্ববাজারে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে—এমনটাই মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার খুললেই এর প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ তেলের দাম বাড়তে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ মাধ্যমে বিনিয়োগের জন্য ছুটতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই হামলার খবর জানান। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ল। সপ্তাহান্তে বিনিয়োগকারীরা যখন বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছিলেন, তখন এই হামলার খবরে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেবে, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রুথ সোশ্যালের ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণে শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ দেখা দিতে পারে; সেই সঙ্গে লেনদেন শুরু হলে ডলারসহ নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। যদিও সংঘাতের গতিপথ নিয়ে এখনো বড় ধরনের অনিশ্চয়তা আছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘটনাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘চমকপ্রদ সামরিক সাফল্য’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ইরানের মূল পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, শান্তিচুক্তিতে রাজি না হলে ইরানের অন্যান্য স্থাপনাতেও হামলা হতে পারে।
পোটোম্যাক রিভার ক্যাপিটালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মার্ক স্পিন্ডেল বলেন, ‘আমি মনে করি, বাজার প্রথমে আতঙ্কিত হয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং তেলের দাম বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, এখনো তার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন হয়নি এবং সেটা করতে কিছুটা সময় লাগবে। যদিও প্রেসিডেন্ট বলছেন, হামলা “সম্পন্ন” হয়েছে। বাস্তবতা হলো, এখনো আমরা এর মধ্যে আছি।’
মার্ক আরও বলেন, এই অনিশ্চয়তা বাজারে ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে হচ্ছে। এখন প্রত্যেক মার্কিন নাগরিকের জীবনে এই সংঘাতের প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে তেলের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা আরও বাড়বে।
স্পিন্ডেল আরও বলেন, শনি ও রোববার বাজার বন্ধ। শনিবার এই হামলা হওয়ায় বাজারে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব পড়ার সুযোগ ছিল না। ছুটির দিনে হামলা হওয়ায় খবর বিশ্লেষণের জন্য কিছুটা সময় পাওয়া যাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতির কারণে তেলের দামে সম্ভাব্য প্রভাব এবং তার ফলে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাই এখন বিনিয়োগকারীদের প্রধান চিন্তার বিষয়। তেলের দাম বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যেতে পারে এবং স্বল্প মেয়াদে সুদ হার হ্রাসের সম্ভাবনাও কমে যেতে পারে।
ক্রেসেট ক্যাপিটালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জ্যাক অ্যাবলিন বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে নতুন ও জটিল ঝুঁকি তৈরি হয়েছে; এ বিষয়টি আমাদের গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। জ্বালানির দামে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে, প্রভাব পড়বে মুদ্রানীতিতেও।’
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শুরুর পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। ১০ জুনের পর বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়ে বৃহস্পতিবার ৭৯ ডলারে উঠে যায়। প্রায় পাঁচ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্টক সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০-তে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর সূচকটি কিছুটা নেমে গেলেও পরে স্থিতিশীল হয়।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস তিনটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ তৈরি করে। এগুলোর মধ্যে ছিল সংঘাত প্রশমিত হওয়া, ইরানের তেল উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ও হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যাওয়া। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তেলের দামে এই তিনটি পরিস্থিতির বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতিতে তেলের দাম বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১৩০ ডলারে উঠে যেতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে উঠতে পারে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে ভোক্তা ব্যয় কমে যাবে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতির দ্বিতীয় ধাপের আশঙ্কায় চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা কার্যত নষ্ট হয়ে যাবে।’ এই বিশ্লেষণ অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই প্রকাশিত হয়।
শনিবারের ঘোষণা-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় হ্যারিস ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের ম্যানেজিং পার্টনার জেমি কক্স বলেন, ‘প্রথম ধাক্কায় তেলের দাম নিঃসন্দেহে বাড়বে।’ তাঁর আশা, বিষয়টি হবে সাময়িক এবং কয়েক দিনের মধ্যেই দাম স্থিতিশীল হবে; কারণ, ইরান হয়তো ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনার পথেই হাঁটবে।
কক্স আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার কারণে ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস হয়ে থাকলে দেশটি কৌশলগত সুবিধা হারিয়েছে। এখন তারা শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে।
শেয়ারবাজার টিকে থাকবে
অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, তেলের দাম নাটকীয়ভাবে বাড়লে বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও চাপে পড়তে পারে, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্কের প্রেক্ষাপটে, যে কারণে অর্থনীতি আগে থেকেই দুর্বল।
ইতিহাস বলছে, প্রাথমিক পতনের পর শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তেমন নজির আছে। যেমন ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন বা ২০১৯ সালে সৌদি তেল স্থাপনায় হামলার সময়েও দেখা গেছে, বাজার কিছুদিন ধুঁকেছে, কিন্তু পরে ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজ ও ক্যাপআইকিউ প্রোর তথ্য অনুযায়ী, এ ধরনের সংঘাত শুরুর পর প্রথম তিন সপ্তাহে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক গড়ে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে যায়, কিন্তু সংঘাত শুরুর দুই মাস পর গড়ে ২ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
চলতি বছর অবশ্য ডলারের মান অনেকটাই কমে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মধ্য দিয়ে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ল। এ পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে ডলারের চাহিদা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আইবিকেআরের প্রধান বাজার কৌশলবিদ স্টিভ সোসনিক বলেন, ‘আমরা কি নিরাপদ আশ্রয়লাভের দৌড়ঝাঁপ দেখব? সেটা হলে ইঙ্গিত পাওয়া যাবে আগেভাগে বন্ডের সুদহার কমবে আর ডলার শক্তিশালী হবে।’
স্টিভ আরও বলেন, শেয়ারবাজারে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে তা কতটা গভীর হবে, তা নির্ভর করবে ইরানের প্রতিক্রিয়া ও তেলের দামের গতি-প্রকৃতির ওপর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বব জ র শ য় রব জ র পর স থ ত ইসর য় ল ন র পদ ন র পর আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু ঘোষণা নয়, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বিএনপি: আবদুল মঈন খান
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে বিএনপির বিজয় অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি নেতা–কর্মীদের নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শুধু নির্বাচনের ঘোষণা নয়, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বিএনপি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেট নগরের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে ছাত্র–জনতার ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় মিছিলের আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল মঈন খান এ কথাগুলো বলেন।
আবদুল মঈন খান বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সরকার তাদের কাজ করছে, এখন আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে। দেশের প্রতিটি গ্রামগঞ্জে গিয়ে ধানের শীষের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। আমরা চাই, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এখন বিএনপির নেতা–কর্মীদের কাজ হচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গঠন করা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার পুনর্বাসনের বিষয়ে রাষ্ট্র যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে। জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থান ছিল একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের একটি সুস্পষ্ট বার্তা। সেই ইতিহাস এখন আমাদের নতুন প্রেরণা জোগায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান লড়াইয়ে।’
আবদুল মঈন খান বলেন, ‘দলের অসংখ্য নেতা–কর্মী নির্ভীকভাবে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও দেশের প্রতি অবদানের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই।’ এ সময় তিনি সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রশংসা করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে বিজয় মিছিলটি শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।