ইরানে হামলার পর ট্রাম্পের সামনে যে তিন অনিশ্চয়তা ঝুলছে
Published: 22nd, June 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ইরানে তিনটি স্থাপনা ধ্বংস করে ‘অসাধারণ সামরিক সাফল্য’ অর্জন করেছেন। ট্রাম্পের এই দাবি আদৌ ঠিক কি না, তা হয়তো পরে বোঝা যাবে।
তবে এটি স্পষ্ট, তিনি আমেরিকাকে সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঠেলে দিয়েছেন। এই যুদ্ধ আরও বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে এবং সে আশঙ্কা ট্রাম্প নিজে স্বীকারও করে নিয়েছেন।
ইরানে বোমা হামলার আইনি ভিত্তি আছে কিনা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে আমি যেটিকে এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে ভাবছি, তা হলো—এখানে তিনটি বড় অনিশ্চয়তা আমেরিকার সামনে ঝুলছে, যেগুলোর ওপর আমেরিকা ও বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
ইরান কীভাবে আমেরিকার ওপর পাল্টা আঘাত হানবে তার ওপর প্রথম অনিশ্চয়তার বিষয়টি নির্ভর করছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে এই সংঘাতে নামে, তাহলে তারা যে ক্ষতির মুখে পড়বে, তা কখনোই পূরণ করা সম্ভব হবে না।’
ইরানের সামনে অনেক পথ খোলা আছে। তারা ইরাকে, বাহরাইনে কিংবা অন্য কোথাও অবস্থিত আমেরিকান ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে।
তারা সাইবার হামলা করতে পারে, আমেরিকান দূতাবাসে আক্রমণ করতে পারে, অথবা কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে দিয়ে সন্ত্রাসী হামলা করাতে পারে।
আরও পড়ুনপুতিন কেন ইরানকে রক্ষা করছেন না?৩ ঘণ্টা আগেআরেকটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ হতে পারে হরমুজ প্রণালি আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া। তারা তেলবাহী জাহাজে আক্রমণ চালাতে পারে, বা সামুদ্রিক মাইন পেতে দিতে পারে।
এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে, কারণ বিশ্বের মোট তেলের এক-চতুর্থাংশ এই প্রণালি দিয়ে আনা-নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা আমাকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত প্রণালিটি পুনরায় উন্মুক্ত করতে পারবে বটে, কিন্তু তার জন্য অর্থনৈতিক ও অন্যান্য দিক থেকে মূল্য দিতে হতে পারে।
১৯৮৮ সালে যখন ইরান এই প্রণালিতে মাইন পেতে দিয়েছিল, তখন একটি মাইন আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস স্যামুয়েল বি.
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছিল, তখন ইরান আমেরিকার ইরাকের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। সেই উত্তেজনার সময় ভুলবশত একটি ইউক্রেনীয় যাত্রীবাহী বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। সে বিমানে থাকা ১৭৬ জন আরোহীর সবাই নিহত হন।
আমার ধারণা, ইরান এবার আগের চেয়েও জোরালোভাবে পাল্টা হামলা চালাতে পারে। এর একটা কারণ হতে পারে—তারা চায় যেন যুক্তরাষ্ট্র আবার এমন আক্রমণ চালাতে সাহস না করে। অর্থাৎ তারা প্রতিরোধ শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে।
তবে ইরানের সেই সক্ষমতা আগের চেয়ে সীমিত হয়ে থাকতে পারে।
আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের আক্রমণ, বিস্ফোরণের মুখে গোটা মধ্যপ্রাচ্য১৪ ঘণ্টা আগেউদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ইসরায়েলি হামলায় হয়তো তাদের হরমুজ প্রণালিতে মাইন বসানোর ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এমন কাজ করলে ইরানের নিজস্ব তেল রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হবে।
বিশেষ করে চীনে ইরানের তেল রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। এটি ইরানের বন্ধু রাষ্ট্র চীনকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা মনে রাখা দরকার যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছিলেন: ‘কোনো যুদ্ধ তখনই শেষ হয়, যখন শত্রু বলে এটি শেষ হয়েছে। আমরা ভাবতে পারি যুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু শত্রুরও তো মতামত রয়েছে।’
দ্বিতীয় অনিশ্চয়তার বিষয়টি হলো, ইসরায়েল ও আমেরিকার হামলা কি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আসলেই বন্ধ করতে পেরেছে, না কি এটি উল্টো আরও গতি এনে দিয়েছে।
ফোরদো ও অন্যান্য স্থাপনায় বোমাবর্ষণ কতটা সফল হয়েছে, তার ওপর ওই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে। আসলে ট্রাম্প যে দাবি করছেন, তা কতটুকু সত্য, তা বুঝে উঠতে সময় লাগবে।
আমেরিকার ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা দিয়েও ফোরদো স্থাপনাটি ধ্বংস করা যাবে কি না তা নিয়ে এর আগে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
আরও পড়ুন২৫০০ বছরের পুরোনো দুশমনি: ইসরায়েল কি ‘মরদখাই’? ইরান কি ‘হামান’?১৭ জুন ২০২৫কারণ স্থাপনাটি গভীর পাহাড়ের পাথরের নিচে নির্মিত। এ ছাড়া ইরানের আরও কোনো গোপন স্থানে অতিরিক্ত সেন্ট্রিফিউজ আছে কি না তাও আমাদের জানা নেই।
বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ একমত, যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে থাকে, তাহলে তা পুরো অঞ্চলের জন্য ভয়ংকর পরিণতি বয়ে আনতে পারে। তাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র গেলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে চাইতে পারে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড এই বছরের বসন্তে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না। তিনি এই বিষয়টিকে তিনি তখন খুব একটা গুরুত্ব দেননি।
এখানে মূল ঝুঁকি হলো, ইসরায়েল ও আমেরিকার হামলার ফলে ইরান এখন এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে যে, তাদের সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র দরকার। কারণ, যদি তাদের পরমাণু অস্ত্র থাকত, তাহলে ইসরায়েল হয়তো এত সহজে ইরানে বোমা ফেলতে সাহস করত না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান ইতিমধ্যে এত পরিমাণ উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করে ফেলেছে যা দিয়ে অন্তত ১০টি পারমাণবিক বোমা বানানো সম্ভব।
ধারণা করা হয়, এই উপাদানগুলো ছিল ইরানের ইস্পাহান শহরে। ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকা ইস্পাহানেও হামলা করেছে। কিন্তু সেই স্থাপনাটি ধ্বংস হয়েছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা হলো: এটি কি সংঘাতের শেষ, না কি নতুন এক যুদ্ধের শুরু?
ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনাফাইলউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র আম র ক র ইসর য় ল গ রস ত র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
মনোনয়ন পেয়েই খুলনায় বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর খুলনায় বিএনপির প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। দলের ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের জন্য ভোট প্রার্থনা করে দোয়া মাহফিল, মোটর শোভাযাত্রা এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা শুরু হয়েছে।
খুলনায় ছয়টি সংসদীয় আসন রয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপি ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করে। একটি আসন স্থগিত রেখেছে।
মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- খুলনা-২ আসনে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৩ আসনে রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আসনে আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা-৫ আসনে আলী আসগর লবি এবং খুলনা-৬ আসনে খুলনা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী। তবে, খুলনা-১ আসনের প্রার্থী এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং মনিরুল হাসান বাপ্পির মনোনয়নকে নতুন চমক বলে অভিহিত করেছে।
সূত্র মতে, খুলনা-২ আসনে প্রত্যাশীদের মধ্যে নগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলমসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা মনোনয়ন ছিলেন। তবে, দল মঞ্জুকে বেছে নিয়েছে। যিনি ২০২৩ সাল থেকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যহতিপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু নগরীতে তার অনুসারীর সংখ্যা রয়েছে প্রচুর।
অনুভূতি প্রকাশ করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘‘দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের আস্থা ও স্বীকৃতির জন্য কৃতজ্ঞ।’’
খুলনা-৩ আসনে দলের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। যিনি আগে একই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
খুলনা-৪ আসনে বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিকের মধ্যে মনোনয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। কিন্তু দলটি অবশেষে হেলালকে মনোনয়ন দেয়।
খুলনা-৫ আসনে প্রাক্তন এমপি এবং প্রাক্তন বিসিবি সভাপতি আলী আসগর লবিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
তবে, সবচেয়ে বড় চমকটি এসেছে খুলনা-৬ আসনে। যেখানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, বাসস চেয়ারম্যান আনোয়ার আল-দীন এবং স্থানীয় নেতা ডা. আব্দুল মজিদ এবং রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র বিএনপি নেতাকে সামনের দৌড়ে দেখা গেছে। তবুও দলটি মনিরুল হাসান বাপ্পিকে বেছে নিয়েছে। যিনি সম্প্রতি জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব নিযুক্ত হয়েছেন।
মনোনয়নের কথা স্মরণ করে বাপ্পী বলেন, “আমি ৩৫ বছর ধরে এই দলে আছি। ছাত্রদল থেকে যুবদল ও বিএনপি। আমি সবসময় হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নেমেছি। দল আমার ত্যাগ স্বীকার করেছে। এই মনোনয়ন প্রমাণ করে যে নিষ্ঠা কখনও বৃথা যায় না।”
এদিকে, মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার থেকে খুলনার নির্বাচনী এলাকায় এরইমধ্যে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন।
খুলনা-৪ আসনের আজিজুল বারী হেলাল রূপসা ঘাটের ব্যাংক মোড়ে এক দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে তার প্রচারণা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আবারো আমার জন্মস্থানের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা অনেক সম্মানের।’’
খুলনা-৬ আসনের প্রার্থী মনিরুল হাসান বাপ্পী তার প্রচারণা শুরু করেন তার বাবার কবর জিয়ারত, হাসপাতালে অসুস্থ দলীয় নেতাদের সাথে দেখা করে এবং কয়রা ও পাইকগাছার উপজেলা নেতাদের সাথে কথা বলে।
তিনি বলেন, “বুধবার জেলা পর্যায়ের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে প্রচারণা আরো জোরদার করা হবে।”
এদিকে, খুলনা-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বর্তমানে অসুস্থ থাকায় তার অনুসারীদের মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করেছেন।
মঞ্জুর অনুসারি সাবেক ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “প্রার্থী ঘোষণার আগে থেকেই দলীয় কর্মীরা তার পক্ষে দিনব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এখনো চালাচ্ছেন।”
খুলনা-৩ আসনে রকিবুল ইসলামের পক্ষেও প্রচারণা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। বকুল সমর্থকরা দিনব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস