নিজস্ব সচিবালয় বিচার বিভাগকে প্রকৃত স্বাধীনতা দেবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রোববার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা’বিষয়ক জাতীয় সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই বিপ্লবের প্রতি সম্মান জানানোর একমাত্র উপায় হলো ২০২৪-এর জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সেগুলো পূর্ণ স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান বিচারপতি ড.

সৈয়দ রেফাত আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যদের মধ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বক্তব্য রাখেন।
ইউনূস বলেন, জুলাই বিপ্লব শুধু স্বৈরাচারী সরকার পতনের ব্যাপার নয়। এটি ছিল সমাজজুড়ে বিদ্যমান গভীর অনিয়ম, পক্ষপাত ও ক্ষমতার বৈষম্যকে ধ্বংস করার এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা।

তিনি বলেন, এ বিপ্লবের লক্ষ্য ছিল এমন সমাজ গড়া, যেখানে সব সিদ্ধান্ত এবং কর্মকাণ্ডের মূলনীতি হবে স্বাধীনতা, সমতা ও মর্যাদা। সংস্কারের প্রতি আমরা দায়বদ্ধ, যা জাতির প্রতি ঋণ হিসেবে বহন করছি। আমরা যে সংস্কারের কথা বলছি, তা কোনো তুচ্ছ পরিবর্তন নয়। বরং তা এমন মূলগত রূপান্তর, যা গত ৫৪ বছরেও করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, কীভাবে গণতন্ত্রের নামে নির্বাচনী কৌশল প্রয়োগ করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয় এবং প্রশাসনিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলা হয়। এসব স্বৈরতান্ত্রিক কৌশল রোধে প্রয়োজন নতুন কাঠামো। এই সংস্কার প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিচার ব্যবস্থা। একে স্বাধীন ও কার্যকর না করতে পারলে কোনো অগ্রগতি সম্ভব নয়।

স্বাধীনতা, দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা আজ পুনর্গঠনের পথে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এ সংস্কার উদ্যোগ চলছে, আইন মন্ত্রণালয় এতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা দেশের বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গবেষণা করে প্রতিবেদন দিয়েছে। কমিশনের সুপারিশ এবং প্রধান বিচারপতির প্রস্তাবনার মধ্যে অনেক জায়গায় মিল রয়েছে।
তিনি জানান, প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন ও ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার প্রক্রিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নতুন ব্যবস্থা, জেলা আদালতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে বিচারক বদলির আলাদা বিধি প্রণয়ন এবং বিচার বিভাগের নিজস্ব সচিবালয় গঠন, যা বিচার বিভাগকে প্রকৃত স্বাধীনতা দেবে।

এ ছাড়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আবার সক্রিয় করা হয়েছে, যাতে বিচারপতিদের জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি সংস্কার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে এটি বাংলাদেশে নতুন ভোর আনবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স স ব ধ নত ব চ রপত

এছাড়াও পড়ুন:

জয়পুরহাট-২ আসন আক্কেলপুরে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ২

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা ও দলীয় প্রার্থী আবদুল বারীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গোলাম মোস্তফার দুই সমর্থক আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আক্কেলপুর পৌর শহরের পৃথক দুটি স্থানে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) আসনে সাবেক সচিব আবদুল বারীকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর এই আসনের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা আবদুল বারীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দুই দিন ধরে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরা আজ বৃহস্পতিবার আক্কেলপুর পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সকাল ১০টার পর উপজেলা পরিষদ চত্বরে জড়ো হতে থাকেন তাঁরা। বেলা সাড়ে ১১টায় গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিল করার কথা ছিল। এর আগেই আবদুল বারীর পক্ষের নেতা-কর্মীরা সেখানে যান। তাঁরা তাঁদের প্রার্থীর পক্ষে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাঁরা গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করেন। এরপর গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকেরা শহরের নবাবগঞ্জ সেতুর পূর্ব পাশে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় গোলাম মোস্তফার পক্ষের আপেল মাহমুদ ও আইয়ুব আলী আহত হন।

গোলাম মোস্তফার সমর্থক আপেল মাহমুদ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর মাঠে থেকে বিএনপির জন্য রাজপথে গোলাম মোস্তফা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। আমরা অনেক জুলুম–নির্যাতন সহ্য করেছি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এবার আমাদের নেতা মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু তাঁকে বঞ্চিত করে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদে আজ বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বারী সাহেবের কর্মী-সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।’

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফ ইফতেখার বলেন, ‘আজ হঠাৎ করে ধানের শীষের প্রার্থীর বিপক্ষে কয়েকজন বিক্ষোভ করার চেষ্টা করছিলেন। আমরা তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। আমরা সবাই ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছি।’

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ