গ্রাহক সুরক্ষার জন্য দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি
Published: 6th, November 2025 GMT
দেশে মাইক্রোফাইন্যান্স বা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ক্লায়েন্ট প্রটেকশন সার্টিফিকেট (সিপিসি) গোল্ড’ অর্জন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। আন্তর্জাতিক সংস্থা মাইক্রোফাইন্যান্স রেটিং (এমএফআর) ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচিকে এ স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে সিপিসি গোল্ড স্বীকৃতি পেয়েছিল ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি।
এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রধান অতিথি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো.
অনুষ্ঠানে বলা হয়, নির্ধারিত আটটি আন্তর্জাতিক নীতিমালার ভিত্তিতে সিপিসি গোল্ড সার্টিফিকেশন প্রদান করা হয়। এসব নীতিমালার মধ্যে রয়েছে গ্রাহকবান্ধব পণ্য ও পরিষেবা, অতিরিক্ত ঋণ প্রতিরোধ, স্বচ্ছতা, ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, গ্রাহকের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা, অভিযোগ নিষ্পত্তি ইত্যাদি।
স্বাগত বক্তব্যে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ পরিচালক অরিজয় ধর বলেন, ‘বিশ্বে এ বছর মাত্র আটটি প্রতিষ্ঠান এই স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পেয়েছে শুধু ব্র্যাক। মানুষের জন্য স্বচ্ছভাবে কাজ করে যাওয়ার ফলে ব্র্যাক এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা এক কোটির বেশি। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ নারী, যাঁদের ক্ষুদ্রঋণের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। আমরা তাঁদের কাছেই আগে পৌঁছাতে চেষ্টা করি।’
ক্ষুদ্রঋণের ৯৯ শতাংশ ১৮৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দেশে এখন ৯ শতাধিক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ সেবা দেয় মাত্র ১৮৬টি প্রতিষ্ঠান। বাকি ১ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে কীভাবে এতগুলো প্রতিষ্ঠান বেঁচে থাকবে। এটা তো সম্ভব নয়।’
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ঋণ নিলেই সবাই সফল হবে, এমন নয়। উদ্যোক্তা মানেই ঝুঁকি নেওয়া। বিশ্বের যেকোনো দেশে ব্যাংকঋণের ৩ থেকে ৫ শতাংশ খেলাপি হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। একইভাবে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) দেওয়া ঋণের ৮৫ শতাংশ আদায় হলেও তা ইতিবাচক। আর ক্ষুদ্রঋণ নেওয়া প্রান্তিক উদ্যোক্তা ব্যর্থ হলেও সে অর্থ দেশে থাকে। অন্য কোনো দেশে চলে যায় না।
বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে যে সাহায্য আসত, তা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউএসএআইডি ও ইউরোপীয় দেশগুলোর বিভিন্ন সংস্থা তাদের সাহায্য কমিয়ে দিয়েছে। তারা এখন তাদের নিরাপত্তা ও সামরিক খাতে খরচ বাড়িয়েছে।
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘একজন ঋণগ্রহীতা যদি পাঁচ সংস্থা থেকে ঋণ নেয়, সেটা বের করার আমাদের কোনো উপায় নেই। তবে শিগগিরই আমরা মাইক্রোফাইন্যান্স ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (এমএফসিআইবি) চালু করতে যাচ্ছি। এর ফলে ব্যাংকের মতো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোও ঋণ দেওয়ার আগে গ্রাহকের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারবে।’
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারী ঋণ নিলেও প্রকৃত অর্থে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন না। স্বামীর মাধ্যমে ঋণ নেওয়া ও কিস্তি পরিশোধ করা হয়। ফলে নারীর হাতে প্রকৃত দায়িত্ব বা ক্ষমতা তৈরি হয় না। তাই নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব বলেন, মাইক্রোফাইন্যান্স খাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় অনেক বেশি। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের যে ক্রেডিট লিমিট, সেটা পুরোটা দিতে পারে না। এ কারণে অনেক গ্রাহক আগ্রহ দেখাতে চান না। ফলে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ খুবই কম হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষ দ রঋণ অন ষ ঠ ন গ র হক
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রাহক সুরক্ষার জন্য দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি
দেশে মাইক্রোফাইন্যান্স বা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ক্লায়েন্ট প্রটেকশন সার্টিফিকেট (সিপিসি) গোল্ড’ অর্জন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। আন্তর্জাতিক সংস্থা মাইক্রোফাইন্যান্স রেটিং (এমএফআর) ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচিকে এ স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে সিপিসি গোল্ড স্বীকৃতি পেয়েছিল ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি।
এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রধান অতিথি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ ও মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ পরিচালক অরিজয় ধর।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, নির্ধারিত আটটি আন্তর্জাতিক নীতিমালার ভিত্তিতে সিপিসি গোল্ড সার্টিফিকেশন প্রদান করা হয়। এসব নীতিমালার মধ্যে রয়েছে গ্রাহকবান্ধব পণ্য ও পরিষেবা, অতিরিক্ত ঋণ প্রতিরোধ, স্বচ্ছতা, ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, গ্রাহকের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা, অভিযোগ নিষ্পত্তি ইত্যাদি।
স্বাগত বক্তব্যে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ পরিচালক অরিজয় ধর বলেন, ‘বিশ্বে এ বছর মাত্র আটটি প্রতিষ্ঠান এই স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পেয়েছে শুধু ব্র্যাক। মানুষের জন্য স্বচ্ছভাবে কাজ করে যাওয়ার ফলে ব্র্যাক এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা এক কোটির বেশি। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ নারী, যাঁদের ক্ষুদ্রঋণের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। আমরা তাঁদের কাছেই আগে পৌঁছাতে চেষ্টা করি।’
ক্ষুদ্রঋণের ৯৯ শতাংশ ১৮৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দেশে এখন ৯ শতাধিক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ সেবা দেয় মাত্র ১৮৬টি প্রতিষ্ঠান। বাকি ১ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে কীভাবে এতগুলো প্রতিষ্ঠান বেঁচে থাকবে। এটা তো সম্ভব নয়।’
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ঋণ নিলেই সবাই সফল হবে, এমন নয়। উদ্যোক্তা মানেই ঝুঁকি নেওয়া। বিশ্বের যেকোনো দেশে ব্যাংকঋণের ৩ থেকে ৫ শতাংশ খেলাপি হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। একইভাবে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) দেওয়া ঋণের ৮৫ শতাংশ আদায় হলেও তা ইতিবাচক। আর ক্ষুদ্রঋণ নেওয়া প্রান্তিক উদ্যোক্তা ব্যর্থ হলেও সে অর্থ দেশে থাকে। অন্য কোনো দেশে চলে যায় না।
বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে যে সাহায্য আসত, তা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউএসএআইডি ও ইউরোপীয় দেশগুলোর বিভিন্ন সংস্থা তাদের সাহায্য কমিয়ে দিয়েছে। তারা এখন তাদের নিরাপত্তা ও সামরিক খাতে খরচ বাড়িয়েছে।
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘একজন ঋণগ্রহীতা যদি পাঁচ সংস্থা থেকে ঋণ নেয়, সেটা বের করার আমাদের কোনো উপায় নেই। তবে শিগগিরই আমরা মাইক্রোফাইন্যান্স ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (এমএফসিআইবি) চালু করতে যাচ্ছি। এর ফলে ব্যাংকের মতো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোও ঋণ দেওয়ার আগে গ্রাহকের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারবে।’
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারী ঋণ নিলেও প্রকৃত অর্থে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন না। স্বামীর মাধ্যমে ঋণ নেওয়া ও কিস্তি পরিশোধ করা হয়। ফলে নারীর হাতে প্রকৃত দায়িত্ব বা ক্ষমতা তৈরি হয় না। তাই নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব বলেন, মাইক্রোফাইন্যান্স খাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় অনেক বেশি। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের যে ক্রেডিট লিমিট, সেটা পুরোটা দিতে পারে না। এ কারণে অনেক গ্রাহক আগ্রহ দেখাতে চান না। ফলে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ খুবই কম হয়।