বেলা ১টা ৪৫ মিনিট। শ্যামলীর সরকারি জমিলা আইনুল আনন্দ বিদ্যালয় ছুটি হয়েছে। দশম শ্রেণির চার ছাত্রী বিদ্যালয়ের সামনের দোকানে বসে ফুচকা খাচ্ছিল। পাশ ঘেঁষে পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান। কিশোর থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী ধূমপায়ী স্কুলের সামনে প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ল শিক্ষার্থীরা। তারা বলল, স্কুল ও শ্যামলী পার্ক ঘিরে চা-সিগারেটের দোকানে ছেয়ে গেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে সিগারেট বিক্রি হয়। চলে বাজে আড্ডা। তারা স্কুলের সামনে সিগারেটের দোকান দেখতে চায় না।

গতকাল রোববার ও গত ৪ মে রাজধানীর শ্যামলী, ফার্মগেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে ফুটপাত দখল করে চা-সিগারেট-পানের দোকান গড়ে উঠেছে। ফুটপাতে বেঞ্চ পেতে চলছে রমরমা ব্যবসা।

গতকাল শ্যামলীর সরকারি স্কুলটির সামনে সপ্তম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিল। স্কুল শেষে শ্যামলী পার্কের মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলে স্কুলটির শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়, ধূমপায়ীদের আড্ডার কারণে শ্যামলী পার্কের মাঠের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

শিশু-কিশোরেরা অনুকরণপ্রিয়। সে যখন বিদ্যালয় কিংবা খেলার মাঠ, পার্ক থেকে বের হয়েই দেখছে তার চেয়ে বড়রা প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন, এই দৃশ্য শিশুমনে প্রভাব ফেলে ও ধূমপানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে। আর একটি বিষয়, শিক্ষার্থীরা হাতের কাছেই সিগারেট পাচ্ছে। এ কারণে কৌতূহলের বশেও অনেক শিক্ষার্থী ধূমপানে আসক্ত হতে পারেবাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক সরদার আতিক

পার্কের মাঠে শিশুদের ও বড়দের আলাদা খেলার জায়গা রয়েছে। নারীদের বসার সুব্যবস্থা আছে। বসে খেলা উপভোগ করার জন্য গ্যালারিও রয়েছে। কিন্তু স্কুল ও পার্ক ঘিরে পান-সিগারেটের দোকান ও বখাটেদের আড্ডা এলাকার শিক্ষা ও বিনোদনের পরিবেশ বিঘ্নিত করছে।

দেশে বিদ্যমান স্থানীয় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের নির্দেশিকা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত পণ্যের বিক্রি নিষিদ্ধ। অথচ ঢাকা নগরজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গা ঘেঁষে অবাধে চলছে সিগারেট বিক্রি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক সরদার আতিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশু-কিশোরেরা অনুকরণপ্রিয়। সে যখন বিদ্যালয় কিংবা খেলার মাঠ, পার্ক থেকে বের হয়েই দেখছে তার চেয়ে বড়রা প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন, এই দৃশ্য শিশুমনে প্রভাব ফেলে ও ধূমপানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে। আর একটি বিষয়, শিক্ষার্থীরা হাতের কাছেই সিগারেট পাচ্ছে। এ কারণে কৌতূহলের বশেও অনেক শিক্ষার্থী ধূমপানে আসক্ত হতে পারে।’

রাজধানীর শেরেবাংলা বালক স্কুল, মিরপুরের বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফার্মগেটের সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তেজগাঁও কলেজের সামনে, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে প্রকাশ্যে সিগারেট বিক্রি হতে দেখা গেছে।

শ্রেণিকক্ষে ঢোকে সিগারেটের ধোঁয়া

দেশের প্রথিতযশা সংগীতবিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ছায়ানট ভবনটি ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে অবস্থিত। ভবনটির দুই পাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে পান-বিড়ি-সিগারেটের ৮ থেকে ১০টি দোকান। সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের সামনের অংশের উত্তর কোণ বরাবর পাশাপাশি দুটি দোকান ফুটপাতের ওপর বেঞ্চ পেতে দিব্যি সিগারেট বিক্রি চলছে। ধূমপায়ীরা ভবনের সামনেই জ্বলন্ত সিগারেট হাতে আড্ডা জমিয়েছেন।

দোকান দুটির তত্ত্বাবধায়ক নজরুল ইসলাম ও নাসির হোসেন জানালেন, তাঁরা জানেন ফুটপাত দখল করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে সিগারেট বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা উপায়হীন হয়ে ফুটপাতে দোকান খুলেছেন।

অর্ধশতাব্দী পার করা প্রতিষ্ঠানটির ভবনে সংগীত স্কুল ছাড়াও জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়, কণ্ঠশীলন এবং ব্রতচারী তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ছায়ানটের আঙিনায় বসে অপেক্ষা করছিলেন সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান। তাঁর দুই সন্তান নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে। তিনি বললেন, ‘ছায়ানট ভবন বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান। অথচ অবস্থা দেখুন, সিগারেটের ধোঁয়ায় আশপাশ ছেয়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই চলতে পারে না।’

স্কুলের মূল ফটকের পাশ ঘেঁষে পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ য র সরক র ফ টপ ত ছ য় নট র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

সবুজে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামে বিশাল পুরোনো বাড়ি, মালিক কে

বরগুনার আমতলীর সবুজে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রাম ঘোপখালী। সেই গ্রামে ঢুকলে হঠাৎ চোখে পড়ে বিশাল এক পুরোনো বাড়ি। গাছপালা আর নীরবতার আবরণে ঘেরা, যেন প্রকৃতির সঙ্গে লুকোচুরি খেলে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি।

একসময় এটি ছিল তিনতলা বাড়ি। তৃতীয় তলার বড় অংশ ধসে পড়ায় এখন কেবল দুইতলা দৃশ্যমান। ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামোর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা লাল-ধূসর ইটের এই ভবন যেন নিঃশব্দে উচ্চারণ করে চলেছে হারিয়ে যাওয়া কোনো ইতিহাসের ভাষ্য।

ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির আশপাশে সাত-আটটি পৃথক বাড়ি। সেখানে বসবাস করছেন এই বাড়ি নির্মাতার বংশধরেরা। বাড়িটির স্থাপত্যে ব্রিটিশ আমলের প্রভাব সুস্পষ্ট। খিলানযুক্ত বারান্দা, কারুকার্যপূর্ণ থাম ও অলংকৃত জানালাগুলো যেন সময়কে আটকে রেখেছে। বাড়িটির নিচতলার খিলান, মাঝের গম্বুজধর্মী কাঠামো এবং ওপরের জানালায় ব্যবহৃত কলামগুলো থেকে অনুমান করা যায়, এটি ব্রিটিশ আমলের।

বাড়ির ভেতরে ঢুকলে দেখা যায়, কাঠের দরজা-জানালাগুলো ভেঙে গেছে। ছাদ থেকে ঝরে পড়ছে মাটি ও ধুলা। ভবনটির ভেতরে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। একসময় যে কাঠের ছাদ শোভাবর্ধন করত, তা আজ ধসে পড়ার মতো অবস্থায়। জানালার রঙিন কাচ ভেঙে গেছে, খোদাই করা দরজাগুলো চূর্ণ–বিচূর্ণ।

ইট-চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত ভবনটির দেয়ালগুলো ২৪ ফুট চওড়া। ভবনটির প্রতিটি তলায় সুষমভাবে গঠিত খিলান ও জানালা আছে। নিচতলায় আছে ৭টি খিলান (অর্ধবৃত্তাকার), যা একটি দীর্ঘ বারান্দা তৈরি করেছে। এই খিলানগুলো রোমান-গথিক ধাঁচের, যা ব্রিটিশ আমলে প্রচলিত ছিল। প্রতিটি খিলানের ওপর রুফ-কার্নিশে ছোট ছোট অলংকরণ আছে।

ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামোর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এই ভবন যেন নিঃশব্দে উচ্চারণ করে চলেছে হারিয়ে যাওয়া কোনো ইতিহাসের ভাষ্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সবুজে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামে বিশাল পুরোনো বাড়ি, মালিক কে