ঢাকায় স্কুল ঘেঁষে সিগারেটের দোকান, শিক্ষার পরিবেশে বিঘ্ন
Published: 23rd, June 2025 GMT
বেলা ১টা ৪৫ মিনিট। শ্যামলীর সরকারি জমিলা আইনুল আনন্দ বিদ্যালয় ছুটি হয়েছে। দশম শ্রেণির চার ছাত্রী বিদ্যালয়ের সামনের দোকানে বসে ফুচকা খাচ্ছিল। পাশ ঘেঁষে পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান। কিশোর থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী ধূমপায়ী স্কুলের সামনে প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ল শিক্ষার্থীরা। তারা বলল, স্কুল ও শ্যামলী পার্ক ঘিরে চা-সিগারেটের দোকানে ছেয়ে গেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে সিগারেট বিক্রি হয়। চলে বাজে আড্ডা। তারা স্কুলের সামনে সিগারেটের দোকান দেখতে চায় না।
গতকাল রোববার ও গত ৪ মে রাজধানীর শ্যামলী, ফার্মগেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে ফুটপাত দখল করে চা-সিগারেট-পানের দোকান গড়ে উঠেছে। ফুটপাতে বেঞ্চ পেতে চলছে রমরমা ব্যবসা।
গতকাল শ্যামলীর সরকারি স্কুলটির সামনে সপ্তম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিল। স্কুল শেষে শ্যামলী পার্কের মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলে স্কুলটির শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়, ধূমপায়ীদের আড্ডার কারণে শ্যামলী পার্কের মাঠের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।
শিশু-কিশোরেরা অনুকরণপ্রিয়। সে যখন বিদ্যালয় কিংবা খেলার মাঠ, পার্ক থেকে বের হয়েই দেখছে তার চেয়ে বড়রা প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন, এই দৃশ্য শিশুমনে প্রভাব ফেলে ও ধূমপানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে। আর একটি বিষয়, শিক্ষার্থীরা হাতের কাছেই সিগারেট পাচ্ছে। এ কারণে কৌতূহলের বশেও অনেক শিক্ষার্থী ধূমপানে আসক্ত হতে পারেবাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক সরদার আতিকপার্কের মাঠে শিশুদের ও বড়দের আলাদা খেলার জায়গা রয়েছে। নারীদের বসার সুব্যবস্থা আছে। বসে খেলা উপভোগ করার জন্য গ্যালারিও রয়েছে। কিন্তু স্কুল ও পার্ক ঘিরে পান-সিগারেটের দোকান ও বখাটেদের আড্ডা এলাকার শিক্ষা ও বিনোদনের পরিবেশ বিঘ্নিত করছে।
দেশে বিদ্যমান স্থানীয় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের নির্দেশিকা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত পণ্যের বিক্রি নিষিদ্ধ। অথচ ঢাকা নগরজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গা ঘেঁষে অবাধে চলছে সিগারেট বিক্রি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক সরদার আতিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশু-কিশোরেরা অনুকরণপ্রিয়। সে যখন বিদ্যালয় কিংবা খেলার মাঠ, পার্ক থেকে বের হয়েই দেখছে তার চেয়ে বড়রা প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন, এই দৃশ্য শিশুমনে প্রভাব ফেলে ও ধূমপানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে। আর একটি বিষয়, শিক্ষার্থীরা হাতের কাছেই সিগারেট পাচ্ছে। এ কারণে কৌতূহলের বশেও অনেক শিক্ষার্থী ধূমপানে আসক্ত হতে পারে।’
রাজধানীর শেরেবাংলা বালক স্কুল, মিরপুরের বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফার্মগেটের সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তেজগাঁও কলেজের সামনে, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে প্রকাশ্যে সিগারেট বিক্রি হতে দেখা গেছে।শ্রেণিকক্ষে ঢোকে সিগারেটের ধোঁয়া
দেশের প্রথিতযশা সংগীতবিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ছায়ানট ভবনটি ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে অবস্থিত। ভবনটির দুই পাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে পান-বিড়ি-সিগারেটের ৮ থেকে ১০টি দোকান। সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের সামনের অংশের উত্তর কোণ বরাবর পাশাপাশি দুটি দোকান ফুটপাতের ওপর বেঞ্চ পেতে দিব্যি সিগারেট বিক্রি চলছে। ধূমপায়ীরা ভবনের সামনেই জ্বলন্ত সিগারেট হাতে আড্ডা জমিয়েছেন।
দোকান দুটির তত্ত্বাবধায়ক নজরুল ইসলাম ও নাসির হোসেন জানালেন, তাঁরা জানেন ফুটপাত দখল করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে সিগারেট বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা উপায়হীন হয়ে ফুটপাতে দোকান খুলেছেন।
অর্ধশতাব্দী পার করা প্রতিষ্ঠানটির ভবনে সংগীত স্কুল ছাড়াও জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়, কণ্ঠশীলন এবং ব্রতচারী তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
ছায়ানটের আঙিনায় বসে অপেক্ষা করছিলেন সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান। তাঁর দুই সন্তান নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে। তিনি বললেন, ‘ছায়ানট ভবন বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান। অথচ অবস্থা দেখুন, সিগারেটের ধোঁয়ায় আশপাশ ছেয়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই চলতে পারে না।’
স্কুলের মূল ফটকের পাশ ঘেঁষে পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক শ য র সরক র ফ টপ ত ছ য় নট র স মন
এছাড়াও পড়ুন:
চিকিৎসক-স্থাপনা কিছুই নেই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে
সখীপুর উপজেলায় ছয়টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর মধ্যে দুটিতে নেই কোনো স্থাপনা। চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনটিতেই নেই চিকিৎসা কর্মকর্তা। স্থাপনাবিহীন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুই চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রেষণে রয়েছেন অন্য কর্মস্থলে। চলমান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সেবা দিচ্ছেন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, প্রসূতিবিদ ও ফার্মাসিস্ট।
বড়চওনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র কার্যালয়ের বেহাল অবস্থা। দেখলে মনে হবে পরিত্যক্ত। তবুও উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (সেকমো) ও ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৮০ শতাংশ জমিই দখল হয়ে গেছে। বাকি ২০ শতাংশেও নেই সীমানা প্রাচীর। আবাসিক ভবনটিও বসবাস অযোগ্য। চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই ৮-১০ বছর। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে এমন তথ্য-চিত্র পাওয়া গেছে।
বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে কাদা ও ময়লার স্তূপ জমে আছে। হাটের আবর্জনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির আশপাশেই ফেলা হয়। ফলে স্থাপনার চারপাশেই দুর্গন্ধ। ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ। দেয়াল ফেটে গেছে। টিনের চাল মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। দরজা-জানালা ভাঙা। বৃষ্টি নামলেই ঘরের ভেতরে পানি জমে। ফলে কক্ষের ভেতর সংরক্ষণে রাখা কাগজ ও আসবাব ভিজে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারটি সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী। আবাসিক ভবনটিও এক যুগ ধরে বসবাসের অযোগ্য। ভেতরে পোকা-মাকড় বাসা বেঁধেছে। আশপাশ ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে।
সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা জামিনি আক্তার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস প্রেষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকায় কর্মরত। এ ছাড়া বহেড়াতৈল কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা মরিয়ম আক্তার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, স্থাপনাবিহীন যাদবপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা জান্নাত আরা জ্যোতি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ও স্থাপনাবিহীন হাতিবান্ধা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা শামীমা আক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া বাঘেরবাড়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা শামসুল আলম নিজ কর্মস্থলেই কাজ করছেন।
সেবা নিতে আসা নুরভানু নামে এক হাঁপানি রোগীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিনিয়তই এ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসি। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য সখীপুর হাসপাতাল অথবা দূরে কোথাও যেতে হয়। গরিব হওয়ায় অন্যত্র যাওয়ার সামর্থ্য নেই।’
বড়চওনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি বেহাত হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা জমির উদ্দিন জানান, জমিটি উদ্ধার করে সীমানা প্রাচীর ও ভবন নির্মাণের দাবি তাদের। তাঁর অভিযোগ, এ সেবা কেন্দ্রে গত ৮-১০ বছরে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তার দেখা মেলেনি।
বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত সেকমো আবদুল মালেক সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, ‘ডাক্তার ও অফিস সহায়ক না থাকায় তাদের কাজ ফার্মাসিস্ট ও আমাকেই করতে হচ্ছে। আবাসিক ভবন পরিত্যক্ত থাকায় ১২ কিলোমিটার দূরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে।’ তাঁর দাবি, প্রতিদিন এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৮০ থেকে শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেহানা পারভীনের ভাষ্য, জমিটি উদ্ধারে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসা কর্মকর্তাদের সংযুক্তি বাতিল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর আশা, শিগগিরই বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হবে।