ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ক্রিয়াশীল অন্তত আটটি ছাত্র সংগঠন তাদের কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে নিজেদের কার্যালয় বলে দাবি করে। তাদের এমন কর্মকান্ড আইনগতভাবে কতটা বৈধ ও গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। নতুন বাংলাদেশে সংগঠনগুলোর এমন দাবিতে ক্ষুব্ধ রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীরা। 

সম্প্রতি সংগঠনগুলোর দেওয়া বিভিন্ন বিবৃতি ও নতুন কমিটির ঘোষণাপত্র অনুসন্ধান করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

মধুর ক্যান্টিনকে নিজেদের কার্যালয় হিসেবে দাবি করা সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’। 

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইলে ৩ মাদরাসা শিক্ষার্থী নিখোঁজ, উ‌দ্বিগ্ন প‌রিবার

শাবিপ্রবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ৪ দিনের রিমান্ডে ২ যুবক

গত ২০ জুন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বাংলা কলেজ সংসদের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণাপত্রে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে দাবি করা হয়েছে।

গত ১০ জুন ঢাবি বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ১৮ জুন ঢাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী), ১১ জুন ঢাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), ৫ মার্চ বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, ২১ মে ঢাবি ছাত্র ফেডারেশন, ৬ মে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও ১ জুন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের দেওয়া বিবৃতিতে কার্যালয় বা ঠিকানা হিসেবে মধুর ক্যান্টিন দাবি করা হয়েছে। 

বামপন্থী ছাত্র সংগঠন গুলোর জোট গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটে ‘বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ’ অন্তর্ভুক্ত।

২০২২ সালের ২৬ মে ‘আট ছাত্র সংগঠন’ এর ব্যানারে দেওয়া এক বিবৃতিতেও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে দাবি করেছে। ওই আট ছাত্র সংগঠনের ভিতরে ছাত্র ইউনিয়নও অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর ‘প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ’ ব্যানারে বামপন্থী নয়টি ছাত্র সংগঠনের দেওয়া বিবৃতিতেও কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিন দাবি করা হয়েছে। 

ঢাবির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, “আমরা কোন রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয় বলতে বুঝি, যেখানে ওই সংগঠনের দাপ্তরিক কার্যাবলী সম্পাদিত হয়ে থাকে। মধুর ক্যান্টিন হলো সব শিক্ষার্থীদের জন্য চা-কফির সঙ্গে আলাপচারিতা ও বসে সময় কাটানোর জায়গা। এটা রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সব শিক্ষার্থীদের জন্যই সমান অধিকারের জায়গা। এটাকে কোনো ছাত্র সংগঠন তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্যপারে নির্দেশনা কী তা অস্পষ্ট থেকে যায়।”

তিনি বলেন, “আদৌ মধুর ক্যান্টিনকে কি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে? উত্তর হবে ‘না’। তাহলে মধুর ক্যান্টিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠিত কার্যকলাপের জায়গা নয়।”

তিনি আরো বলেন, “যদিও ঢাবির ছাত্র সংগঠনগুলো অঘোষিতভাবেই দীর্ঘকাল থেকেই মধুর ক্যান্টিনে তাদের রাজনৈতিক আলাপচারিতা, সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভা করে থাকে। তার মানে এই নয় যে, কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই একাধিক রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন মধুর ক্যান্টিনকে তাদের রাজনৈতিক প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এটা সুস্পষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি বা নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।”

ঢাবির সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক প্রান্ত মাহমুদ বলেন, “ঢাবির মধুর ক্যান্টিন শুধু বিভিন্ন দল, মত ও পথের রাজনৈতিক আড্ডা হিসেবে পরিচিত ছিল—এই ধারণাটি একপাক্ষিক ও অসম্পূর্ণ। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এই ক্যান্টিন ছিল তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি, নবীন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের চিন্তা বিনিময়ের প্রাঙ্গণ। এখানে শিল্প, সাহিত্য, নাটক, সিনেমা কিংবা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে বহু আলাপ-আলোচনা হয়েছে, মতের অমিল হলেও চিন্তার বহুত্ব ছিল একটানা।”

তিনি বলেন, “দুঃখজনকভাবে, আজ মধুর ক্যান্টিনে সেই সাংস্কৃতিক-সাহিত্যিক প্রাণ নেই বললেই চলে। এখন কিছু ব্যক্তি মধুর কান্টিনকে শুধুই রাজনৈতিক সংগঠনের দাপ্তরিক কার্যলয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। আমার মতে, এটা মধুর ক্যান্টিনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে সংকুচিত করে ফেলছে। আমরা চাই, এই প্রজন্ম রাজনৈতিক ফোবিয়াকে অতিক্রম করে এক বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চিন্তার চর্চা হোক। মধুর ক্যান্টিন হোক মুক্ত আলোচনার ক্ষেত্র, যেখানে রাজনীতি সঙ্গে থাকবে সাহিত্য, শিল্প, সমসাময়িক চিন্তার সমান জায়গা।”

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে অফিসের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করলে আপত্তি নেই আমাদের। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মধুর ক্যান্টিন সংস্কার করে সব ছাত্র সংগঠনের জন্য আলাদা আলাদা স্পেস তৈরি করে দিলে গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির চর্চা ও বিকাশ হবে।”

জানতে চাইলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “এটা তো অলংকারিক কার্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়। যে কোনো সংবাদ সম্মেলন থেকে শুরু করে আলোচনা, মতবিনিময়ের ইতিহাস মধুর ক্যান্টিনে। সেই জায়গা থেকে আমরাও এটা করেছি আর কী। এটা একটা অলংকারিক কার্যালয় আমরা চিন্তা করতেই পারি। আমরা মনে করছি এটা একটি ঐতিহাসিক জায়গা, সেই জায়গা থেকে আমরা এটি নির্ধারণ করেছি।”

ঢাবি ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ঠিকানাটা আমরা সব সংগঠনই এভাবে লিখে আসছি। কারণ সবাই মধুর ক্যান্টিনে থাকে, আড্ডা দেয়। এটা অফিস না, এটা আগে থেকেই করে আসছে.

আর কি।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) আহ্বায়ক মুক্তা বাড়ৈ বলেন, “ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও মধুর ক্যান্টিনের টেবিলগুলো সেখানে কিন্তু তারা বসে। এটা কারো কার্যালয় না। প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা কার্যালয় থাকে। এটা (মধুর ক্যান্টিন) কারো সাংগঠনিক কার্যালয় বলে আমরা জানি না। এমন যদি কেউ দাবি করে, সেটা আমরা ঠিকও মনে করি না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার মিসেস ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এখন পর্যন্ত এ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করিনি। মধুর ক্যান্টিনের বিষয় নিয়ে কিছুদিন পরে কাজ শুরু করব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এই স্থাপনাগুলো দেখভাল করে আমাদের এস্টেট অফিস। আমি এস্টেট অফিসের সঙ্গে কথা বলব, তারা মধুর ক্যান্টিনের সঙ্গে কথা বলুক। তারপরে আমি এটাতে হস্তক্ষেপ করব। কারণ আমি চাই, যার যেটা দায়িত্ব সে সেটা করুক।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণত ন ত র ক ছ ত র ছ ত র স গঠন র র জন ত ক স র আহ ব য ক স গঠনগ ল র র জন ত ব মপন থ দ বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

চাকসু নির্বাচন: হলের লড়াইয়েও ছাত্রদল-শিবির

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন চাকসুর হল সংসদ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মধ্যে। ছাত্রদের ৯ হলের ৭টিতে ছাত্রশিবির পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। ছাত্রদলও একে একে হলে নিজেদের প্রার্থী তালিকা সাজাচ্ছে। বামধারার সংগঠনগুলো কোনো হলে প্যানেল দাঁড় করাতে পারছে না। ফলে হলভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছবিটা ক্রমেই দুই সংগঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আসছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলা-হামলার মুখে ক্যাম্পাসে ঠিকমতো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয় ২০২৩ সালের আগস্টে। কমিটিতে পাঁচজন সদস্য আছেন। রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার পর ছাত্রদল নিয়মিত ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশের আয়োজন করছে। তবে হলগুলোতে ছাত্রদলের কোনো কমিটি নেই।

অন্যদিকে বিগত সরকারের আমলে ২০১৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি ছাত্রশিবির। পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার পর তারা নানা কর্মসূচি পালন করেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ছাত্র হলেই সংগঠনটির কমিটি রয়েছে।

জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, শুধু অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হল ও মাস্টারদা সূর্য সেন হলে তাঁরা প্যানেল দেননি। বাকি হলগুলোতে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেওয়া হয়েছে।

আগামী ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

চাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইতিমধ্যে ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। আর হল সংসদে লড়তে ছাত্রশিবিরই প্যানেল ঘোষণা করেছে। ১৪টি হলে (ছাত্রীদের ৫টি) নির্বাচন করতে ৪৮১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে ছাত্র হলে ৩৫৬ জন ও ছাত্রী হলে ১২৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রতিটি হলে ভিপি ও জিএসসহ ১৪টি করে পদ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির ছাড়াও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্র মজলিস, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধ।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলে প্যানেল দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের। বাকিদের সব হলে প্যানেল দেওয়ার অবস্থা নেই। ফলে হল সংসদ নির্বাচনে মূল লড়াই হবে এ দুই সংগঠনের প্রার্থীদের মধ্যে। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপরও নজর থাকবে ভোটারদের।

অন্যদিকে ছাত্রীদের প্রীতিলতা হলে প্যানেল ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে প্যানেল দিয়েছেন পাহাড়ি ছাত্রীরা। তাঁদের প্যানেলের নাম ‘হৃদ্যতার বন্ধন’। বাকি তিন হলে এখনো কেউ প্যানেল ঘোষণা করেনি।

ছাত্রদল এখনো ভাবছে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির ‘চাবি’ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) হাতে ছিল। সংগঠনটি দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাত। একটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী, আরেকটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। এ দুই পক্ষই হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করত। ফলে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে হলে কোনো কার্যক্রম চালাতে পারেননি। ছাত্রদল বলছে, কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারার কারণে হলে তারা কমিটিও দিতে পারেনি।

হলে প্যানেল দেওয়ার বিষয়ে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন প্রথম আলোকে বলেন, এক-দুই দিনের মধ্যে হলগুলোতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল তাঁরা ঘোষণা করবেন। এখন অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, হল সংসদে নির্বাচন করার জন্য একাধিক নেতা-কর্মী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কাকে কোন পদে রাখা হবে, এসব নিয়ে এখনো ভাবছেন তাঁরা। আর কেন্দ্রীয় সংসদে লড়তে ইতিমধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।

বাম সংগঠনগুলোর দুর্বলতা

বিশ্ববিদ্যালয়ে বামধারার ছাত্রসংগঠনগুলো দুই ভাগে বিভক্ত। এর একটি ভাগে রয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও জনসংহতি সমিতি-সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আরেক ভাগে রয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

কেন্দ্রীয় সংসদে লড়তে ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্যানেল ঘোষণা করেছে। তাদের প্যানেলের নাম ‘দ্রোহ পর্ষদ’। অন্যদিকে বাকি বামধারার সংগঠনগুলো ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ নামের প্যানেল দিয়েছে। তবে কোনো বাম সংগঠনই হলে প্যানেল দিতে পারছে না। তারা বলছে, ছাত্রলীগের দাপটের কারণে তারাও হলে তেমন কার্যক্রম চালাতে পারেনি। এখনো তাদের সামনে নানা ধরনের বাধা রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা তারা করে চলেছে। সীমিত সামর্থ্য নিয়েই গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। তবে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে হল সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারছেন না কেউ।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটি হয়েছিল ২০২২ সালে। ওই কমিটিতে মাত্র ৭ জন সদস্য আছেন। কমিটিতে পদ রয়েছে ১৪টি। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষ্মী চাকসুতে ‘দ্রোহ পর্ষদ’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাম সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই হলে প্যানেল দিতে পারছে না। নিয়মিত নির্বাচনের আয়োজন হলে ভবিষ্যতে হলেও প্যানেল দেওয়া হবে।

ভিপি-জিএস হয়েছিলেন বাম নেতারা

সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ৩৫ বছর আগে, ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ওই নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ। তিনি পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৯৬৩ ভোট। পাশাপাশি শাহ আমানত হল থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা জয়জীত কুমার বড়ুয়া। আলাওল হলের জিএস হয়েছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের ইলিয়াস কবীর। শামসুন্নাহার হলে ভিপি হয়েছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের রুবিনা মাহফুজ। অবশ্য সে সময় বাম সংগঠনগুলো, ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ ১২টি সংগঠন জোট বেঁধে নির্বাচন করেছিল। অপর প্রান্তে ছিল ছাত্রশিবির।

চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হলে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলোর দাপট দেখা গেছে। বাম সংগঠন হলে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ তেমন একটা পায়নি। এই কারণে হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ ছাড়া হলে হলে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলে বাম সংগঠনগুলোর প্রভাব বাড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউজিল্যান্ডে সন্তানদের হত্যা করে স্যুটকেসে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় মা দোষী সাব্যস্ত
  • আজ শ্রীলঙ্কাকে হারানো পাকিস্তানের জন্য একটু কঠিন
  • শাকসু নির্বাচন : ক্যাম্পাসে রাজনীতি চালুর পর ‘যৌক্তিক সময়’ চায় ছাত্রদল, পরে নির্বাচন
  • চাকসু নির্বাচন: হলের লড়াইয়েও ছাত্রদল-শিবির
  • বাণিজ্য সংগঠনের পর্ষদের মেয়াদ, চাঁদাসহ নানা বিধান কোম্পানি আইনের সঙ্গে মিলছে না