এনসিসির সংশোধিত প্রস্তাবে একমত জামায়াত
Published: 25th, June 2025 GMT
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নাম ও কাঠামো পরিবর্তনের যে প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দিয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একমত পোষণ করেছে। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিরতিতে এ কথা জানান আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, তাঁরা লিখিতভাবে কমিশনে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে প্রস্তাবিত এনসিসিতে না রাখার কথা বলেছিলেন। ঐকমত্য কমিশন সেটার (এনসিসি) নাম ও কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব (সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি) দিয়েছে। আজকের আলোচনায় একটি দল ছাড়া সবাই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। জামায়াতে ইসলামীও এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, তিনটি দল ছাড়া সবাই এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন—এ বিষয়ে একমত হয়েছে। বিষয়টি পরপর দুই মেয়াদের নয়, সর্বোচ্চ ১০ বছর। তবে কোনো কারণে মেয়াদ পূর্তির আগেই সংসদ ভেঙে গেলে এটি তিন মেয়াদও হতে পারে।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, আজকের বৈঠকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সাম্য, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা—এ চারটি বিষয় সন্নিবেশিত করা হয়। এটাতে কমিউনিস্ট পার্টি ও কয়েকটি বাম দল ছাড়া আর সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে। পঞ্চম সংশোধনী যেটি আছে, তাঁরা বলেছেন সেটা থাকবে। পঞ্চদশ সংশোধনী যেটা আওয়ামী লীগ করেছিল, সেটা বাতিল হয়ে যাবে। এর সঙ্গে নতুন উল্লিখিত শব্দগুলো সংযোজিত হবে। এ বিষয়ে অধিকাংশই একমত।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। এ দেশের জনগণের সেন্টিমেন্ট হচ্ছে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, আস্থা, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এগুলো সংবিধানে রাখার পক্ষে তাঁরা। সে অনুযায়ীই তাঁরা তাদের মত দিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, এটি সংযোজন করা অপরিহার্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ঐকমত য এনস স
এছাড়াও পড়ুন:
কমিশনে কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না, ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে: আমীর খসরু
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কী সিদ্ধান্ত হলো, সেটি দেখার বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘৩১ দফার মধ্যে সংস্কারের সম্পূর্ণ একটা রূপরেখা আছে। তো তারা সংস্কার চাক, আর না চাক। বলুক, আর না বলুক। আমরা সবাই মিলে যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিলাম, আমরা কিন্তু আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। ওই কমিশন কী বলে, ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো, এটাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি কামাল হোসেন। তিনি অসুস্থ থাকায় তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু বলেন, অন্য কারও (রাজনৈতিক দল) যদি কিছু থাকে, তারাও জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারে।...ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসেন। সংসদে আপনি পরিবর্তন করেন, এটাই তো নিয়ম। কিন্তু আপনি জোর করে ঢাকা শহরে বসে, আপনার দাবি মানতে হবে, এটার জন্য আবার ঐকমত্য কমিশনকে ব্যবহার করবেন, অথবা সরকারের ব্লেসিং (আশীর্বাদ) নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এটার জন্য তো বাংলাদেশের মানুষ এত ত্যাগস্বীকার করেনি।
উল্লেখ্য, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করাসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ জামায়াতসহ আন্দোলনরত আটটি দলরে পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর মৎস্য ভবন মোড়ে এক ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ১১ নভেম্বরের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব দাবি মেনে নিতে সময় বেঁধে দেন। তা না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
গণভোট বর্তমান সংবিধানের পরিপন্থী উল্লেখ করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের এই নেতা বলেন, ‘এই সংবিধানে গণভোটের কোনো প্রভিশন (অনুমতি/বিধান) নেই, ক্লিয়ারলি (পরিষ্কার)। আপনার যদি গণভোট করতে হয়, তাহলে এই সংবিধান পরিবর্তন করে গণভোটের প্রভিশন আগে আনতে হবে। তাহলে এই পরিবর্তনটা আপনাকে কোথায় করতে হবে? সংসদে করতে হবে এবং সংসদ হচ্ছে জনগণের রিপ্রেজেন্টেটিভ (প্রতিনিধি)।’
গণভোটের ব্যাপারে বিএনপি উদারতা দেখানো ঠিক হয়নি বলে জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশে সহনশীলতা ও রাজনৈতিক ঐক্যের প্রেক্ষাপটে এই গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে, তা–ও নির্বাচনের দিন। কিন্তু আসলে নির্বাচনের দিনও তো গণভোট হতে পারে না। এটা তো বিএনপির উদারতা এবং এই উদারতাটা দেখানো বিএনপির ঠিক হয়নি। কারণ, এটা সাংবিধানিকভাবে কারেক্ট (সঠিক) না। এটা নৈতিকভাবে কারেক্ট না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কারেক্ট না যে উদাহরণটা দেখিয়েছে, এটার জন্য আজকে আমরা সমস্যা ফেস করতেছি।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নারী পক্ষের সভাপতি শিরীন হক প্রমুখ।