রাজধানীর খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরকার জানিয়েছে, রেলের জমিতে নির্মিত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ আয়োজকরা সরিয়ে না নেওয়ায় উচ্ছেদ করা হয়েছে। মণ্ডপের প্রতিমা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেলের পাঁচ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে।

তবে সরকারের এ বক্তব্যকে গ্রহণ না করে শুক্রবার শ্রী শ্রী সার্বজনীন মন্দির ভাঙার অভিযোগে প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণী জোট। মহাজোট নেতারা দাবি করেন, ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র কুমার চৌধুরীর জমিতে রেললাইন নির্মাণ হওয়ায় মন্দির নির্মাণের অধিকার রয়েছে হিন্দুদের।

ভারতও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে উল্টো অবৈধ জমি ব্যবহারের যুক্তিতে ভাঙার অনুমতি দিয়েছে। আমরা অত্যন্ত হতাশ।

যা ঘটেছে 
গত বছরের অক্টোবরে খিলক্ষেত রেল গেইট এলাকায় রেলের জমিতে পূজা মণ্ডপ স্থাপন করে স্থানীয়রা। সম্প্রতি জায়গাটি টিন দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে মন্দিরের সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এতে লেখা হয়েছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক অর্পনা রায় দাস মন্দিরের প্রধান উপদেষ্টা। অর্পনা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে।

সাইনবোর্ড লাগানোর পর স্থানীয় শ’খানেক মুসলমান গত মঙ্গলবার রাতে মন্দির স্থাপন না করার দাবিতে বিক্ষোভ করে। টিনের বেষ্টনী অপসারণে উপস্থিত পুলিশকে চাপ দেয়। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার পর গত বৃহস্পতিবার রেলওয়ে খিলক্ষেত রেল গেইট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মন্দিরের সাইনবোর্ড লাগানো টিনে বেষ্টনী বুলডোজার দিয়ে অপসারণ করা হচ্ছে। আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে মাথাবিহীন একটি প্রতিমা পড়ে রয়েছে। 

সরকারের জবাব
এতে হিন্দু ধর্মের অবমাননা হয়েছে অভিযোগে সমালোচনা হয় সামাজিক মাধ্যমে। আজ রেল উপদেষ্টার বরাতে প্রধান উপদেষ্টার রেল কর্তৃপক্ষের বরাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। গত বছর দুর্গাপূজার সময় কিছু ব্যক্তি অনুমতি ছাড়াই খিলক্ষেতে রেলের জমিতে একটি পূজা মণ্ডপ তৈরি করে। পূজা শেষে মণ্ডপ সরিয়ে নেওয়ার শর্তে অনুমতি দেয় রেল। পূজার আয়োজকরা মণ্ডপ সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পূজা শেষে বারবার বলার পরও তারা মণ্ডপটি সরিয়ে নেয়নি। উল্টো স্থায়ী মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এ প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হলেও পূজার আয়োজকরা কর্ণপাত করেননি। এ পরিস্থিতিতে জনসাধারণের সম্পত্তি অবৈধ দখলমুক্ত করতে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার খিলক্ষেত এলাকায় রেলের জমি থেকে অস্থায়ী মণ্ডপটি সরিয়ে ফেলা হয়।

উপদেষ্টা জানান, প্রায় শতাধিক দোকানপাট, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, কাঁচাবাজার উচ্ছেদ করা হয়েছে। অস্থায়ী মন্দিরের প্রতিমা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।

বিক্ষোভ প্রতিবাদ
গতকাল প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী আমলে একের পর এক হিন্দু নির্যাতন হয়েছে সরকারি মদতে। কিন্তু সরকারের সরাসরি অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। এবার দেখেছি পুলিশ নিজে মন্দিরের টিনের বেড়া খুলেছে। সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে মন্দির ভেঙেছে, বুলডোজার দিয়ে প্রতিমা গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

গোবিন্দ প্রামাণিক প্রশ্ন তুলে বলেন, রেলের জমিতে শত শত অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সেগুলো না সরিয়ে হিন্দু মন্দির ধ্বংস কেন? এর মানে সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ও ওপর মহলে মৌলবাদের আখড়া তৈরি হয়েছে। ভাওয়ালের রাজার জমিতে রেললাইন হয়েছে। তাই সেখানে মন্দির অবৈধ নয়। হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দীনবন্ধু রায়সহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন মানববন্ধনে।

আজ শাহবাগে সনাতনী জোটের মানববন্ধন থেকে বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান না হলে খিলক্ষেত অভিমুখে লংমার্চ করা হবে। কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের পক্ষে প্রদীপ কান্তি দে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ লক ষ ত মন দ র র উপদ ষ ট সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রির ঘটনায় ঝাড়ু-জুতা মিছিল

সোনারগাঁয়ে পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে গোপনে বিক্রির ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবীতে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেছেন বিদ্যালয়ের বর্তমান–সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

রবিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট স্কুলের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অভিযুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া, সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম এবং একাধিক অভিযোগের মুখে থাকা প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তারা।

মানববন্ধনে সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, “এ ইউনিয়নকে যেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে মাসুম ও মনিরুজ্জামান নিজেদের ইচ্ছেমতো সব কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

তাদের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়। পরে এলাকাবাসী মালামাল ভর্তি গাড়ি আটক করে। কিন্তু এখন উল্টো ভালো মানুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”

সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লা বলেন, “একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল চুরি করে বিক্রি করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদের ইউনিয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

স্কুলের মতো পবিত্র জায়গায় দুর্নীতি ও অনিয়ম কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এলাকাবাসী রাতেই মালামাল আটকে দিয়ে প্রমাণ করেছে—এ এলাকার মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় ঐক্যবদ্ধ। আমরা চাই প্রশাসন যেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে।”

এলাকাবাসীরা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও পরিচালনা কমিটিতে সৎ-নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি।

মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী ঝাড়ু ও জুতা প্রদর্শন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম জানান, একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রণীত ভাবে আমাদের বিতর্কিত করতে বিক্রি করা মালামাল চুরির ঘটনা সাজিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে গতকাল মিটিং করেছি৷  

অভিযুক্ত বর্তমান কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া জানান, আমরা স্কুলের একটি কমিটি করে বিক্রি করেছি। তবেমাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোনো অনুমতি নেই নি। বিক্রি করার পর গাড়িতে উঠাতে রাত হয়ে যায়। এখানে কোনো চুরির ঘটনা ঘটে নি।  

উল্লেখ্য, গত (৯ সেপ্টেম্বর) শনিবার স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককের নির্দেশে রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে পঞ্চমীঘাট স্কুলের মালামাল বিক্রি করা হয়। যা স্থানীয়  এক ভাঙ্গারীর পিক-আপ ভ্যানে নেয়ার সময় স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন
  • নেত্রকোনায় সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • পদোন্নতি-নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ, আজ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের মানববন্ধন
  • ড্রামে ২৬ টুকরা লাশ, দ্রুত বিচারের দাবিতে বদরগঞ্জে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ
  • সিরাজগঞ্জে ‘যমুনা’ নামে নতুন উপজেলার দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন
  • পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে কুবিতে মানববন্ধন
  • সোনারগাঁয়ে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রির ঘটনায় ঝাড়ু-জুতা মিছিল
  • যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার ঢাবি অধ্যাপকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • তিন জেলায় বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন চেয়ে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধে মানুষের দুর্ভোগ