*অস্ট্রেলিয়ার  অভিবাসনে জুলাই থেকে কিছু  নতুন নিয২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে এসে অস্ট্রেলিয়া সরকার অভিবাসন নীতিতে আনছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন। আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া এই নতুন নিয়মগুলো প্রবাসীদের জীবন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞরা।১. ভিসা ফি ও বেতনের সীমা বৃদ্ধিনতুন নীতিমালা অনুযায়ী,ছাত্র ভিসার ফি বাড়ছে ১,৬০০ ডলার থেকে ২,০০০ ডলারস্পনসর ভিসার জন্য ন্যূনতম বেতন (টিএসএমআইটি) ৭৩,১৫০ থেকে ৭৬,৫১৫ ডলারবিশেষ দক্ষতাসম্পন্নদের বেতনসীমা ১,৩৫,০০০ থেকে ১,৪১,২১০ ডলারে উন্নীত

এই পরিবর্তন নিয়োগদাতাদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ালেও বিদেশি কর্মীদের জন্য এটি একটি ইতিবাচক সুরক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।২.

রাজ্যভিত্তিক মনোনয়নে সাময়িক স্থগিতাদেশঅধিকাংশ রাজ্য, যেমন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, কুইন্সল্যান্ড, ভিক্টোরিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং নর্দান টেরিটরি ইতিমধ্যেই নতুন মনোনয়ন আবেদন গ্রহণ বন্ধ করেছে।

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ও ক্যানবেরাও আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একই পথে হাঁটবে বলে জানা গেছে।

তবে অভিবাসন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে নতুন কোটা ঘোষণার পর আবার চালু হবে মনোনয়ন কার্যক্রম।৩. আঞ্চলিক এলাকায় ডামা ভিসার সুযোগ‘ডেজিগনেটেড এরিয়া মাইগ্রেশন এগ্রিমেন্ট’ বা ডামা ভিসার আওতায় আঞ্চলিক এলাকায় কাজের সুযোগ ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে।আবেদনকারীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা করা হয়েছে ৫৫ বছরইংরেজি ভাষা সম্পর্কে শর্তে রয়েছে নমনীয়তাদক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ডামা ভিসার আবেদন গত এক বছরে বেড়েছে বহু পরিমাণডামা ভিসা এখন শুধু আঞ্চলিক নয়, অনেকের জন্য স্থায়ী বসবাসের সম্ভাবনাময় পথ হয়ে উঠছে।৪. নতুন স্থায়ী ভিসা: ন্যাশনাল ইনোভেশন ভিসাঅস্ট্রেলিয়া চালু করতে যাচ্ছে একটি নতুন ধরনের স্থায়ী ভিসা, যা মূলত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিভাবান ব্যক্তিদের জন্য।দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া প্রথম এই ভিসার জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া চালু করেছেউদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকছে সাত স্তরের আবেদন পদ্ধতিআবেদনকারীর ব্যবসায়িক ধারণা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে—এমন প্রমাণ দাখিল করতে হবেপ্রয়োজন হবে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের অনুমোদনএই ভিসাটি মূলত প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও বিনিয়োগে দক্ষতা সম্পন্নদের জন্য।৫. ৪৮২ ভিসায় রিফিউজাল বেড়েছে ৪১%চলতি বছর ৪৮২ টেম্পোরারি স্কিলড ভিসায় আবেদন বাতিলের হার বেড়েছে ৪১ শতাংশ।

বাতিলের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে— মনোনীত পেশাটি বাস্তবিক চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ নয়।

যেমন, ছোট কোনো ক্যাফে থেকে ফুলটাইম শেফের জন্য ভিসা আবেদন করলে, অনেক সময় তা যথার্থ বিবেচিত হচ্ছে না।৬. অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শঅভিজ্ঞ অভিবাসন পরামর্শকদের মতে, এই পরিবর্তনগুলো অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালেও, সঠিক প্রস্তুতি ও সচেতন পরিকল্পনা থাকলে তা রূপ নিতে পারে সম্ভাবনায়।

তাঁরা বলছেন—এখনই স্কিল অ্যাসেসমেন্ট সম্পন্ন করুনইংরেজি পরীক্ষায় ভালো স্কোরের দিকে মনোযোগ দিনঅভিজ্ঞ পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিকল্পনা সাজানসব মিলিয়ে বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের পথ আগের তুলনায় কিছুটা কঠিন হচ্ছে। তবে যারা বাস্তবতা বুঝে, নিয়ম জানে ও নিজেকে প্রস্তুত করে এগোবে—তাদের জন্য এই পরিবর্তন হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার।

*লেখক: কাউসার খান, অভিবাসন আইনজীবী

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য নত ন ন

এছাড়াও পড়ুন:

সংলাপে বক্তারা: গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতার মানবিক উপস্থাপন দরকার

গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে ও মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপনের তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। আজ সোমবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে তাঁরা বলেন, গণমাধ্যম যদি প্রতিবন্ধিতাকে মানববৈচিত্র্য ও অধিকারের অংশ হিসেবে তুলে ধরে এবং সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা ভাঙতে ভূমিকা রাখে, তবে দেশের নীতি-পরিকল্পনা ও জনমানসে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

ইউনেসকো ঢাকা অফিসের সহযোগিতায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগবিষয়ক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমষ্টি আয়োজিত ‘গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধিতার অন্তর্ভুক্তি: সম্পাদকীয় নীতি ও চর্চা’শীর্ষক এক সংলাপে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় পর্যায়ের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও উন্নয়ন ব্যক্তিত্বরা এসব কথা বলেন।

ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমদের সঞ্চালনায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে ইউনেসকোর প্রতিনিধি সুজান ভাইজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহম্মদ হিরুজ্জামান। সমষ্টির নির্বাহী পরিচালক মীর মাসরুরুজ্জামান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। সংলাপে অংশ নেন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের প্রতিনিধি, প্রতিবন্ধী অধিকারবিষয়ক সংগঠনের সদস্য এবং উন্নয়ন ব্যক্তিত্বরা। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী–সমতা কার্যক্রমের আওতায় মিডিয়া ফেলোদের সম্মাননা স্মারক ও সনদ দেওয়া হয়। ফেলোশিপ পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন রেডিও পদ্মার আসাদুর রহমান, মাছরাঙা টিভির কাউসার সোহেলী, প্রথম আলোর মো. মঞ্জুরুল ইসলাম, ঢাকা ট্রিবিউনের নাওয়াজ ফারহিন অন্তরা, ডেইলি স্টারের নীলিমা জাহান ও ‘উইমেন আই২৪.কম’-এর রীতা ভৌমিক। এ ছাড়া একাত্তর টিভির শাহনাজ শারমীনকে মিডিয়া ফেলোশিপের মেন্টর হিসেবে বিশেষ সম্মাননা স্মারক ও সনদ দেওয়া হয়।

সুজান ভাইজ বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে সচেতন, সম্মানজনক ও সঠিক বর্ণনা তৈরি করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিহার্য। মিডিয়া সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দিতে পারে এবং সেই সামর্থ্য ব্যবহার করে প্রতিবন্ধিতাকে মানববৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে তুলে ধরতে হবে। তিনি আরও বলেন, নীতি ও সংবাদ তৈরির প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত হলে গণমাধ্যম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুযোগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী সহযোগী হয়ে উঠবে।

বিশেষ অতিথি মুহম্মদ হিরুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমকে শুধু প্রতিবেদন প্রকাশে নয়, বরং নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যেও অন্তর্ভুক্তিমূলক আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ, সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি এবং নীতি প্রণয়নে প্রতিবন্ধী সমতার দৃষ্টিভঙ্গি সংযুক্ত করা সময়ের দাবি।

রিয়াজ আহমদের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহ্‌নাজ মুন্নী, সাইট সেভার্সের ক্যাম্পেইন অ্যাডভাইজার অয়ন দেবনাথ, এ-টু-আইয়ের জাতীয় পরামর্শক ভাস্কর ভট্টাচার্য ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার ফারজানা রেজা। রিয়াজ আহমদ বলেন, অগ্রসর সমাজের নীতি হলো সবার একসঙ্গে বিকাশ। অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি শুধু প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, সব ধরনের প্রান্তিক মানুষেরা এর সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়বদ্ধতার জায়গায় আনার জন্য তৎপরতা চালাতে, তাদের এজেন্ডা বা ইশতেহারে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি বিবেচিত হচ্ছে কি না, তা নজরে রাখতে হবে।

সংলাপের শেষের দিকে উন্মুক্ত আলোচনার পর্ব ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ