মানসিক সংযোগ বা অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল হলো আমাদের মানসিক ও আচরণগত সেই ধরন, যা আমরা অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির সময় ব্যবহার করি। এই স্টাইল মূলত গড়ে ওঠে শৈশবে, বিশেষ করে মা-বাবা বা প্রধান অভিভাবকদের সঙ্গে আমাদের সংযোগের অভিজ্ঞতা থেকে। ছোটবেলা থেকেই অভিভাবকেরা কতটা সাড়া দিতেন, ভালোবাসতেন বা সহানুভূতি দেখাতেন, তার ওপর নির্ভর করে আমরা নিরাপদ, উদ্বিগ্ন, এড়িয়ে যাওয়া বা অগোছালো সম্পর্ক গড়ে তুলি। এর মধ্যে এড়িয়ে চলার মানসিকতা বা অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট এমন এক ধরন, যেখানে মানুষ ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলে ও আবেগ চেপে রাখে। বিস্তারিত জেনে রাখুন।

অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল কী

অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্টকে অবজ্ঞাসূচক মানসিক সংযোগও বলা হয়। মা-বাবা শিশুর সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করলেও আবেগপূর্ণ ভালোবাসা বা সহানুভূতি না দেখালে শিশুর মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য তৈরি হতে পারে।

এ ধরনের শিশু শিখে যায় যে কষ্ট পেলে সেটা গোপন রাখতে হবে, নিজের আবেগ নিজেকেই সামলাতে হবে। তারা বড় হয়ে স্বাধীন হতে চায়, অন্যের ওপর নির্ভর করতে চায় না। গভীর সম্পর্ক বা আবেগের ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলে। এই সংযোগের ধারা বড় বয়সেও থেকে যেতে পারে এবং প্রভাব ফেলে বন্ধুত্ব, প্রেম বা অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রে এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ২০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মনে করেন, তাঁদের অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট আছে এবং পুরুষদের মধ্যে এ প্রবণতা কিছুটা বেশি।

আরও পড়ুনশিশু-কিশোরেরা কেন সহিংস হয়ে উঠছে?২১ মে ২০২৫অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট কেন হয়

অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট সাধারণত তখনই তৈরি হয়, যখন শিশুর মা-বাবা খুব কড়া, আবেগহীন বা উপেক্ষাপূর্ণ আচরণ করেন। শিশুর কষ্ট বা আবেগের সময় তাঁরা সহানুভূতি না দেখিয়ে বলেন, ‘নিজেই সামলে নাও।’ শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের মতো শৈশবের মানসিক আঘাতও এই অ্যাটাচমেন্টের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু উদাহরণ দেখুন—

শিশুর কান্না উপেক্ষা করা।

আবেগ দেখানোকে দুর্বলতা ভাবা।

শিশুর সমস্যা নিয়ে হাসাহাসি করা।

ভালোবাসা বা স্পর্শ থেকে বিরত থাকা।

শিশুকে প্রশ্ন করতে না দিয়ে শুধু নিয়ম মানতে বাধ্য করা।

কখনো কখনো জেনেটিক কারণেও অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট হতে পারে। বিশেষ করে সিওএমটি নামের এক জিনের পরিবর্তন এ প্রবণতা বাড়াতে পারে।

অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট পুরোপুরি ঠেকানো না গেলেও, শিশুর মধ্যে নিরাপদ সংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আল্পস পর্বতমালায় বাড়ছে ভূমিকম্প

সারা বিশ্বে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে নানা মাত্রায় ভূমিকম্প হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া গেলেও ভূমিকম্পের নির্ভুল সতর্কবার্তা পাওয়া যায় না। তাই ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কে থাকেন অনেকেই। সাধারণত পৃথিবীর অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে ভূমিকম্প হলেও এবার ভূমিকম্পের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সংযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আল্পস পবর্তমালায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ গলে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানে ছোটখাটো ভূমিকম্প বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আল্পসের এলাকায় ছোটখাটো ভূমিকম্পের প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূকম্পের মতো কার্যকলাপের সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে দ্রুত হিমবাহ গলে যাচ্ছে। গলে যাওয়া বরফপানি ভূগর্ভস্থ ফল্ট লাইনে প্রবেশ করতে পারে। এতে কম্পনের ঝুঁকি বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুনগুগলের পাঠানো ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা কতটা নির্ভরযোগ্য১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিজ্ঞানীরা মন্ট ব্ল্যাংক পর্বতমালার হিমবাহ-আচ্ছাদিত শিখর গ্র্যান্ডেস জোরাসেসের নিচে ভূমিকম্পের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। ভূমিকম্পের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ২০১৫ সালের তাপপ্রবাহের পর ছোট ছোট ভূমিকম্পের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই কম্পনের কারণে হিমবাহের গলিত পানি গভীর শিলাস্তরে প্রবেশ করে। হিমবাহের পানির কারণে ভূতাত্ত্বিক ত্রুটি বেশি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঘন ঘন ও শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। প্রায়ই এক থেকে দুই বছরের বিরতিতে ভূমিকম্প দেখা যায়। বরফগলা পানি ধীরে ধীরে ফল্ট লাইন বরাবর চাপ তৈরি করে একটি ট্রিগার পয়েন্টে পৌঁছালে ভূমিকম্প হয়।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে চাপযুক্ত পানি ভূমিকম্পের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে। শুধু আল্পস পর্বতমালায় নয়, বরং হিমালয়ের মতো অন্যান্য হিমবাহযুক্ত অঞ্চলেও এমন প্রবণতা বাড়ছে। এসব ভূমিকম্পের কারণে মন্ট ব্ল্যাংক টানেলের মতো অবকাঠামো বড় হুমকিতে না পড়লেও ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আল্পস পর্বতমালায় বাড়ছে ভূমিকম্প