অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট কী এবং জীবনে এর কেমন প্রভাব পড়ে, জানেন?
Published: 1st, July 2025 GMT
মানসিক সংযোগ বা অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল হলো আমাদের মানসিক ও আচরণগত সেই ধরন, যা আমরা অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির সময় ব্যবহার করি। এই স্টাইল মূলত গড়ে ওঠে শৈশবে, বিশেষ করে মা-বাবা বা প্রধান অভিভাবকদের সঙ্গে আমাদের সংযোগের অভিজ্ঞতা থেকে। ছোটবেলা থেকেই অভিভাবকেরা কতটা সাড়া দিতেন, ভালোবাসতেন বা সহানুভূতি দেখাতেন, তার ওপর নির্ভর করে আমরা নিরাপদ, উদ্বিগ্ন, এড়িয়ে যাওয়া বা অগোছালো সম্পর্ক গড়ে তুলি। এর মধ্যে এড়িয়ে চলার মানসিকতা বা অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট এমন এক ধরন, যেখানে মানুষ ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলে ও আবেগ চেপে রাখে। বিস্তারিত জেনে রাখুন।
অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল কীঅ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্টকে অবজ্ঞাসূচক মানসিক সংযোগও বলা হয়। মা-বাবা শিশুর সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করলেও আবেগপূর্ণ ভালোবাসা বা সহানুভূতি না দেখালে শিশুর মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য তৈরি হতে পারে।
এ ধরনের শিশু শিখে যায় যে কষ্ট পেলে সেটা গোপন রাখতে হবে, নিজের আবেগ নিজেকেই সামলাতে হবে। তারা বড় হয়ে স্বাধীন হতে চায়, অন্যের ওপর নির্ভর করতে চায় না। গভীর সম্পর্ক বা আবেগের ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলে। এই সংযোগের ধারা বড় বয়সেও থেকে যেতে পারে এবং প্রভাব ফেলে বন্ধুত্ব, প্রেম বা অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রে এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ২০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মনে করেন, তাঁদের অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট আছে এবং পুরুষদের মধ্যে এ প্রবণতা কিছুটা বেশি।
আরও পড়ুনশিশু-কিশোরেরা কেন সহিংস হয়ে উঠছে?২১ মে ২০২৫অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট কেন হয়অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট সাধারণত তখনই তৈরি হয়, যখন শিশুর মা-বাবা খুব কড়া, আবেগহীন বা উপেক্ষাপূর্ণ আচরণ করেন। শিশুর কষ্ট বা আবেগের সময় তাঁরা সহানুভূতি না দেখিয়ে বলেন, ‘নিজেই সামলে নাও।’ শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের মতো শৈশবের মানসিক আঘাতও এই অ্যাটাচমেন্টের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু উদাহরণ দেখুন—
শিশুর কান্না উপেক্ষা করা।
আবেগ দেখানোকে দুর্বলতা ভাবা।
শিশুর সমস্যা নিয়ে হাসাহাসি করা।
ভালোবাসা বা স্পর্শ থেকে বিরত থাকা।
শিশুকে প্রশ্ন করতে না দিয়ে শুধু নিয়ম মানতে বাধ্য করা।
কখনো কখনো জেনেটিক কারণেও অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট হতে পারে। বিশেষ করে সিওএমটি নামের এক জিনের পরিবর্তন এ প্রবণতা বাড়াতে পারে।
অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট পুরোপুরি ঠেকানো না গেলেও, শিশুর মধ্যে নিরাপদ সংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না: সুন্দর পিচাই
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের প্রতিটি কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়েছেন গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই। বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকারে সুন্দর পিচাই বলেন, এআই মডেলগুলোর ‘ভুল করার প্রবণতা’ আছে। তাই এগুলোকে অন্যান্য যাচাইযোগ্য তথ্যসূত্রের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করার অনুরোধ করেন তিনি।
পিচাই বলেন, ‘এ বিষয়টি প্রমাণ করে যে তথ্যের একটি বহুমুখী ইকোসিস্টেম জরুরি—যেখানে মানুষ কেবল এআই–নির্ভর না হয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য যাচাই করতে পারে। এ কারণেই মানুষ এখনো গুগল সার্চ ব্যবহার করে। আমাদের আরও কিছু পণ্য আছে, যেগুলো সঠিক তথ্য সরবরাহে বেশি নির্ভরযোগ্য।’
পিচাই বলেন, সৃজনশীল কিছু লেখালেখির ক্ষেত্রে এআই বেশ সহায়ক হতে পারে। তবে মানুষকে অবশ্যই বুঝতে হবে কোন কাজের জন্য এআই ভালো, আর কোন জায়গায় এটির ওপর অন্ধভাবে ভরসা করা উচিত নয়। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা নির্ভুল তথ্য দিতে যে পরিমাণ পরিশ্রম করি, সেটার জন্য আমরা গর্বিত। কিন্তু বর্তমানে সর্বাধুনিক এআই প্রযুক্তির মধ্যে কিছু ভুলভ্রান্তির প্রবণতা দেখা যায়।’
প্রযুক্তি–দুনিয়া গুগলের সর্বশেষ ভোক্তাবান্ধব এআই মডেল জেমিনি ৩ পয়েন্ট শূন্য এর অপেক্ষায় ছিল। নতুন এই মডেল ইতিমধ্যে বাজারে চ্যাটজিপিটিকে টেক্কা দিতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুনএআই উদ্ভাবনে বিশ্বে কারা সবচেয়ে এগিয়ে৩১ জুলাই ২০২৫এ বছরের মে মাস থেকে গুগল সার্চে ‘এআই মোড’ চালু করা হয়েছে। যেখানে সংযুক্ত করা হয়েছে জেমিনির চ্যাটবট। এর উদ্দেশ্য হলো—ব্যবহারকারীর যাতে মনে হয়, তিনি একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলছেন।
সে সময় সুন্দর পিচাই বলেছিলেন, গুগল সার্চের সঙ্গে জেমিনির এই সংযুক্তি এআই প্ল্যাটফর্মে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল।
মূলত চ্যাটজিপিটির মতো প্রতিদ্বন্দ্বী এআই পরিষেবাগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকতেই গুগল এই উদ্যোগ নিয়েছে।
পিচাইয়ের মন্তব্য বিবিসির আগের এক গবেষণার সঙ্গে মিলে যায়। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, এআই চ্যাটবটগুলো সংবাদ প্রতিবেদনকে সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে ভুলভাবে উপস্থাপন করে।
আরও পড়ুনফায়ারফক্সে আসছে এআই উইন্ডো১৭ নভেম্বর ২০২৫বিবিসি তাদের ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন দিয়ে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি, মাইক্রোসফটের কো–পাইলট, গুগলের জেমিনি ও পারপ্লেক্সিটি এআইকে প্রশ্ন করে। সব এআইয়ের উত্তরে উল্লেখযোগ্য ভুল পাওয়া যায়।
সাক্ষাৎকারে পিচাই বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। তবে এই প্রযুক্তি যাতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলে, সে জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা বা প্রতিরোধমূলক কাঠামো গড়ে তোলার প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে ধীর।
পিচাই আরও বলেন, ‘গুগল এআই গবেষণা যত বাড়াচ্ছে, ঠিক একই অনুপাতে এআই–সংক্রান্ত নিরাপত্তায়ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা এমন প্রযুক্তি নিয়ে আসছি, যার সাহায্যে বোঝা যাবে কোনো ছবি এআই দিয়ে তৈরি, আর কোনটি নয়।’
আরও পড়ুনগুগল এআই দিয়ে দোকান থেকে সরাসরি পণ্য কেনার সুবিধা৫ ঘণ্টা আগে