ঢাকার নবাবগঞ্জে বাড়ির পাশের খেত থেকে আমজাদ হোসেন (৫০) নামের যুবদলের এক নেতার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আজ রোববার ভোর পাঁচটার দিকে উপজেলার মাঝিরকান্দা এলাকার মৃধাকান্দা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর এক ঘণ্টা আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে তাঁর বাড়িতে এসেছিল পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ ভোর চারটার দিকে চেক জালিয়াতির মামলায় এক বছরের সাজাসংক্রান্ত পরোয়ানা নিয়ে আমজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তারে তাঁর বাড়িতে যায় নবাবগঞ্জ থানা-পুলিশ। তাঁকে না পেয়ে পুলিশ ফিরে যায়। পুলিশের গাড়ি চলে গেছে জানতে পেরে আমজাদ ঘর থেকে বের হন। পরিবারের ধারণা, তিনি ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। তবে ভোর পাঁচটার দিকে স্থানীয় কয়েকজন ধনচেখেতের পাশে আমজাদকে পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যদের খবর দেন।

পরে আমজাদকে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর স্বজনেরা লাশ বাড়িতে নিয়ে যান। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘হত্যা’র অভিযোগ তুলে বিভিন্ন পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে যুবদলের নেতা-কর্মী ও স্বজনেরা আমজাদের বাড়িতে যান।

ঘটনার খবর পেয়ে নবাবগঞ্জ থানা-পুলিশ আমজাদের বাড়িতে গিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে। আমজাদের নামে রাজনৈতিকসহ অন্তত ২০টির বেশি মামলা আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। একটি চেক জালিয়াতির মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে এক বছরের সাজা পরোয়ানাও ছিল। লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য তা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নিহতের স্ত্রী মাহফুজা বেগম বলেন, ‘আমি জানি না আমার স্বামী কীভাবে মারা গেল। আল্লাহর কাছে বিচার চাই।’

আমজাদের ভাই জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই রাজনীতি করে। তার অনেক প্রতিপক্ষ আছে। পুলিশ তাকে ধরতে আসলেও সে কেন ওখানে গিয়ে পড়ে মারা গেল? এটা আমরা বুঝতে পারছি না।’ নিহতের বড় মেয়ে আশা আক্তার বলেন, ‘বাবার মুখে ও চোখের কোণে জখমের চিহ্ন আছে। বাবাকে কেউ হত্যা করেছে কি না, তা এখনো বলতে পারব না।’

নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমজাদ হোসেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত করাটা জরুরি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’

ভোররাতে গ্রেপ্তার অভিযানের বিষয়ে ওসি বলেন, আমজাদের নামে সাজার পরোয়ানা ছিল। পুলিশ ভোর চারটায় তাঁকে ধরতে যায়। বাসার দরজা না খোলায় পুলিশ ফিরে আসে। পরে স্থানীয় লোকজন মুঠোফোনে আমজাদের মৃত্যুর খবর জানান। অভিযানে অংশ নেওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) রাজিবুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাঁরা আমজাদের বাড়িতে ঢোকেননি।

এদিকে আমজাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিএনপি নেত্রী মেহনাজ মান্নান তাঁর বাড়িতে যান। তিনি নিহতের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমজাদ দলের একজন ত্যাগী নেতা। অনেক মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। তাঁর এভাবে রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ আমরা খুঁজে বের করতে চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমজ দ র য বদল র খবর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ