রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গতকাল সোমবার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আজ দেশজুড়ে শোক দিবস পালন করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য শোক প্রকাশ করে বিভিন্ন ছবি, তথ্য, আহত ও নিহতদের চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার ও পোস্ট করেছেন ব্যবহারকারীরা।

শোকবার্তা

ফেসবুকে অনেকেই শোক প্রকাশ করে নিজেদের প্রোফাইলে কালো রঙের ছবি দিয়েছেন। সিলেটের প্রযুক্তিবিদ সৈয়দ রেজওয়ানুল হক লিখেছেন, ‘পুরো দুর্ঘটনার বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না। নিজের শোকের কথা ফেসবুকে স্টোরির মাধ্যমে প্রকাশ করেছি।’ তরুণ পেশাজীবী রুবায়াত রুম্মান লিখেছেন, ‘এ দুর্ঘটনার জন্য কাকে দোষী বলা যায়?’ ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সার মাশরুর ইনান কিটো ভাই শোকের চিহ্ন প্রকাশ করে নিজের কষ্টের কথা স্টোরি আকারে প্রকাশ করেছেন। টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক তাঁর ফেসবুক পেজে কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে লিখেছেন, ‘মাইলস্টোনের ভিডিও ফুটেজগুলো আর সহ্য করা যাচ্ছে না! আল্লাহ স্কুলের বাচ্চাগুলো আর তাদের মা-বাবাকে নিরাপদে রাখুক।’ তাঁর এই পোস্টে ৪১ হাজারের বেশি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অন্য ব্যবহারকারীরা।

ফেসবুকে অনেকেই বিভিন্ন ছবি, ভিডিওসহ নিজের অভিজ্ঞতা, তথ্য ও সংবাদ প্রকাশ করেছেন। হ্যাশট্যাগ মাইলস্টোন দিয়ে ফেসবুকে প্রায় ৪৪ লাখ পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে আজ বিকেল পর্যন্ত। ‘হ্যাশট্যাগ মাইলস্টোন প্লেন ক্র্যাশ’ দিয়ে অন্যদের পোস্ট শেয়ারও করেছেন অনেকে। ‘মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেছেন। শুধু তা–ই নয়, ‘মাইলস্টোন প্লেন ক্র্যাশ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট শেয়ার করেছেন প্রায় ১ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ।

ইউটিউবে গত ২৪ ঘণ্টায় ‘হ্যাশট্যাগ মাইলস্টোন’ দিয়ে প্রায় ৮৮ হাজার ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ‘প্রে ফর ঢাকা’ হ্যাশট্যাগ দিয়েও কয়েক শ ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে। এসব ভিডিওতে বিভিন্ন ধরনের মতামত ও শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। গুগল ট্রেন্ডে গত ২৯ ঘণ্টায় মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সার্চ করেছেন অনেকে। টিকটকে ‘মাইলস্টোন’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার ভিডিও প্রকাশ করেছেন ব্যবহারকারীরা। খুদে ব্লগ লেখার সাইট এক্সেও মাইলস্টোন–সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্ট দেখা গেছে। ‘হ্যাশট্যাগ মাইলস্টোন’, ‘ঢাকা ক্র্যাশ’, ‘ঢাকা প্লেন ক্র্যাশ’, ‘বাংলাদেশ এয়ারফোর্স’ লিখে এসব পোস্ট ও ছবি প্রকাশ করেছেন ব্যবহারকারীরা।

এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও ও ছবি

দুর্ঘটনার পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কয়েক শ ভুয়া ভিডিও দেখা গেছে, যা এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি। এআই প্রম্পটের মাধ্যমে মাইলস্টোন কলেজের ক্যাম্পাস ও বিমানবাহিনীর বিমানের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরি করেছেন অনেকে। কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবিতে শিশুদের বিভিন্ন আবেগীয় মুহূর্তও তুলে ধরেছেন কেউ কেউ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ য শট য গ দ য় দ র ঘটন ছ ন অন ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ