পদ্মার ছয় দফা ভাঙনে পড়ে নিঃস্ব কাদের-খোদেজা দম্পতি
Published: 25th, July 2025 GMT
একসময় প্রায় শত বিঘা জমির মালিক ছিলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার মুন্সিপাড়ার কাদের কাজী। স্ত্রী খোদেজা বেগমকে নিয়ে গড়া সংসারে ছিল বড় বাড়ি, আর্থিক স্বচ্ছলতা ও গৃহকর্মী। পদ্মা নদীর ছয় দফা ভাঙনের মুখে পড়ে আজ নিঃস্ব তাঁরা। বর্তমানে অন্যের ৬ শতাংশ জমিতে বাৎসরিক তিন হাজার টাকা ইজারায় বসবাস করছেন। সেই টাকা সময়মতো দিতে না পারায় মালিকের কথাও শুনতে হয়। বৃদ্ধ কাদের কাজী এখন আর কাজ করতে পারেন না। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেদের কেউ অটোরিকশা চালান, কেউবা দিনমজুর।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মার ভাঙনের কারণে মুন্সিপাড়ার কৃষকেরা অপরিপক্ব পাট কেটে নিচ্ছেন। শ্রমিক না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়েই নামছেন জমিতে। চোখের সামনেই বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। নদী থেকে কয়েক শ গজ দূরেই দেবগ্রাম বেথুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুশাহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুন্সিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ, মুন্সিবাজারসহ পাঁচটি গ্রাম। ফেরিঘাট থেকে রাজবাড়ীর মিজানপুর পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে।
নদীর পাড়ে বসে থাকা খোদেজা বেগম বলেন, ‘দুই দিন ধইরা বেশি ভাঙতাছে। যে ফ্যালি ভাঙতাছে, বাড়িঘর ধর ধর। আমরা কহানে যাব, খাড়ানের জায়গা নাই। আমরা ছয়ডা ভাঙা দিছি। দুই দিন খাওয়া নাওয়া নাই, রাইতে ঘুমও নাই। ছাওলপোল নিইয়া রাইতে শুইয়া থাহি। যদি দাবাইয় নিইয়া যাই তাইলে উপায় কী? আপনাগের পায়ে ধইরা কইতাছি আমাগোর থাহার মতো তোফিক করে দেন।’
খোদেজা বেগম বলেন, ২৫ থেকে ২৬ বছর আগে দৌলতদিয়ার বাঘাবাড়িতে তাঁদের প্রায় ১০০ বিঘা জমি ছিল। পদ্মার ভাঙনে সরে যান দেবগ্রাম বেথুরী, সেখান থেকে ধোপাগাথী। ছয়বার স্থানান্তরের পর এখন মুন্সিপাড়ায় আছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা তালেব সরদার বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে ভাঙনের শিকার হয়ে মুন্সিপাড়া আসছি। তিন দিন ধরে ভাঙন বেড়েছে। তিন বিঘার পাটের জমি ছিল, এক বিঘা নদীতে গেল। লোকজন পাই না, তাই ঘরের বউ লইয়া একাই পাট কাটছি।’
নদীর পাড়ে বসে থাকা কুদ্দুস সরদার বলেন, ‘পাটখেত, ধানখেত সব ভাইঙা যাইতেছে। ১৫ দিন পর পাট কাটা দরকার ছিল। প্রায় পাঁচ বিঘা জমি এই কয়েক দিন ভাইঙা চুরমার কইরা নিছে। এখন দায় ঠেইয়া পাট কাটা লাগতাছে। অহন ভাবতেছি কী করব।’
নদীভাঙন আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব জামাল মুন্সি বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৩৫ বিঘা জমি আছে। যেভাবে ভাঙছে, সব চলে যাবে। কয়েক গজ দূরে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজার যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছি। ব্যবস্থা না নিলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে।’
গোয়ালন্দের ইউএনও মো.
রাজবাড়ী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, রাজবাড়ী সদর, পাংশা, কালুখালী ও গোয়ালন্দ উপজেলার প্রায় ৫৭ কিলোমিটার পদ্মার পাড় ডাম্পিংয়ের মধ্যে গোয়ালন্দের সাড়ে ৮ কিলোমিটার ও রাজবাড়ীর ২০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন আছে। পানি বাড়ার কারণে স্রোতে ভাঙন বেড়েছে। ২ হাজার ২৮৩ মিটার এলাকাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রশাসনিক অনুমোদনের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে সদর উপজেলার ১৫৪ মিটার এলাকায় অনুমোদন পাওয়া গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ট র এল ক পদ ম র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫