সমস্যা সমাধান ও নতুন কিছু করার আগ্রহ থেকে তরুণেরা স্টার্টআপ গড়ে তোলার কথা ভাবেন। কেউ কৃষি খাতে প্রযুক্তি আনছেন, কেউ তৈরি করছেন ঘরে বসে অনলাইনে শিক্ষা নেওয়ার অ্যাপ, আবার কেউবা নতুন নতুন সমস্যা সমাধানে তৈরি করছেন নানা ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা।

স্টার্টআপ গড়ে তোলার আগে প্রথমেই জানতে হবে স্টার্টআপ মানে কী। স্টার্টআপ একটি নতুন ব্যবসায়িক ধারণা, যা নির্দিষ্ট কোনো সমস্যার সমাধান করবে। যেটা এর আগে কেউ এতটা সহজভাবে করেনি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্টার্টআপ হয় প্রযুক্তিনির্ভর। যেমন অ্যাপ, সফটওয়্যার বা ই-কমার্স, কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তি অথবা সামাজিক কোনো উদ্যোগ। স্টার্টআপ সাধারণত প্রচলিত ব্যবসা থেকে দ্রুত বড় হয়।

স্টার্টআপের ধারণা তৈরি করবেন কীভাবে

স্টার্টআপ শুরু করতে প্রথমে সমস্যাটা চিহ্নিত করতে হবে। এরপর ভাবতে হবে, কীভাবে সেই সমস্যার নতুন সমাধান করা যায়। প্রথমে ছোট করে শুরু করা উচিত। একটি পরীক্ষামূলক পণ্য বা সেবা কিংবা ন্যূনতম কার্যকর পণ্য বা সেবা (মিনিমাম ভায়াবল প্রোডাক্ট বা এমভিপি) তৈরি করতে হবে। বাজারে সেটার চাহিদা আছে কি না, তা যাচাই করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি শহরের ময়লা পুনর্ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযুক্তিনির্ভর কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলেন, সেটিও স্টার্টআপ হতে পারে। তারপর প্রয়োজনে একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা ও যোগ্য লোক নিয়ে একটি দল তৈরি করা যায়।

টাকা পাবেন কীভাবে

স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের যাত্রার শুরুতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয় অর্থায়ন বা বিনিয়োগ। প্রথম দিকে অনেক উদ্যোক্তা নিজেদের সঞ্চয় বা পরিবার অথবা বন্ধুবান্ধবের সহায়তায় শুরু করেন, যাকে বলা হয় ‘বুটস্ট্র্যাপিং’। তবে স্টার্টআপের ধারণা ভালো হলে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর কিংবা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (ভিসি) প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিনিয়োগ পাওয়া সম্ভব। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর নেটওয়ার্ক, বিডি ভেঞ্চার, এসবিকে টেক ভেঞ্চারস, অ্যাংকরলেস বাংলাদেশ, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ডেকো ইশো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। এসব প্রতিষ্ঠান তরুণদের স্টার্টআপে প্রাথমিক পর্যায় বা ‘সিড’ পর্যায়ে বিনিয়োগ দিয়ে থাকে।

এর সঙ্গে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের আওতায় পরিচালিত আইডিয়া প্রকল্পের (iDEA Project) মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা তাঁর স্টার্টআপের ধারণার জন্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান পেতে পারেন। এ ছাড়া গ্রামীণফোন অ্যাকসিলারেটর, বিওয়াইএলসি ভেঞ্চারস এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএসইউ স্টার্টআপস নেক্সট অ্যাকসিলারেটর প্রোগ্রামের মতো দেশি–বিদেশি অনেক অ্যাকসিলারেটর প্রোগ্রাম রয়েছে, যা তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া এ ধরনের আয়োজনে অংশ নিয়ে দেশি–বিদেশি এই খাতের অংশীজন ও অন্যান্য মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা যায়, যা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির জন্য বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এ ছাড়া সম্প্রতি এ খাতের অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নীতিমালা তৈরি করেছে। তহবিলের পরিমাণ আগে থেকেই ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছিল। তবে আগে তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ঋণ পাওয়া যেত এক কোটি টাকা। নতুন নীতিমালায় বলা হয়, এখন ৪ শতাংশ সুদে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো। এ ছাড়া ২১ বছরের বেশি বয়সের উদ্যোক্তারাও এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ঋণ পেতে ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম বা ঋণমান ব্যবস্থা পরিপালনের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এর ফলে তহবিল পাওয়াটা সহজ হয়।

নিবন্ধন কোথায়

বাংলাদেশে স্টার্টআপ বা ব্যবসা নিবন্ধনের জন্য প্রধানত তিন ধরনের কাঠামো রয়েছে। এগুলো হচ্ছে একক মালিকানা (সোল প্রোপ্রাইটরশিপ), অংশীদারত্ব (পার্টনারশিপ) ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। একক মালিকানা ব্যবসার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কাজ শুরু করা যাবে। অংশীদারত্ব ব্যবসার জন্য যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন করতে হয়। যেখানে অংশীদারদের মধ্যে চুক্তিপত্র (পার্টনারশিপ ডিড) জমা দিতে হয়।

তবে যদি কেউ বড় আকারে ব্যবসা করতে চান, বিনিয়োগ আনতে চান বা বিদেশি অংশীদার চান, তাহলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনই সবচেয়ে উপযোগী। এর জন্য আরজেএসসি থেকে নাম ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়, এরপর মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন জমা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। নিবন্ধনের পর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, টিআইএন, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ট র টআপ র জন য ন করত প রথম সমস য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গাড়িটার জন্য খারাপ লাগছে

আগের পর্বআরও পড়ুনএভাবে অপমান!২১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ