আধুনিক যুদ্ধের জন্য বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত?
Published: 27th, July 2025 GMT
যুদ্ধের ইতিহাসে দেখা যায়, কিছু বিশেষ অস্ত্রের আবির্ভাব যুদ্ধ পরিচালনার পদ্ধতি পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। আবার কখনো কখনো কোনো বিশেষ অস্ত্র ব্যবহারের পরিবর্তে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেই যুদ্ধের রূপ বদলে গেছে। তবে আজ আমরা শুধু মারণাস্ত্রের বিবর্তন নিয়েই কথা বলব।
ইতিহাসের শুরু থেকেই অস্ত্রকে দুইভাবে ভাগ করা যায়—ডাইরেক্ট (প্রত্যক্ষ) ও ইনডাইরেক্ট (পরোক্ষ)। যেসব অস্ত্র কাছ থেকে শত্রুকে হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় সেগুলো ডাইরেক্ট, যেমন তলোয়ার, বর্শা, হালকা তির-ধনুক। আর যেসব অস্ত্র দূর থেকে আক্রমণ চালাতে সক্ষম, যেমন ক্যাটাপুল্ট, তা ইনডাইরেক্ট অস্ত্র। এসব অস্ত্রের উন্নতি ঘটেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।
প্রাচীনকালে ঢাল-তলোয়ারই ছিল প্রধান অস্ত্র। ছোটবেলায় ইতিহাস বইয়ে আমরা ঈশা খাঁ ও মানসিংহের মল্লযুদ্ধের ছবি দেখতাম। ঈশা খাঁর তলোয়ার ছিল সোজা, আর মানসিংহের তলোয়ার ছিল বাঁকা।
আমরা বলতাম, ওটা বাঁকা ছিল তাই বুঝি ভেঙে গেছে! আসলে না। ঘোড়সওয়ার যোদ্ধাদের ব্যবহারের জন্য বাঁকা তলোয়ারই বেশি কার্যকর, যা কাটিং বা স্লাইসিংয়ের জন্য উপযোগী। আর পদাতিক সৈন্যরা ব্যবহার করতেন সোজা তলোয়ার, যেটা স্ট্যাবিংয়ের জন্য আদর্শ।
বারুদের আবিষ্কারের পর সেই ঢাল-তলোয়ারের জায়গা দখল করে নেয় পিস্তল, রাইফেল, সাবমেশিন গান। তবে তলোয়ারের ব্যবহার পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি; বরং বেয়নেট হিসেবে এখনো আধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেলের মাথায় স্থান পায়।
ব্যক্তিগত সুরক্ষায় ব্যবহৃত হতো ঢাল, যার বিবর্তিত রূপ আমরা দেখি ইউরোপীয় নাইটদের বর্মে। তাঁরা আপাদমস্তক ধাতব বর্মে আবৃত থাকতেন, এমনকি ঘোড়ার দেহেও থাকত বর্ম। মধ্যযুগে এ ধরনের নাইটরাই রাজাদের প্রধান বাহিনী ছিলেন। আজও ইংল্যান্ডে সম্মানজনক ‘নাইট’ উপাধি প্রদান করা হয়, যার ফলে ওই ব্যক্তি ‘স্যার’ উপাধি লাভ করেন।
ইতিহাসে ‘ইংলিশ লং বো’ অন্যতম বিখ্যাত অস্ত্র। ১৩৪৬ সালে ইংরেজরা এই শক্তিশালী ধনুক ব্যবহার করে সংখ্যায় বেশি ফরাসি নাইট বাহিনীকে পরাজিত করে। এই ধনুক থেকে ছোড়া তির ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার দূরত্ব থেকেও নাইটদের বর্ম ভেদ করতে সক্ষম ছিল।
আমরা একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হই সব সময়। প্রশ্নটি হলো, ভারত আক্রমণ করলে তোমরা কয় দিন টিকবে? তাদের আমি বলতে চাই, মাইক টাইসনের সঙ্গে বক্সিং খেলতে গেলে আপনার আমার কী হবে? তাই বলে আমি কি একটিও ঘুষি মারব না, পালিয়ে যাব?তারও অনেক আগে মোঙ্গল ঘোড়সওয়াররা চলন্ত ঘোড়া থেকে তির ছুড়ে অসাধারণ দক্ষতায় শত্রুকে ঘায়েল করতেন। এই শক্তির ওপর নির্ভর করে তাঁরা অল্প সময়ে বিশাল এক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।
তৎকালীন রাজারা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এলাকায় বিশাল দুর্গ নির্মাণ করতেন। ২০-৩০ ফুট উঁচু পাথরের প্রাচীরঘেরা এসব দুর্গে বসবাস করতেন সাধারণ মানুষ ও সৈন্যরা এবং মজুত থাকত প্রচুর খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য সরবরাহ। দুর্গের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অনেক অনেক সুদৃঢ়, তিরন্দাজরা আড়াল থেকে তির ছুড়তেন, দেয়াল টপকাতে গেলে ওপর থেকে তরল দাহ্য পদার্থে আগুন দিয়ে ঢেলে দিতেন। প্রায় সব দুর্গই গভীর পরিখা দিয়ে ঘেরা থাকত এবং পরিখা গভীর জলে পূর্ণ থাকত।
এসব দুর্গ ভাঙা অত্যন্ত কঠিন কাজ। প্রায়ই অবরোধকারীরা হাল ছেড়ে দিয়ে চলে যেত। আবার অনেকে হাল ছেড়ে না দিয়ে লেগে থাকত। দুর্গ ভাঙার জন্য কাঠের তৈরি ক্যাটাপুল্ট ব্যবহার করা হতো, যা দিয়ে ছোড়া হতো বড় পাথর ও আগুনের গোলা। এমনকি মোঙ্গলরা একবার প্লেগে মারা যাওয়া দেহ ছুড়ে দিয়েছিল ক্রিমিয়ার কাফফা দুর্গে, যাতে ভেতরে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে।
এর মধ্যেই আবিষ্কৃত হয় বারুদ-গানপাউডার। এর ফলে কামান দিয়ে দুর্গ গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে। বাবর সেই কামান দিয়েই ইব্রাহিম লোদির বিশাল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন। তুর্কিরা বাইজাইন্টাইনদের কাছ থেকে বর্তমানে ইস্তাম্বুল দুর্গ দখল করে নেয়।
এরপর গাদা বন্দুক, রাইফেল এবং পরে মেশিনগান আবিষ্কারের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় যুদ্ধের ধারা থেকে একেবারে বদলে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯০২ সালের বোয়ার যুদ্ধ এবং ১৯০৪ সালের পোর্ট আর্থার যুদ্ধে মেশিনগানের বিধ্বংসী প্রভাব লক্ষ করা যায়।
আর্টিলারিরও ব্যাপক উন্নতি ঘটে। কামানের গোলা ছোড়ার দূরত্ব ও ধ্বংসক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এ কারণে যুদ্ধের ধরন পাল্টে গিয়ে আসে লিবিয়ার ডিফেন্স বা লাইন প্রতিরক্ষা কৌশল। ১৯১৪-১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মাত্র কয়েক শ গজ জমির জন্য লাখ লাখ সৈন্য প্রাণ হারান। মেশিনগান, কাঁটাতার এবং পরিখাব্যবস্থায় পদাতিক সৈন্যরা প্রায় সময়ে আটকে যেতেন এবং দলে দলে মারা যেতেন, অগ্রসর হতে পারতেন না।
এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন দেখা দেয় একটি নতুন অস্ত্রের। হয় ট্যাংকের জন্ম। ১৯১৬ সালে সোমের যুদ্ধে প্রথমবার ট্যাংকের ব্যবহার করা হয়। এর থেকেই জন্ম নেয় ম্যানুভার ও ব্লিটজক্রিগ বা বিদ্যুৎগতির যুদ্ধকৌশল। জার্মানির সেনারা এই কৌশল প্রয়োগ করে দ্রুত দখল করে নেন পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, ফ্রান্সসহ পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চল।
একই সঙ্গে যুদ্ধবিমানেরও দ্রুত উন্নয়ন ঘটে। আবিষ্কৃত হয় রাডার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জার্মানরা তৈরি করে ভি-২ মিসাইল ও জেট যুদ্ধবিমান, যার কিছু বাস্তব ব্যবহারও ঘটে। যদিও জার্মানির শেষ রক্ষা হয়নি, তবু এসব প্রযুক্তি ভবিষ্যতের যুদ্ধের রূপ নির্ধারণ করে দেয়।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আবিষ্কার করে পারমাণবিক বোমা, যা প্রয়োগ করে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধের ইতিহাসে শুরু হয় এক ভয়ংকর নতুন অধ্যায়—নিউক্লিয়ার যুগ।
বর্তমান যুগে যুদ্ধাস্ত্রে ছোঁয়া লেগেছে আধুনিক উচ্চ প্রযুক্তির।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র ব যবহ র র জন য করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
হামফ্রে ফেলোশিপ–ডাড স্কলারশিপ–আইডিবির প্রশিক্ষণ, আবেদন শেষ ৩১ জুলাই
আমেরিকা হিউবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলোশিপ, জার্মান সরকারের ডাড হেলমুট-শ্মিট মাস্টার্স স্কলারশিপ এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বাংলাদেশ ইসলামিক সলিডারিটি এডুকেশন ওয়াক্ফ আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ে আবেদন চলছে। তিনটির আবেদনের সুযোগ আছে আর দুদিন। আগামীকাল ৩১ জুলাই শেষ হবে হিউবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলোশিপ, ডাড হেলমুট-শ্মিট মাস্টার্স স্কলারশিপ এবং আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের। আবেদনের পদ্ধতিসহ জেনে নিন এসব বৃত্তি ও ফেলোশিপের বিস্তারিত তথ্য।
১. হামফ্রে ফেলোশিপ: মাসিক ভাতাসহ ১০ মাস আমেরিকায় পড়াশোনার সুযোগ
১০ মাসের হিউবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলোশিপে বেসরকারি সংস্থাসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতে পেশাজীবীরা আবেদন করতে পারবেন।
ফেলোশিপের সুযোগ-সুবিধা—নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ টিউশন ফি দেওয়া হবে;
প্রয়োজন হলে প্রাক্-একাডেমিক ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে;
জীবনযাত্রার ব্যয় ভাতা;
এককালীন সেটলিং ভাতা;
দুর্ঘটনা ও অসুস্থতাজনিত ব্যয় ভাতা;
বই কেনার খরচ;
কম্পিউটার কেনার জন্য এককালীন ভাতা;
বিমান ভ্রমণ ভাতা (প্রোগ্রামের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ইভেন্টে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ;
ফেলোশিপের জন্য প্রয়োজনীয় পেশাদার উন্নয়ন ভাতা যেমন ফিল্ড ট্রিপ, পেশাদার পরিদর্শন ও সম্মেলন।
আরও পড়ুনএসএসসি উত্তীর্ণদের শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মাসে আড়াই হাজার টাকা, মিলবে ২ বছর১৩ জুলাই ২০২৫আবেদনকারীর যোগ্যতা—আবেদনকারীকে অবশ্যই তরুণ ও মধ্য পর্যায়ের নেতৃত্বশীল পদে থাকা পেশাজীবী হতে হবে, যার জনসেবায় দৃষ্টান্তমূলক কাজ ও পেশাগত জীবনে অগ্রগতির সম্ভাবনা রয়েছে
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন, এমন কেউ আবেদন করতে পারবেন না
পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে চার বছরের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করার সনদ থাকতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনের পর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ বছর পূর্ণকালীন কাজ করার পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে (২০২৫ সালের আগস্টের আগে) এবং তাঁদের শিক্ষা ও কাজসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের নীতিগত দিকগুলোয় আগ্রহ থাকতে হবে
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা একাডেমিক গবেষক এই ফেলোশিপের জন্য বিবেচিত হবেন না। তাঁদের অবশ্যই ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে (ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হবেন যদি কেউ বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখানোর দায়িত্ব পালন করেন)।
২০২৬ সালের আগস্টের আগে সাত বছরের মধ্যে আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্নাতক স্কুলে এক শিক্ষাবর্ষ বা তার বেশি সময়ের জন্য লেখাপড়ায় অংশ নিয়ে থাকলে তিনি এই ফেলোশিপের জন্য অযোগ্য হবেন।
২০২৬ সালের আগস্টের আগে পাঁচ বছরের মধ্যে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার অভিজ্ঞতা থাকলে তিনি এই ফেলোশিপের জন্য যোগ্য হবেন না।
ইংরেজি লেখা ও কথা বলা উভয় ক্ষেত্রে দক্ষ হতে হবে এবং টোয়েফল স্কোর (ইন্টারনেটভিত্তিক) হতে হবে। প্রার্থীদের যাঁদের টোয়েফল স্কোরের বৈধ মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাঁদের নির্বাচনপ্রক্রিয়া শেষে টোয়েফল পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। (আমেরিকান সেন্টার কেবল নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য টোয়েফল পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে।)
আবেদনকারীকে অবশ্যই ফেলোশিপের জন্য নির্ধারিত প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও প্রতিশ্রুতি দেখানোর পাশাপাশি এ কথাও জানাতে হবে যে তিনি কীভাবে এই ফেলোশিপ থেকে উপকৃত হবেন, যা তিনি আগে কখনো হননি এবং হামফ্রে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছাড়া এমন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তাঁর নেই।
ফেলোশিপ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে।
ফাইল ছবি প্রথম আলো