এনসিপি কেন ‘ডিফিকাল্টির’ মধ্যে আছে?
Published: 29th, July 2025 GMT
এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি।’ এই ‘ডিফিকাল্টি’র পেছনে আসলে কী কাজ করছে তা তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে এনসিপির এখনকার লক্ষ্য কী? বাকি ফ্যাসিবাদীদের খুঁজে খুঁজে বের করা? কোথাও যদি ‘মুজিববাদ’–এর নিশানা দেখা যায়, তাকে ধ্বংস করা? জুলাই আন্দোলনকে প্রলম্বিত করে আন্দোলনকে চালিয়ে যাওয়া? যদি এগুলোই তাদের লক্ষ্য হয়, তবে কি তারা ঠিক পথে চলছে?
অর্পিত ম্যান্ডেট অতিক্রম করলে লক্ষ্য হারিয়ে যায় এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ঠিক এই জিনিসটাই হয়েছে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জনসভায়। ‘জুলাই পদযাত্রা’ গোপালগঞ্জের ক্ষেত্রে কেন ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হয়ে গেল? এটি করে বিনা কারণে ভিমরুলের বাসায় ঢিল ছোড়া হলো। সেনাবাহিনীকে পুলিশি কাজে জড়িয়ে তাদের বন্দুক ছুড়তে হলো। দুঃখের কথা হলো আমাদের দেশের পাঁচজন লোক গুলিতে প্রাণ হারালেন।
তবে সবাই কী দুঃখিত? দিল্লি, লন্ডন, কলকাতা ও নয়াপল্টনে অনেকে তাঁদের জনসংযোগ যন্ত্র খুলে বসেছেন। আওয়ামী লীগাররা বিদেশে বসে মৃতের সংখ্যা গুনছেন—পাঁচজন হলো, আর কয়জন লাগবে?
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ‘বাবারা’ সম্বোধন করে এনসিপিকে বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনার দায় দলটির রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতার।
এনসিপি নেতারা বলছেন, ‘সামনে আরও বড় লড়াইয়ের দিন আসছে।’ তাঁরা মনে হয় ‘লড়াইয়ের’ প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং শত্রু খুঁজছেন। কিন্তু কী লড়াই এবং কিসের লড়াই?
এর মধ্যে বিএনপি খালি মাঠে নির্বাচনী বলটা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। জামায়াত নেতারাও মুচকি হেসে তাঁদের মনোনয়নের লিস্টে বারবার চোখ বুলাচ্ছেন। এখন বিএনপির একমাত্র চিন্তা—এসব গন্ডগোলে না জানি নির্বাচন পিছিয়ে যায়! এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা।
একটা গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন হলো সফলতার মাপকাঠি। একটা দেশ বা একটা দল সফলতার জন্য বারবার আন্দোলনে ফিরে যেতে পারে না। এনসিপিকে বুঝতে হবে, তারা একটা নতুন দল। সামনেই নির্বাচন। এই নির্বাচনে তারা যদি একটা ভালো ফুট-প্রিন্ট না রাখতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। তাদের ভুলগুলো তাদের বুঝতে হবে এবং শোধরাতে হবে।
জুলাই আন্দোলনের ম্যান্ডেটের বাইরে যাওয়াএনসিপি নেতারা কি জুলাই আন্দোলনের ম্যান্ডেটের সীমারেখা বুঝতে পেরেছিলেন? তাঁরা কি নিজেদের মতো করে ম্যান্ডেটটাকে বাড়াচ্ছেন?
আন্দোলনটা শুরু হয় কোটা আন্দোলন নিয়ে। দেশের তরুণেরা দারুণভাবে ক্রোধান্বিত ছিলেন কোটাকে যেভাবে শেখ হাসিনা রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তরুণদের চাকরির ক্ষেত্র সংকুচিত করছিলেন। হাসিনা তরুণদের ডাক শুনলেন না। তখন তাঁরা শুরু করলেন ‘হাসিনা খেদাও’ আন্দোলন। দেশের আপামর মানুষ তাতে যোগ দিল; কারণ হাসিনার ১৫ বছরের একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন নিয়ে মানুষ ছিল বীতশ্রদ্ধ ও আতঙ্কিত।
জুলাই আন্দোলনের একমাত্র ম্যান্ডেট ছিল ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে দেশে একটা নিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু নেতারা যে যেমন পারেন নিজেদের এজেন্ডা তৈরি করে আন্দোলনের ম্যান্ডেটটাকে সম্প্রসারিত করতে লাগলেন।
তাঁরা একসময় এটাকে ফরাসি বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করে দ্বিতীয় রিপাবলিক বানাতে চাইলেন। কেউ বললেন একাত্তরের স্বাধীনতার রিসেট, কেউ চাইলেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা, কারও চাওয়া ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। অন্যরা ‘মুজিববাদ’ তাড়াতে মাঠে নামলেন।
তাদের বুঝতে হবে, জনগণ কী চায়। একটা আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। ম্যান্ডেটের বাইরে গেলে আন্দোলনের সুফল বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণেরা স্বাধীনতাযুদ্ধের গুরুত্ব কমানোর পথ ধরেছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধ তাঁরা দেখেননি, এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য কতটা অনুধাবন করতে পেরেছেন তাঁরা সেই প্রশ্ন ওঠে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের নেতারা একাত্তরের স্বাধীনতাকে সাতচল্লিশের পাকিস্তান জন্মের একটা ধারাবাহিকতা বা বিবর্তন হিসেবে দেখেছেন।
আমাদের স্বাধীনতার নেতা খুঁজতে গিয়ে তাঁরা শেখ মুজিবকে পেছনে ফেলে অনেককে সামনে এনে বসিয়ে দিলেন। হাসিনাকে শাস্তি দিতে গিয়ে চরম শাস্তি দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। শেখ মুজিব তো হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বানিয়ে উত্তরাধিকারী করে যাননি; একজন লোককে কতবার মারা যায়?
মুজিবের ছবি সব অফিস থেকে নামিয়ে ভেঙে ফেলা হলো। অ স ম আবদুর রব, যাঁর জাসদ কর্মীরা ছিলেন শেখ মুজিবের শাসনের সময়ে সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত। প্রচণ্ড ভয়ংকর পরিবেশেও তিনি তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেছিলেন। কারণ, তিনি নিজেও ছিলেন স্বাধীনতার সংগঠক এবং স্বচক্ষে দেখেছেন, কে ছিলেন এই দেশের স্বাধীনতার স্থপতি।
দলের ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে এনসিপির নেতা–কর্মীরা।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত স ব ধ নত র গ প লগঞ জ এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
ফখরুলের কণ্ঠ নকল, সতর্ক করল বিএনপি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠ নকল করে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
ঐক্যের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই: ফখরুল
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু কুচক্রি মহল পুরোনো প্রেস কনফারেন্সের ছবি ও বক্তব্য এডিট করে এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করেছে। তারপর তা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে, বিএনপি মহাসচিব আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করেছেন। বিএনপি বলছে, এই ভিডিও পুরোপুরি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই এই কুচক্রি মহল ভিডিও প্রচার করছে। দেশের মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী এবং এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এ ধরনের এডিট করা ভিডিও দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছে বিএনপি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ