ভুয়া র্যাবকে ধাওয়া দেয় আসল র্যাব, দুই পক্ষকেই গণপিটুনি
Published: 29th, July 2025 GMT
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চর যশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলার মোড় এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ভুয়া র্যাব সদস্যদের ধাওয়া করছিলেন আসল র্যাব সদস্যরা। সবাইকে মারধর করেছেন স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, দুটি মাইক্রোবাস দ্রুত গতিতে জয় বাংলা মোড় অতিক্রম করছিল। প্রথম মাইক্রোবাস থেকে বারবার বাঁশি বাজানোর শব্দ শুনে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা মহাসড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে প্রথম মাইক্রোবাসটি থামায়। গাড়ি থেকে নামা ব্যক্তিরা নিজেদের র্যাব সদস্য বলে দাবি করলেও তাদের কারো গায়ে র্যাবের পোশাক ছিল না। এতে সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। ভুয়া র্যাব সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করলে জনতা তাদের ধাওয়া দিয়ে ঘিরে ফেলে এবং মারধর করে।
এ সময় পেছন থেকে ধাওয়া করে আসা দ্বিতীয় মাইক্রোবাস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, যাতে প্রকৃত র্যাব সদস্যরা ছিলেন। তারাও সাদা পোশাকে থাকায় জনতা তাদের ভুয়া র্যাব মনে করে চড়াও হয়। উত্তেজিত জনতা প্রকৃত ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের একসঙ্গে মারধর করে এবং একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে গ্রেনেড-অস্ত্রসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক
রাজশাহীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, গ্রেপ্তার ২
খবর পেয়ে নগরকান্দা থানা পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রকৃত র্যাব ও ভুয়া র্যাব পরিচয়দানকারীদের উদ্ধার করে নগরকান্দা থানায় নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
জনতার হাতে আটক ভুয়া র্যাব সদস্যরা হলেন— শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মোহাম্মদ সুমন (৪৯), চাঁদপুর সদরের মোহাম্মদ মিন্টু (৪৫), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সাইফুল (৩৪), মাদারীপুরের কালকিনির মোহাম্মদ জামিল (৩২) এবং ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মোহাম্মদ দিদার (৩৬)।
নগরকান্দা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমীরুল ইসলাম বলেছেন, “জনতার হাত থেকে র্যাব ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদেরকে শ্রীনগর থানায় নেওয়া হয়েছে।”
র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, র্যাব-১০ এর একটি টিম ভুয়া র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত একটি দলকে ধাওয়া করছিল। স্থানীয় লোকজন ভুল বুঝে প্রকৃত ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের একসঙ্গে পিটিয়েছে। র্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে থাকায় এ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
র্যাব-১০ এর মুন্সীগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা ভুয়া র্যাবের দলকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ধাওয়া করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে বের হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা গেছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনগণ ভুয়া র্যাব পরিচয়দানকারীদের মারধর করছিল। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আমরাও জনতার হাতে কিছুটা মারধরের শিকার হয়েছি, তবে তা উল্লেখযোগ্য নয়।”
অভিযানে ভুয়া র্যাব চক্রের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে আছে চারটি ‘র্যাব’ লেখাসম্বলিত জ্যাকেট, তিনটি র্যাব ক্যাপ, দুই জোড়া হাতকড়া, একটি স্টেনগান, একটি পিস্তল সদৃশ গ্যাস লাইট, দুটি ওয়াকি-টকি সেট, একটি পিস্তল কাভার, মোবাইল ফোন এবং একটি মাইক্রোবাস। এ সময় অপহৃত দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী জয়দেব আধ্য (৫৩) ও বিশ্বনাথ আধ্য (৫৭) নামের সাতক্ষীরার দুই বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা র্যাব পরিচয়ে অপরাধমূলক কার্যকলাপ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেছেন র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
ঢাকা/তামিম/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ম হ ম মদ য ব সদস য নগরক ন দ প রক ত য ব ১০ য ব পর করছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভুয়া র্যাবকে ধাওয়া দিল আসল র্যাব, পথে দুই পক্ষকেই পেটাল জনতা
জোরে হর্ন দিতে দিতে দ্রুতগতিতে ছুটছিল একটি মাইক্রোবাস। সেটির কিছুটা পেছনে ছুটছিল আরেকটি মাইক্রোবাস। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় মহাসড়কে গাছ ফেলে প্রথম মাইক্রোবাসটিকে থামান স্থানীয় লোকজন। গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের র্যাব বলে পরিচয় দেন। তবে তাঁদের কারও গায়ে র্যাবের পোশাক ছিল না। সন্দেহ হয় স্থানীয় লোকজনের। ওই ব্যক্তিরা পালাতে চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে মারধর শুরু করেন স্থানীয় লোকজন।
এমন সময়ে সেখানে পৌঁছে যায় দ্বিতীয় মাইক্রোবাসটি। এতে ছিলেন র্যাবের প্রকৃত সদস্যরাই। যদিও কয়েকজনের গায়ে ইউনিফর্ম ছিল না। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয় লোকজনের রোষের মুখে পড়ে তাঁরাও পিটুনির শিকার হন। একপর্যায়ে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে শান্ত করে এই দুই পক্ষকেই উদ্ধার করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চর যশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলার মোড় এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে; গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আমীরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জনতার হাত থেকে র্যাব ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে নগরকান্দা থানায় নিয়ে আসা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁদের নিয়ে ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার উদ্দেশে যান।
মারধরের শিকার ভুয়া র্যাব পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশপাড়া গ্রামের স্বপন খান (৪৫), চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের মিন্টু গাজী (৪৫), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কুনসিবাড়ি গ্রামের মো. সাইফুল ইসলাম (৩০), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আন্ডারচর এলাকার মো. জামিল (৩২) এবং ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা গ্রামের দিদার (২৯)। তাঁদের থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে র্যাব-১০–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আসামিরা দুজন সোনা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডাকাতি করেছিলেন।
র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম বলেন, র্যাব-১০–এর হেডকোয়ার্টার থেকে একটি টিম ডাকাত দলকে ধাওয়া করে আসছিল। স্থানীয় লোকজন ভুল বুঝে উভয় পক্ষের ওপর চড়াও হন। কিছু র্যাবের সদস্যরা সাদাপোশাকে থাকায় উত্তেজিত লোকজন তাঁদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত র্যাব বলে চিনতে ভুল করেন।
র্যাব-১০ মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভুয়া র্যাবের দলকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ধাওয়া করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে বের হয়ে যেতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা গেছে।’ নিজেরাও মারধরের শিকার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ যখন ভুয়া র্যাব পরিচয়কারীদের মারপিট করছিলেন, তখন তাঁদের যাতে মেরে না ফেলেন, এই আশঙ্কায় আমরা জনগণের পিটুনি থেকে তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। তবে প্রথম পর্যায়ে জনগণ আমাদেরও ভুয়া র্যাব মনে করেছিলেন। এ কারণে আমাদের সঙ্গে কিছু ঘটনা ঘটেছিল, তবে তা আমলযোগ্য নয়।’