বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি
Published: 4th, August 2025 GMT
জুলাই গণভ্যুত্থান চলাকালে শান্তি মিছিলে যোগদান এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ১৫৪ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকতা কর্মচারীকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো হেলাল উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৩২৮তম সভায় গত বছর ৪ আগস্ট ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ শান্তি মিছিলে যোগদান এবং গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে ১৫৪ জনকে শাস্তি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন, বাকৃবির ৫৭ জন শিক্ষক, ২৪ জন কর্মকর্তা, ২১ জন কর্মচারী এবং ৩১ জন শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
যৌন হয়রানির অভিযোগে বেরোবি শিক্ষক রশীদুল বরখাস্ত
বিসিএসে সার্কুলারে নেই আরবি বিভাগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
এছাড়াও ২০২২ সালে ২৩ ডিসেম্বর আশরাফুল হক হলে বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চারজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনকারী ১৮ জন শিক্ষার্থী, দুইজন শিক্ষক ও একজন কর্মচারীকে শাস্তি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষকদের মধ্যে ছয়জনকে বরখাস্ত, ১২ জনকে অপসারণ, আটজনকে পদাবনমন এবং ৩১ জনকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে আটজনকে বহিষ্কার, আটজনকে অপসারণ, সাতজনকে তিরস্কার এবং একজনকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে দুইজনকে বরখাস্ত এবং ১৯ জনকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাতজনকে আজীবন বহিষ্কার এবং ২৪ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আশরাফুল হক হলে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় তিনজন শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার এবং ১৫ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও একজন শিক্ষককে নিম্নপদে অবনমন, একজনকে বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং একজন কর্মকর্তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বাকৃবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ বহিরাগতদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘শান্তি মিছিল’ নামে একটি সন্ত্রাসী মিছিল আয়োজন করে। এ মিছিলে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ এবং ‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’—এ ধরনের উসকানিমূলক ও সহিংস স্লোগান দিয়ে তারা খুনি ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার পক্ষে প্রচারণা চালায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এ সময় নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, যা শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করে এবং চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এছাড়া ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-শিক্ষকদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ.
তিনি বলেন, “তিনজন শিক্ষক তদন্ত কমিটি বৈধ নয় দাবি করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। সে রিটগুলো গতকাল খারিজ হয়েছে। আজ থেকে তাদের শাস্তি সংক্রান্ত কাগজ বিলি হচ্ছে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন শ ক ষ র থ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্যে সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না
স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের বিষয়গুলো সরকারের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য পদ্ধতি সংস্কার: আমরা কোথায়’ শীর্ষক নীতি সংলাপে অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য এই কথা বলেন। বেসরকারি চিন্তক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও নাগরিক সংগঠন ইউএইচসি ফোরাম যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এ আয়োজনে সহায়তা করে ইউনিসেফ।
সংলাপে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন হয়েছে এবং তারা একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। বাস্তবায়নে বুদ্ধিমত্তা, অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং কোন কাজের পর কোন কাজ বা কোন কাজের সঙ্গে কোন কাজ (সিকোয়েন্সিং) সেই বিষয়গুলো ঠিক করা দরকার।
প্রথম উপস্থাপনায় ইউএসসি ফোরামের সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ মো. আমিনুল হাসান বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রথমেই দরকার একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা। টাস্কফোর্সের কাজ কী হবে তার বিশদ বর্ণনা করেন তিনি। সংস্কারের শেষ কাজটি হবে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন। কমিশন গঠিত হলে টাস্কফোর্সের বিলুপ্তি ঘটবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনে ৬০০ এর বেশি সুপারিশ রয়েছে। সব সুপারিশই সঠিক, সব বাস্তবায়ন করা উচিত। অত্যাবশ্যক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং অত্যাবশ্যক জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কেউ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এক শ দিনও সময় নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে। কেউ বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, সংস্কারকাজ আর এগোবে না। একজন বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্য যেন গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হওয়া জরুরি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারে। একইভাবে স্বাস্থ্য কমিশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠন করতে পারে।
আমলাতন্ত্র যেকোনো সংস্কারের সবচেয়ে বড় বাধা—এমন মন্তব্য করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের অন্য একজন সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হযবরল অবস্থা। এ রকম অগোছালো মন্ত্রণালয় আর একটিও নেই। এখনই বড় কোনো কিছু করার উপযুক্ত সময়।’
অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক বলেন, বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় স্বাস্থ্য খাত নেই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে রাষ্ট্রপ্রধানেরা স্বাস্থ্যের জন্য উদ্যোগী ও সক্রিয় হয়েছেন, সেখানে স্বাস্থ্যে উন্নতি হয়েছে। এ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে তা দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ওষুধ খাত নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফের প্রতিনিধি ছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং দেশি এনজিওর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।