বাংলাদেশের তরুণেরা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন। একদিকে তাঁরা আগের যেকোনো প্রজন্মের চেয়ে বেশি শিক্ষিত, বেশি সংযুক্ত এবং অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী; অন্যদিকে তাঁরা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি—কমে আসা চাকরির সুযোগ, যুগোপযোগী নয় এমন শিক্ষাব্যবস্থা এবং এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামো, যা তাঁদের প্রায় সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে।

এই টানাপোড়েন ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনের সময় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যখন তরুণেরা ব্যাপক প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন এবং স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, দীর্ঘস্থায়ী বেকারত্ব ও আর্থিক অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

প্রায় এক বছর পর, এই পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) একশনএইড বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ‘ইয়ুথ সার্ভে ২০২৫’ পরিচালনা করে। ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার তরুণ-তরুণীর ওপর পরিচালিত জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল জরিপটি দেশের আটটি বিভাগের তরুণদের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা তুলে ধরে। ফলাফল একটি কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক চিত্র তুলে ধরে—তরুণেরা হতাশ, কিন্তু তাঁরা হার মানেননি। তাঁরা সংস্কার চান, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁরা চান তাঁদের কথা শোনা হোক। 

শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সংযোগহীনতা

জরিপে দেখা যায়, শিক্ষার সঙ্গে চাকরির উপযোগিতার একটি বড় ফাঁক রয়েছে। মাত্র ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ মনে করেন, তাঁদের শিক্ষা কর্মজীবনের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি দিয়েছে। চমকে দেওয়ার মতো ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, তাঁদের শিক্ষা চাকরির প্রস্তুতির ওপর কোনো প্রভাবই পড়েনি।

এটি বর্তমান শিক্ষা ও প্রশিক্ষণব্যবস্থার একটি মৌলিক ব্যর্থতা নির্দেশ করে, যা অর্থনীতির পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় অর্ধেক তরুণ এখনো শিক্ষার্থী হলেও ৩৭ শতাংশের বেশি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহ, অর্থনৈতিক সংকট কিংবা পরিবারের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন। 

চাকরিরতদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ সেবা খাতে নিয়োজিত। কিন্তু এই চাকরিগুলো যথেষ্ট নয়—১৩ দশমিক ৭ শতাংশ সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছেন কিন্তু সফল হননি, আর উদ্বেগজনকভাবে ৩৯ শতাংশ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন: না পড়াশোনা করেন, না চাকরি করেন, এমনকি কাজ খোঁজেনও না। এই ‘হতাশাগ্রস্ত’ তরুণদের দল অর্থনীতি ও সমাজের জন্য একধরনের টাইমবোমা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

একটি উপেক্ষিত প্রজন্ম

এত তরুণ কেন সুযোগ থেকে বঞ্চিত? একটি শব্দই তাঁদের উত্তরের কেন্দ্রে—স্বজনপ্রীতি। ৫৪ শতাংশের বেশি তরুণ এটিকে চাকরির প্রধান বাধা হিসেবে দেখেছেন, যার পরেই রয়েছে দুর্বল আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও শিক্ষার সঙ্গে শ্রমবাজারের চাহিদার অমিল। অনেকের ক্ষেত্রেই চাকরির আবেদন কোনো ফল দেয় না—যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, গত এক বছরে তাঁরা একটি সাক্ষাৎকারের ডাকও পাননি।

ঢাকার দেয়ালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ কর র র তর ণ তর ণ র

এছাড়াও পড়ুন:

বদরুদ্দীন উমরের চিন্তা টিকিয়ে রাখতে হবে

চিন্তা, প্রগতিশীল মতাদর্শ ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বিকাশের জন্য বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকার টিকিয়ে রাখতে হবে। রাজনৈতিক, সামাজিক ইতিহাসচর্চা ও মানস গঠনে তাঁর লেখনী আরও বহুকাল প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার ‘কমরেড বদরুদ্দীন উমরের জীবনাবসানে শোকসভা’ অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজন করেছিল মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবী জাতীয় শোকসভা আয়োজক কমিটি। প্রচলিত রীতি অনুসারে কোনো সভাপতি ছিলেন না শোকসভায়। মঞ্চে অতিথিদের কোনো আসনও ছিল না। মঞ্চের এক পাশে রাখা ছিল বদরুদ্দীন উমরের প্রতিকৃতি।

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। এরপর সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করা হয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক সংগীত ‘জাগো জাগো জাগো সর্বহারা’। আলোচনার পাশাপাশি আরও ছিল নিবেদিত কবিতা পাঠ ও বদরুদ্দীন উমরের জীবন ও কর্ম নিয়ে চিরন্তন দীপশিখা নামে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। দেশের প্রখ্যাত বাম চিন্তক, লেখক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর ৯৪ বছর বয়সে ৭ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন।

শোকসভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ