আবু সাঈদ হত্যায় শেখ হাসিনাকে দায়ী করলেন শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু
Published: 6th, August 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ বুধবার চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু জবানবন্দি দিয়েছেন। রিনা রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন তিনি।
বিচারপতি মো.
জবানবন্দিতে রিনা মুর্মু বলেন, গত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কমিটি ছিল না। তিনি আন্দোলন পরিচালনাকারীদের মধ্যে সম্মুখসারির একজন ছিলেন। ১৬ জুলাই শহরের চারতলা মোড় থেকে আন্দোলনকারী কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে আসেন। সেখানে আগে থেকেই পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লোকজন ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা অবস্থান করছিল। ১ নম্বর গেট দিয়ে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। তখন শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
ওই সময় রিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের বিপরীত পাশে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান। তিনি বলেন, ওই সময় আবু সাঈদকে প্রথমে পুলিশ ও ছাত্রলীগ মারধর করে। লাঠি দিয়ে যেভাবে পেরেছে, মেরেছে। একটু পর সড়ক বিভাজকের একটু সামনে দাঁড়ান আবু সাঈদ। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে থেকে আবু সাঈদকে গুলি করে দুজন পুলিশ। আবু সাঈদ পড়ে যান। এরপর কয়েকজন এসে আবু সাঈদকে পার্কের মোড়ের দিকে নিয়ে যায়। তিনি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখান থেকে তিনি এসব দৃশ্য দেখেন বলে জানান রিনা। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি জানতে পারেন আবু সাঈদ মারা গেছেন।
এ ঘটনার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রংপুর মহানগর পুলিশ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও যাঁরা গুলি করেছিলেন, তাঁদের দায়ী করে জবানবন্দি দেন রিনা মুর্মু।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কও ছিলেন।
আরও পড়ুনআবু সাঈদ হত্যা: ‘ঘটনাস্থলে ছিলেন না’ দাবি করে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন২৯ জুলাই ২০২৫শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করছে—সেই দৃশ্য দেশের টিভি চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এতে সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাৎক্ষণিকভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয় এবং জনসম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘হাসিনার পদত্যাগ’ এক দফা দাবিতে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব গম র ক য় স ঈদক
এছাড়াও পড়ুন:
জয়পুরহাট-২ আসন আক্কেলপুরে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ২
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা ও দলীয় প্রার্থী আবদুল বারীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গোলাম মোস্তফার দুই সমর্থক আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আক্কেলপুর পৌর শহরের পৃথক দুটি স্থানে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) আসনে সাবেক সচিব আবদুল বারীকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর এই আসনের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা আবদুল বারীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দুই দিন ধরে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরা আজ বৃহস্পতিবার আক্কেলপুর পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সকাল ১০টার পর উপজেলা পরিষদ চত্বরে জড়ো হতে থাকেন তাঁরা। বেলা সাড়ে ১১টায় গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিল করার কথা ছিল। এর আগেই আবদুল বারীর পক্ষের নেতা-কর্মীরা সেখানে যান। তাঁরা তাঁদের প্রার্থীর পক্ষে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাঁরা গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করেন। এরপর গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকেরা শহরের নবাবগঞ্জ সেতুর পূর্ব পাশে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় গোলাম মোস্তফার পক্ষের আপেল মাহমুদ ও আইয়ুব আলী আহত হন।
গোলাম মোস্তফার সমর্থক আপেল মাহমুদ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর মাঠে থেকে বিএনপির জন্য রাজপথে গোলাম মোস্তফা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। আমরা অনেক জুলুম–নির্যাতন সহ্য করেছি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এবার আমাদের নেতা মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু তাঁকে বঞ্চিত করে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদে আজ বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বারী সাহেবের কর্মী-সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।’
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফ ইফতেখার বলেন, ‘আজ হঠাৎ করে ধানের শীষের প্রার্থীর বিপক্ষে কয়েকজন বিক্ষোভ করার চেষ্টা করছিলেন। আমরা তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। আমরা সবাই ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছি।’
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।