জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ বুধবার চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু জবানবন্দি দিয়েছেন। রিনা রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন তিনি।

বিচারপতি মো.

গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ আজ বুধবার জবানবন্দি দেন রিনা মুর্মু। ট্রাইব্যুনালে অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

জবানবন্দিতে রিনা মুর্মু বলেন, গত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কমিটি ছিল না। তিনি আন্দোলন পরিচালনাকারীদের মধ্যে সম্মুখসারির একজন ছিলেন। ১৬ জুলাই শহরের চারতলা মোড় থেকে আন্দোলনকারী কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে আসেন। সেখানে আগে থেকেই পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লোকজন ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা অবস্থান করছিল। ১ নম্বর গেট দিয়ে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। তখন শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

ওই সময় রিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের বিপরীত পাশে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান। তিনি বলেন, ওই সময় আবু সাঈদকে প্রথমে পুলিশ ও ছাত্রলীগ মারধর করে। লাঠি দিয়ে যেভাবে পেরেছে, মেরেছে। একটু পর সড়ক বিভাজকের একটু সামনে দাঁড়ান আবু সাঈদ। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে থেকে আবু সাঈদকে গুলি করে দুজন পুলিশ। আবু সাঈদ পড়ে যান। এরপর কয়েকজন এসে আবু সাঈদকে পার্কের মোড়ের দিকে নিয়ে যায়। তিনি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখান থেকে তিনি এসব দৃশ্য দেখেন বলে জানান রিনা। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি জানতে পারেন আবু সাঈদ মারা গেছেন।

এ ঘটনার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রংপুর মহানগর পুলিশ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও যাঁরা গুলি করেছিলেন, তাঁদের দায়ী করে জবানবন্দি দেন রিনা মুর্মু।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কও ছিলেন।

আরও পড়ুনআবু সাঈদ হত্যা: ‘ঘটনাস্থলে ছিলেন না’ দাবি করে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন২৯ জুলাই ২০২৫

শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করছে—সেই দৃশ্য দেশের টিভি চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এতে সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাৎক্ষণিকভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয় এবং জনসম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘হাসিনার পদত্যাগ’ এক দফা দাবিতে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব গম র ক য় স ঈদক

এছাড়াও পড়ুন:

মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে: গণ অধিকার পরিষদ

মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার পর জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের পথনকশার (রোডম্যাপ) প্রতিক্রিয়া জানাতে দলটির আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খান বলেন, ‘২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বাতিল হওয়া কোটার অংশবিশেষ (৩০ শতাংশ) হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে ফিরে না এলে নতুনভাবে আন্দোলনের সূচনা হতো না। এখানে দুর্নীতি প্রতিরোধ বা অন্য কোনো দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়নি। অর্থাৎ গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট কোটা সংস্কার আন্দোলন। কিন্তু এই আন্দোলনের ইতিহাস বাদ দিয়ে মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।’

রাশেদ খান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, গণ অধিকার পরিষদ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের ২০১৮ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস বাদ দিতে পরিকল্পিতভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ইতিহাস বিকৃতি বড় ধরনের অপরাধ। জুলাই ঘোষণাপত্রের এই ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে মিথ্যা শেখাবে। ঠিক ৭১ নিয়ে যেভাবে আমাদের মিথ্যা শেখানো হয়েছে। তাহলে আওয়ামী লীগের তৈরি ইতিহাস ও অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?’

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড, নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, পরিকল্পিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারের হত্যাকাণ্ড, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি স্থান পায়নি। এসব ঘটনা এ প্রজন্মের মস্তিষ্ক ও মনস্তত্ত্বে বিপ্লবের বীজ বপন করে ও তারুণ্যকে বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করেছে। কিন্তু কেন ও কোন উদ্দেশ্যে তারুণ্যের এই সংগ্রামকে জুলাই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হলো না?’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকালের ভাষণে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, ‘এতে ১/১১ সৃষ্টির ধোঁয়াশা কেটে গেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকও বক্তব্য দেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, সরকার নূরে এরশাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।

আরও পড়ুনঅংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করবে গণ অধিকার পরিষদ০৩ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ