প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রয়োজন ছাত্র সংসদ নির্বাচন
Published: 7th, August 2025 GMT
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু শ্রেণিপাঠে নয়, বরং রাজনীতিতেও অবদান রাখছেন। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফলে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি রেজিস্ট্যান্ট ডে’ ঘোষণা করেছে।
ঢাকসু নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে সবদিকেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হলো—যেসব শিক্ষার্থীরা ভেঙে পড়া একটি বিপ্লবকে ফের ঘুরিয়ে এনেছিলেন, তারা ছিলেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর সেই—প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা কেবল সময়ের দাবি নয়, বরং শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে।
একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন, তিনি শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান অর্জনের জন্য আসেন না—তাঁর মধ্যে নেতৃত্ব, সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়। এসব গুণের বিকাশে একটি সক্রিয় ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ভূমিকা অপরিসীম।
আরো পড়ুন:
খুবিতে শহীদ মীর মুগ্ধ আন্তঃডিসিপ্লিন ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু
জবিতে বাস সংকট চরমে, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
ছাত্র সংসদ রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিক তৈরি করতে সহায়তা করে। এটি কোনো দলীয় রাজনীতির স্থান নয়, বরং নীতি, ন্যায় ও অধিকার আদায়ের একটি গণতান্ত্রিক অনুশীলন মঞ্চ। শিক্ষার্থীরা এখানে শেখেন কীভাবে নিজস্ব মতামত গঠন করতে হয়, কীভাবে অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয় এবং কীভাবে নেতৃত্ব দিয়ে সমষ্টিগতভাবে সমস্যার সমাধানে পৌঁছানো যায়।
এছাড়া, ছাত্র সংসদ সামাজিক সংহতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন বিভাগ ও পটভূমি থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতা, সহযোগিতা ও সৌহার্দ্য গড়ে তুলতে এটি ভূমিকা রাখে। সহশিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা কিংবা সমাজসেবামূলক কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা জাগ্রত হয়।
সবচেয়ে বড় কথা, একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ গণতান্ত্রিক চেতনার বাস্তব অনুশীলনের সুযোগ দেয়। নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন, মতবিনিময়, জবাবদিহিতা ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা শেখেন—গণতন্ত্র মানে কেবল ভোট নয়, বরং একটি মানসিকতা ও মূল্যবোধ। যা মানুষকে সঠিক পথে চালিত করে।
অতএব, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা কেবল ছাত্রস্বার্থ নয়, একটি শিক্ষিত, সচেতন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক প্রজন্ম গঠনের জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি শিক্ষার পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করার এক শক্তিশালী মাধ্যম।
(লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম)
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণত ন ত র ক
এছাড়াও পড়ুন:
চিহ্নিত গণহত্যাকারীদের ছবি প্রদর্শন করে ঢাবিকে কলঙ্কিত করেছে শিবির, বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবসে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও গণহত্যাকারীদের ছবি প্রদর্শন করে জাতির গৌরবময় ইতিহাসকে ইসলামী ছাত্রশিবির বিকৃত করেছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠন হিসেবে ক্যাম্পাসে শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি তামজিদ হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকারের পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেছে সংগঠনটি।
ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়, ’৯০–এর সামাজিক চুক্তি অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক-ফ্যাসিস্ট সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্লজ্জভাবে শিবিরকে নরমালাইজ করার চেষ্টা করেছে। ঢাবি প্রক্টরের পক্ষপাতমূলক আচরণ শিবিরের এই জঘন্য কাজকে উৎসাহিত করেছ। তাঁর এ রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক আচরণ আগামী দিনের সহাবস্থানের রাজনীতি তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ঢাবি প্রক্টর ক্যাম্পাসের ভেতরে তোফাজ্জল ও সাম্য হত্যাকাণ্ড, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূলক গ্রাফিতি মুছে ফেলা, চারুকলার ভেতরে ঢুকে শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন দেওয়া, একাধিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আমলে না নেওয়াসহ নানা অভিযোগের সুষ্ঠু বিচারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অতএব ঢাবি প্রক্টরকে অপসারণ না করলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মতোই শিবিরের দলীয় আধিপত্য কায়েম হবে।’
চব্বিশের নাম দিয়ে একাত্তরকে অবমূল্যায়নের মাধ্যমে ছাত্রশিবির জুলাই গণ–অভ্যুত্থান পরিপন্থী অবস্থান নিয়েছে বলে বলা হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পুর্নবাসনের সুযোগ পেয়ে স্বাধীনতাবিরোধী গণহত্যকারীদের উদ্যাপনের চেষ্টা গণ–অভ্যুত্থানকে জনতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের পকেটস্থ করার অপচেষ্টা বলে আমরা মনে করি। এর আগেও ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করে তাদের নিজস্ব প্রকাশনায় বিতর্কিত লেখা ছেপে বাংলাদেশবিরোধী রাজনীতি জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’