দক্ষিণ–পূর্ব স্পেনের একটি শহরে ক্রীড়া সেন্টারে প্রকাশ্য ধর্মীয় জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানত সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে লক্ষ্য করে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। স্পেনের বামপন্থী কেন্দ্রীয় সরকার এই নিয়মের তীব্র সমালোচনা করেছে। নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তাও।

স্পেনের অভিবাসনমন্ত্রী এরমা সাইজ গতকাল শুক্রবার বলেন, গত সপ্তাহে জুমিল্লার রক্ষণশীল স্থানীয় সরকার নতুন যে নিয়ম অনুমোদন করেছে, সেটা লজ্জাজনক। তিনি স্থানীয় নেতাদের ‘পিছিয়ে আসা’ এবং সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

এ নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছেন শহরটির মধ্য–ডানপন্থী পপুলার পার্টির মেয়র। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শহরটিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো ধর্মীয় ছুটি উদ্‌যাপনের জন্য ক্রীড়া সেন্টারগুলো ব্যবহার করতেন। এ ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।

নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবটি মূলত এসেছে কট্টর–ডানপন্থী ভক্স পার্টির কাছ থেকে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার আগে সেটার সংশোধনীগুলো পাস করানো হয়েছে। দেশটির মার্সিয়া অঞ্চলে ভক্স পার্টির একটি শাখা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এক এক্স পোস্টে বলেছে, ‘স্পেন খ্রিষ্টান শিকড়ের দেশ এবং সব সময় তাই থাকবে!’

শহরের মেয়র সেভ গঞ্জালেস স্পেনের এল পাইস সংবাদপত্রকে বলেন, ‘কোনো একটি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে আলাদাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। বরং যা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির চিহ্ন বহন করে, তা রক্ষায় প্রচার চালাতে চায় স্থানীয় সরকার।’

স্পেনের ইসলামিক কমিউনিটি ইউনিয়নের সেক্রেটারি মোহাম্মদ এল গাইদৌনি বলেন, নতুন এ নিষেধাজ্ঞা প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামোফোবিয়ার মতোই। সেই সঙ্গে স্থানীয় মুসলিমদের ধর্মীয় জমায়েতগুলো ‘শহরের নিজস্ব পরিচয়ের সঙ্গে যায় না’ বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যে মত দিয়েছে; সেটার নিন্দা জানান তিনি।

মোহাম্মদ এল গাইদৌনি আরও বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞা স্পেনের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের সঙ্গে সংঘর্ষিক।’

ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত মিগুয়েল মোরাটিনোস বলেন, তিনি জুমিল্লা সিটি কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে মর্মাহত। সেই সঙ্গে তিনি স্পেনের কিছু এলাকায় জেনোফোবিক বক্তব্য এবং ইসলামোফোবিক মনোভাব বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এক বিবৃতিতে গতকাল মিগুয়েল মোরাটিনোস বলেন, এ সিদ্ধান্ত ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত থাকা চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ক্ষুণ্ন করে।’ তিনি আরও বলেন, একটি সম্প্রদায়কে আলাদা করে বা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে, এমন নীতি সামাজিক সংহতির জন্য হুমকি। সেই সঙ্গে সবাই মিলে শান্তিতে বাস করার অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সাম্প্রতিক এ নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, শহরটির ক্রীড়া সেন্টারগুলো শুধু খেলাধুলা এবং স্থানীয় সরকারের আয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। সিটি কাউন্সিলের বাইরের কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় আয়োজন করা যাবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় সরক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঠাকুরগাঁও-২ আসনে দলীয় প্রার্থী চান বিএনপির নেতা–কর্মীরা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে (বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার আংশিক) ১৯৯৬ সালের পর থেকে নিজ দলের প্রার্থী পাননি বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। জোটের হিসাব–নিকাশে পড়ে ২০০১ সাল থেকে সেখানে বরাবর জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে ছাড় দিয়েছে দলটি। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এবার আর শরিক কোনো দলকে ছাড় দিতে চায় না বিএনপি।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আসনটি বারবার শরিকদের ছেড়ে দেওয়ায় মাঠপর্যায়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিএনপির। এবার সেটার অবসান চান তাঁরা। এবার নির্বাচনে এ আসন অন্য কোনো দলকে দেওয়া হলে তৃণমূল পর্যায়ে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও-২ আসনটি বরাবর আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকদের দখলে ছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এখানে মির্জা রুহুল আমিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে ১৫-দলীয় জোটের প্রার্থী নির্বাচিত হন দবিরুল ইসলাম। ১৯৮৮ সালে আসনটি দখলে নেয় জাতীয় পার্টি। সেবার সেখানে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হন মির্জা রুহুল আমিন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হয়ে দবিরুল ইসলাম আসনটি পুনরুদ্ধারের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর পর থেকে আসনটি দবিরুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে মাজহারুল ইসলামের দখলে ছিল। এই আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন আলতাফুর রহমান এবং ১৯৯৬ সালে জুলফিকার মর্তুজা চৌধুরী। তবে সেবার নির্বাচনে তাঁরা প্রত্যাশিত ফলাফল পাননি। এর পর থেকে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন শুরু করতে গিয়ে আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ায় বিএনপির কেউ এ আসনে প্রার্থী হতে পারেননি। ছাড় পেয়ে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হন আব্দুল হাকিম। বিএনপির সমর্থন নিয়ে আব্দুল হাকিম কেবল ভোটের ব্যবধান কমিয়েছেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি। এতে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই আসনের জাতীয়তাবাদী চেতনার মানুষ এখন অবহেলিত। এর পেছনের কারণ, দীর্ঘদিন বিএনপির কোনো নেতাকে সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকাবাসী পাননি। বিএনপির নেতা-কর্মীরা জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজেদের ভোট জামায়াতের বাক্সে তুলে দিয়েছেন। এরপরও ইতিবাচক ফল আসেনি। এবার জামায়াত আলাদা নির্বাচন করায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝে আশা জেগে ওঠে। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী মাঠ সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সক্রিয় হয়ে ওঠেন কর্মীরা।

৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ঘোষণার এক পর্যায়ে তিনি ইঙ্গিত দেন, যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেখানে বিএনপির সঙ্গে যেসব দল যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তারা আসতে পারে। এ ঘোষণায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা তাঁতী দলের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে সংসদ নির্বাচনে আমরা দলীয় কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারিনি। যদিও জেতার মতো আবস্থান ছিল বিএনপির। আমরা নিজেরা পরিশ্রম দিয়ে জামায়াতের ভিত মজবুত করেছি। এবার জামায়াত না থাকায় নেতা-কর্মীরা আশায় বুক বেঁধে ছিল। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণা না দেওয়ায় আমরা আবারও হতাশ। এবার বিএনপির প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে মেনে নেব না।’

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জুলফিকার আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই আসনটি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত-নির্যাতিত হয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর নির্বাচনে বিএনপির জনপ্রতিনিধি পাব—এমনটাই আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছি। এবার দলীয় কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া না হলে আসনটি হারানোর আশঙ্কা দেখছি।’

আবুল হাশেম নামে হরিপুর উপজেলার এক বিএনপির কর্মী বলেন, ‘হামা বিএনপি পাগল। অনেক বছর ধানের শীষে ভোট দিবা পারুনি। হামার লোক না থাকিলে অন্যঠে ভোট দিবা যামোনি।’ বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে জোটের প্রার্থী জামানত হারাবেন বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

একই উপজেলার আরেক বিএনপির কর্মী কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপির মহাসচিব এখানে সরাসরি নির্বাচন করুক। আর তা না হলে তাঁর পরিবারের অন্য কাউকে প্রার্থী করা হোক। আমরা এবার দলের বাইরে কোনো প্রার্থীকে ভোট দেব না।’

হরিপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, ‘আমরা এবার এ আসনে ধানের শীষ মার্কারই (বিএনপি) প্রার্থী চাই। সে যে–ই হোক। এভাবে চলতে থাকলে দল ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা অন্তত এবার আশা করছি, আমাদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। শরিক দলের কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এলাকার মানুষ মানবে কেন?’

এবারের নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য জুলফিকার মর্তুজা চৌধুরী।

জুলফিকার মর্তুজা চৌধুরী বলেন, ‘যেসব দল যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, এই আসনে তাদের অবস্থান একেবারে নেই বললেই চলে। বিএনপি ছাড়া অন্য দলকে আসনটি ছেড়ে দিলে তারা জয়লাভ করতে পারবে না। এসব নিয়ে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছি। আমাদের দলের নেতারা পাল্লা পাল্লা করতে গিয়ে নিজের দলের প্রতীকটাই ভুলতে বসেছিলেন। এখন সুযোগ এসেছে। আমরা চাই দলের প্রার্থী। দলের প্রার্থী পেলে এই আসনে সহজেই বিএনপি জয়ী হবে। কারণ, এখানে জামায়াত যে ভোট পায়, তার বেশির ভাগই আমাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের।’

মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, ‘ওই আসনে দীর্ঘদিন আমার বাবা সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর সেখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। পরে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার কারণে জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপি নেতা-কর্মীরা এবারের নির্বাচনে আমাদের পরিবার থেকে একজনকে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন। এসব বিবেচনা করে দল সেখানে এখনো কোনো প্রার্থী দেয়নি। ওই আসনে দলীয় প্রার্থীই নির্বাচন করবেন। আসনটি জোটকে ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জনটি সঠিক নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ