ফেরত গেল বিদ্যালয় সংস্কারের টাকা
Published: 14th, August 2025 GMT
ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের ধলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের নিচতলা গত বছরের বন্যায় পুরোপুরি তলিয়ে গিয়েছিল। ভবনের তিনটি শ্রেণিকক্ষের ব্যাপক ক্ষতি হয় সে সময়। শ্রেণিকক্ষের মেঝের পলেস্তারা ভেঙে গেছে। কিছু বেঞ্চ পানিতে নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে আসবাব। এ অবস্থায় বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও সংস্কার হয়নি। মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেছে বরাদ্দ করা টাকা। সংস্কার না হওয়ায় ভাঙাচোরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকেরা।
২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ধলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য বিদ্যালয়গুলোর দশাও এই বিদ্যালয়ের মতোই। এসব বিদ্যালয় সংস্কারে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। সংস্কারের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল এ বছরের ৩০ জুন। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার এই সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শুরুই হতে পারেনি। এ কারণে বরাদ্দ করা সাড়ে ১২ কোটি টাকাই ফেরত গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, ৬ উপজেলার মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারের বিপরীতে ৪ কোটি ৯৭ টাকা, সোনাগাজীতে ১০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ছাগলনাইয়ায় ৬৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, দাগনভূঞায় ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৩ লাখ ১২ হাজার টাকা, ফুলগাজীতে ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৫৪ লাখ টাকা ও পরশুরামে ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৫ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। দেড় লাখ টাকার নিচে বরাদ্দ করা ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কারকাজ হয়েছে দরপত্র জটিলতা না থাকায়। অপর ২৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ করা সাড়ে ১২ কোটি টাকা ফেরত গেছে।
বন্যার ক্ষত নিয়ে চলছে পাঠদান
ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের পশ্চিম ছিলোনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই সময়ে প্রায় ৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় বিদ্যালয়টি। বন্যায় বিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, প্রিন্টার, বৈদ্যুতিক লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আসবাবের মধ্যে দুটি কক্ষের মাঝে পার্টিশন বোর্ড, ক্যাবিনেট, আলমারিসহ সব আসবাব নষ্ট হয়ে যায়।
সোমবার সকালে গিয়েও বিদ্যালয়টিতে বন্যার ক্ষত দেখা গেছে। বিদ্যালয়ে মেঝের পলেস্তারা উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের দরজা খুলে গেছে। ভবনের লোহার গেটও ভাঙা। বর্তমানে বিদ্যালয়টির একতলা দুটি ভবনের ছয়টি কক্ষে কোনোরকমে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক কিশোর চক্রবর্তী বলেন, বন্যা-পরবর্তী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসে বিদ্যালয় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে যাওয়ার কথা থাকলেও এক বছরেও তা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে।
একই অবস্থায় স্কুলটির পার্শ্ববর্তী মাইজবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিগত বন্যায় ওই বিদ্যালয় পানিতে নিমজ্জিত ছিল। বিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত আসবাবগুলো এখনো একটি কক্ষে ফেলে রাখা হয়েছে।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ মামুন বলেন, বন্যায় বিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলজিইডির প্রকৌশলীরা পরিদর্শন শেষে প্রতিষ্ঠানটির নাম পাঠালেও সংস্কার হয়নি।
দায় নিতে চাইছে না কেউ
সংস্কারকাজের অর্থ ফেরত যাওয়ার ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) দুষছেন। এ প্রসঙ্গে ফেনী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খালেদা পারভীন বলেন, তাঁর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারের বিপরীতে প্রায় ৫ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে দেড় লাখ টাকার নিচে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু সংস্কারকাজ হয়েছে।
ফেনীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এ কাজে এলজিইডিকে যুক্ত করতে প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়নি। যে কারণে জটিলতা তৈরি হয়।’
তবে জটিলতা দূর করে বিদ্যালয়গুলোর সংস্কার দ্রুত শুরু করা হবে বলে জানান ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা।
তিনি বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি, চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসের মধ্যে অর্থ ফেরত পেলে নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল স স ক রক জ ব দ য লয়ট বর দ দ দ উপজ ল র র উপজ ল বন য য় সরক র আসব ব ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
১৯ শতকে স্যুটকেস যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো
১৯ শতকের আধুনিক জীবন যাপনের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছিলো স্যুটকেস। আজকের দিনে যেমন— কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সঙ্গী হয় ট্রলি ব্যাগ। সে সময় সঙ্গী হতো স্যুটকেস। বর্তমানে ট্রলি ব্যাগে কফির কাপ রাখার জায়গা থেকে শুরু করে মোবাইল চার্জিংয়ের ব্যবস্থাও থাকে। এতোটা সুযোগ সুবিধা আবার স্যুটকেসে ছিলো না।
এখনও অনেক বাড়িতে পুরনো স্যুটকেস রয়ে গেছে। শক্ত কভারের স্যুটকেসে থাকত তালাচাবি দেওয়ার ব্যবস্থা। এতে সহজেই নিজের জিনিস পত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত। কোনো কোনো স্যুটকেসের সঙ্গেই তালা থাকত।
১৯ শতকের দিকে কোথায় ঘুরবে বা বেড়াতে গেলে সাধারণত ফর্মাল বা আনুষ্ঠানিক পোশাক পরার চল ছিলো। সে সব পোশাক এমন যত্নে রাখতে হতো, যাতে কুঁচকে না যায়। লোকসমাজে কুঁচকানো পোশাক পরাকে মানসম্মত উপায় মনে করা হতো না। পোশাক যত্ন সহকারে সংরক্ষণ ও বহন করার জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ট্রাঙ্কের মতো আয়তাকার স্যুটকেস। মূলত তরুণেরাই এই অনুসঙ্গটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলো।
আরো পড়ুন:
ভারতের যে গ্রামের পুরুষরা দুই বিয়ে করেন
আধা ঘণ্টার বেশি মোবাইল দেখার সুযোগ নেই, ক্ষুব্ধ সন্ন্যাসীরা
ঢাকা/লিপি