ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের ধলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের নিচতলা গত বছরের বন্যায় পুরোপুরি তলিয়ে গিয়েছিল। ভবনের তিনটি শ্রেণিকক্ষের ব্যাপক ক্ষতি হয় সে সময়। শ্রেণিকক্ষের মেঝের পলেস্তারা ভেঙে গেছে। কিছু বেঞ্চ পানিতে নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে আসবাব। এ অবস্থায় বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও সংস্কার হয়নি। মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেছে বরাদ্দ করা টাকা। সংস্কার না হওয়ায় ভাঙাচোরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকেরা।

২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ধলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য বিদ্যালয়গুলোর দশাও এই বিদ্যালয়ের মতোই। এসব বিদ্যালয় সংস্কারে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। সংস্কারের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল এ বছরের ৩০ জুন। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার এই সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শুরুই হতে পারেনি। এ কারণে বরাদ্দ করা সাড়ে ১২ কোটি টাকাই ফেরত গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, ৬ উপজেলার মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারের বিপরীতে ৪ কোটি ৯৭ টাকা, সোনাগাজীতে ১০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ছাগলনাইয়ায় ৬৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, দাগনভূঞায় ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৩ লাখ ১২ হাজার টাকা, ফুলগাজীতে ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৫৪ লাখ টাকা ও পরশুরামে ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৫ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। দেড় লাখ টাকার নিচে বরাদ্দ করা ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কারকাজ হয়েছে দরপত্র জটিলতা না থাকায়। অপর ২৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ করা সাড়ে ১২ কোটি টাকা ফেরত গেছে।

বন্যার ক্ষত নিয়ে চলছে পাঠদান

ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের পশ্চিম ছিলোনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই সময়ে প্রায় ৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় বিদ্যালয়টি। বন্যায় বিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, প্রিন্টার, বৈদ্যুতিক লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আসবাবের মধ্যে দুটি কক্ষের মাঝে পার্টিশন বোর্ড, ক্যাবিনেট, আলমারিসহ সব আসবাব নষ্ট হয়ে যায়।

সোমবার সকালে গিয়েও বিদ্যালয়টিতে বন্যার ক্ষত দেখা গেছে। বিদ্যালয়ে মেঝের পলেস্তারা উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের দরজা খুলে গেছে। ভবনের লোহার গেটও ভাঙা। বর্তমানে বিদ্যালয়টির একতলা দুটি ভবনের ছয়টি কক্ষে কোনোরকমে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক কিশোর চক্রবর্তী বলেন, বন্যা-পরবর্তী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসে বিদ্যালয় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে যাওয়ার কথা থাকলেও এক বছরেও তা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে।

একই অবস্থায় স্কুলটির পার্শ্ববর্তী মাইজবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিগত বন্যায় ওই বিদ্যালয় পানিতে নিমজ্জিত ছিল। বিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত আসবাবগুলো এখনো একটি কক্ষে ফেলে রাখা হয়েছে।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ মামুন বলেন, বন্যায় বিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।   এলজিইডির প্রকৌশলীরা পরিদর্শন শেষে প্রতিষ্ঠানটির নাম পাঠালেও সংস্কার হয়নি।

দায় নিতে চাইছে না কেউ

সংস্কারকাজের অর্থ ফেরত যাওয়ার ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) দুষছেন। এ প্রসঙ্গে ফেনী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খালেদা পারভীন বলেন, তাঁর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারের বিপরীতে প্রায় ৫ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে দেড় লাখ টাকার নিচে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু সংস্কারকাজ হয়েছে।

ফেনীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এ কাজে এলজিইডিকে যুক্ত করতে প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়নি। যে কারণে জটিলতা তৈরি হয়।’

তবে জটিলতা দূর করে বিদ্যালয়গুলোর সংস্কার দ্রুত শুরু করা হবে বলে জানান ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা।

তিনি বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি, চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসের মধ্যে অর্থ ফেরত পেলে নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল স স ক রক জ ব দ য লয়ট বর দ দ দ উপজ ল র র উপজ ল বন য য় সরক র আসব ব ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ বিশ্বকাপ: ৩২ দল নিশ্চিত, টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায় ১৬

২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো- এই তিন দেশে আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ে বসছে ফুটবলের ২৩তম মহাযজ্ঞ। ইতিহাসে এবারই প্রথম ৪৮ দল নিয়ে হতে যাচ্ছে টুর্নামেন্টের মূল পর্ব।

বাছাই পর্বের লড়াই শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপের টিকিট পকেটে পুরে ফেলেছে ৩২ দল। বাকি ১৬ জায়গা এখনো খোলা। যেগুলোর মালিকানা নির্ধারণ হবে মার্চের প্লে-অফে। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন চলছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচ, দাবায় উত্তেজনাপূর্ণ গাণিতিক হিসাব।

আরো পড়ুন:

পূর্ণ ২৪ পয়েন্ট ও কোনো গোল হজম না করেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড

অদম্য স্পেন বিশ্বকাপের দোরগোড়ায়

ইউরোপে রোমাঞ্চ, ইতালির সামনে কঠিন পথ:
রবিবার ইউরোপিয়ান বাছাইয়ে দুই বড় জয়ের মধ্য দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে নরওয়ে ও পর্তুগাল। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে নরওয়ে নিশ্চিত করেছে তাদের জায়গা। অন্যদিকে আর্মেনিয়ার জালে গোলের বন্যা বইয়ে ৯-১ ব্যবধানে বড় জয় তুলে নিয়ে টিকিট নিশ্চিত করেছে পর্তুগালও।

ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, পর্তুগাল ও নরওয়ে জায়গা পেয়ে গেলেও স্পেন, জার্মানি, বেলজিয়ামদের অপেক্ষা এখনো শেষ হয়নি। আর ইতালিকে যেতে হবে মহাদেশীয় প্লে-অফের কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে।

এশিয়া-আফ্রিকা-দক্ষিণ আমেরিকা: কোটা পূর্ণ
এশিয়া থেকে আটটি দল ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার, উজবেকিস্তান। আরেকটি সুযোগ আছে প্লে-অফে। যেখানে লড়বে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরাক।

দক্ষিণ আমেরিকা থেকেও নির্ধারিত ছয় দলের সবাই জায়গা পেয়ে গেছে- আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও প্যারাগুয়ে। বলিভিয়া অপেক্ষায় আছে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের।

আফ্রিকা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ৯ দলের কোটা পূরণ করেছে- আলজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, মিশর, ঘানা, মরক্কো, তিউনিসিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেপ ভার্দে ও সেনেগাল। প্লে-অফে সুযোগ পেয়েছে কঙ্গো।

ওশেনিয়া ও কনকাকাফে শেষ লড়াই:
ওশেনিয়া অঞ্চলে নিশ্চিত হয়েছে নিউ জিল্যান্ড। নিউ ক্যালেডোনিয়া যাবে প্লে-অফে।

কনকাকাফে আয়োজক তিন দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো আগেই নিশ্চিত। বাকি তিন আসনের দৌড়ে এগিয়ে আছে সুরিনাম, কুরাসাও ও হন্ডুরাস। দু’টি দল পাবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ খেলার সুযোগ।

চূড়ান্ত প্লে-অফ: মার্চে ভাগ্য নির্ধারণ
মার্চ ২০২৬ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের শেষ এবং সবচেয়ে নাটকীয় লড়াই- ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্লে-অফ।

এখানের ৬ দলের মধ্য থেকে দুটি দল পাবে মূল পর্বের শেষ দুটি টিকিট।
অংশ নেবে—
১টি দল আফ্রিকা থেকে
১টি এশিয়া থেকে
২টি কনকাকাফ থেকে
১টি ওশেনিয়া থেকে
১টি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে।

এই ম্যাচগুলো আয়োজক দেশের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে, টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি যাচাইয়ের অংশ হিসেবে।

৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ড্র:
সব দল চূড়ান্ত হওয়ার পর ৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। এরপরই জানা যাবে কোন দল কোন গ্রুপে। আর কাদের বিপক্ষে শুরু হবে ফুটবলের পরবর্তী মহাযুদ্ধ। 

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ