এনসিসি ব্যাংকের ৩২ বছরের দীর্ঘ পথচলায় যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাইলফলক। গত বছর প্রতিষ্ঠানটিকে শীর্ষস্থানীয় টেকসই ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে এনসিসি ব্যাংকের একটি সমন্বিত ও পরিকল্পিত অগ্রযাত্রা। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে টেকসই উন্নয়নের স্পষ্ট রূপরেখা নির্ধারণ করেছে। এতে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

গ্রাহকসেবার পাশাপাশি টেকসই ব্যাংকিংয়ের মানদণ্ড পূরণে এনসিসি ব্যাংকের প্রতিটি শাখা ও উপশাখা নিরলসভাবে কাজ করেছে। বিজনেস ডিভিশন নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করেছে, যা ব্যাংকের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশ সচেতনতা—দুই দিকেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগ সতর্ক ও দায়িত্বশীল ঋণ বিতরণ নীতি অনুসরণ করে ঝুঁকি কমিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ব্যাংকের ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত করে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব সেবা নিশ্চিত করেছে। ডিএফএস (ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস) টিম দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পরিধি বাড়িয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সহায়ক বিভাগ ও কর্মীরা নিজেদের দায়িত্বের বাইরে গিয়েও সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, যার ফলে এনসিসি ব্যাংক টেকসই ব্যাংকিংয়ের সব সূচকে উৎকর্ষ অর্জন করেছে। 

টেকসই অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবেশবান্ধব খাতের ঋণ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এনসিসি ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন নিয়ে দেশে এখনো সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই অভাব দূর করতে এনসিসি ব্যাংক একটি আকর্ষণীয় ও তথ্যসমৃদ্ধ প্রচারপত্র তৈরি করেছে। এতে পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের ধারণা, গুরুত্ব ও কোন কোন খাতে এই অর্থায়ন প্রযোজ্য—তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফলে গ্রাহকেরা সহজেই পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে কাঙ্ক্ষিত পণ্যের জন্য আবেদন করতে পারছেন। 

আমরা লক্ষ করেছি যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবেশবান্ধব পুনঃ অর্থায়ন নিয়ে অনেক গ্রাহকই পরিষ্কারভাবে অবগত নন। এই পুনঃ অর্থায়নের সুযোগ–সুবিধা ও প্রক্রিয়া প্রচারপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ঋণ প্রক্রিয়াকরণের সময় ব্যাংকের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের দিকে উৎসাহিত করেন, যাতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ে। পরিবেশবান্ধব পুনঃ অর্থায়ন নিয়ে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হচ্ছে—এটির আবেদন প্রক্রিয়া অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ, বাস্তবে এটি সঠিক ধারণা নয়। এনসিসি ব্যাংক এই ভুল ধারণা দূর করতে কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংক উভয়ই ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়াটি সহজ ও দ্রুত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফলে স্বল্পতম সময়ে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে, যা গ্রাহকদের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি দেশের পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যও সহায়ক। 

সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রেও এনসিসি ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যাংক নিয়মিতভাবে অবদান রাখছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে এনসিসি ব্যাংক দেশজুড়ে ‘এনসিসি নিসর্গ: আপনার পাশে, সবুজের পথে’ শিরোনামে একটি ব্যতিক্রমী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে একটি করে চারা গাছ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বৃক্ষ পরিচর্যার গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়ার পাশাপাশি সবুজায়নে সরাসরি অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছে। এই কার্যক্রম তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি অনুপ্রাণিত করছে, যা একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করবে।


নিঘাত মমতাজ
হেড অব সাসটেইনেবল ব্যাংকিং, এনসিসি ব্যাংক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক র য় পর ব শ ট কসই এনস স

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ বিশ্বকাপ: ৩২ দল নিশ্চিত, টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায় ১৬

২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো- এই তিন দেশে আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ে বসছে ফুটবলের ২৩তম মহাযজ্ঞ। ইতিহাসে এবারই প্রথম ৪৮ দল নিয়ে হতে যাচ্ছে টুর্নামেন্টের মূল পর্ব।

বাছাই পর্বের লড়াই শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপের টিকিট পকেটে পুরে ফেলেছে ৩২ দল। বাকি ১৬ জায়গা এখনো খোলা। যেগুলোর মালিকানা নির্ধারণ হবে মার্চের প্লে-অফে। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন চলছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচ, দাবায় উত্তেজনাপূর্ণ গাণিতিক হিসাব।

আরো পড়ুন:

পূর্ণ ২৪ পয়েন্ট ও কোনো গোল হজম না করেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড

অদম্য স্পেন বিশ্বকাপের দোরগোড়ায়

ইউরোপে রোমাঞ্চ, ইতালির সামনে কঠিন পথ:
রবিবার ইউরোপিয়ান বাছাইয়ে দুই বড় জয়ের মধ্য দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে নরওয়ে ও পর্তুগাল। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে নরওয়ে নিশ্চিত করেছে তাদের জায়গা। অন্যদিকে আর্মেনিয়ার জালে গোলের বন্যা বইয়ে ৯-১ ব্যবধানে বড় জয় তুলে নিয়ে টিকিট নিশ্চিত করেছে পর্তুগালও।

ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, পর্তুগাল ও নরওয়ে জায়গা পেয়ে গেলেও স্পেন, জার্মানি, বেলজিয়ামদের অপেক্ষা এখনো শেষ হয়নি। আর ইতালিকে যেতে হবে মহাদেশীয় প্লে-অফের কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে।

এশিয়া-আফ্রিকা-দক্ষিণ আমেরিকা: কোটা পূর্ণ
এশিয়া থেকে আটটি দল ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার, উজবেকিস্তান। আরেকটি সুযোগ আছে প্লে-অফে। যেখানে লড়বে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরাক।

দক্ষিণ আমেরিকা থেকেও নির্ধারিত ছয় দলের সবাই জায়গা পেয়ে গেছে- আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও প্যারাগুয়ে। বলিভিয়া অপেক্ষায় আছে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের।

আফ্রিকা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ৯ দলের কোটা পূরণ করেছে- আলজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, মিশর, ঘানা, মরক্কো, তিউনিসিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেপ ভার্দে ও সেনেগাল। প্লে-অফে সুযোগ পেয়েছে কঙ্গো।

ওশেনিয়া ও কনকাকাফে শেষ লড়াই:
ওশেনিয়া অঞ্চলে নিশ্চিত হয়েছে নিউ জিল্যান্ড। নিউ ক্যালেডোনিয়া যাবে প্লে-অফে।

কনকাকাফে আয়োজক তিন দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো আগেই নিশ্চিত। বাকি তিন আসনের দৌড়ে এগিয়ে আছে সুরিনাম, কুরাসাও ও হন্ডুরাস। দু’টি দল পাবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ খেলার সুযোগ।

চূড়ান্ত প্লে-অফ: মার্চে ভাগ্য নির্ধারণ
মার্চ ২০২৬ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের শেষ এবং সবচেয়ে নাটকীয় লড়াই- ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্লে-অফ।

এখানের ৬ দলের মধ্য থেকে দুটি দল পাবে মূল পর্বের শেষ দুটি টিকিট।
অংশ নেবে—
১টি দল আফ্রিকা থেকে
১টি এশিয়া থেকে
২টি কনকাকাফ থেকে
১টি ওশেনিয়া থেকে
১টি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে।

এই ম্যাচগুলো আয়োজক দেশের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে, টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি যাচাইয়ের অংশ হিসেবে।

৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ড্র:
সব দল চূড়ান্ত হওয়ার পর ৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। এরপরই জানা যাবে কোন দল কোন গ্রুপে। আর কাদের বিপক্ষে শুরু হবে ফুটবলের পরবর্তী মহাযুদ্ধ। 

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ