‘আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড়াতে’ থানায় জামায়াত নেতা, ফেসবুকে লাইভের পর কর্মী বহিষ্কার
Published: 19th, September 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জামায়াতে ইসলামী। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে জামায়াতের একজন নেতা চেষ্টা করছেন ফেসবুক লাইভে এসে—এমন অভিযোগ তোলার পর তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। গত বুধবার রাতে বহিষ্কারের ঘটনাটি ঘটলেও গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে।
দল থেকে বহিষ্কার করা ওই ব্যক্তির নাম মো.
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ও ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সেলিমকে থানায় সোপর্দ করেন পৌর জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। তখন উপজেলা জামায়াতের রুকন মো. জাহাঙ্গীরও থানায় যান। এ সময় রুবেল আনসারী ফেসবুকে লাইভে আসেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের ওই নেতাকে ছাড়াতে মো. জাহাঙ্গীর থানায় এসেছেন।
পুলিশ জানায়, মোহাম্মদ সেলিম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলাটি গত বছর ৫ আগস্টের পর হয়েছে। বর্তমানে সেলিম কারাগারে রয়েছেন।
বহিষ্কার হওয়া জামায়াত কর্মী রুবেল আনসারীর অভিযোগ, সত্যি কথা বলায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজেই আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরে থানায় নিয়েছি। এ সময় আমার সঙ্গে দলের অন্তত ১০ জন কর্মী ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগ নেতাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। দলের দায়িত্বশীলেরা কোনো রকম তদন্ত না করে এ ঘটনায় আমাকে বহিষ্কার করেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জামায়াতের রুকন মো. জাহাঙ্গীরের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে রুবেলের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উপজেলা জামায়াতের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রুবেল আনসারী ফেসবুক লাইভে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা ভিত্তিহীন। এর ফলে সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা জামায়াতের আমির মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রুবেল আনসারী দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাই দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সিদ্ধান্তে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব ল আনস র ফ সব ক উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
মনোনয়ন পেয়েই খুলনায় বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর খুলনায় বিএনপির প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। দলের ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের জন্য ভোট প্রার্থনা করে দোয়া মাহফিল, মোটর শোভাযাত্রা এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা শুরু হয়েছে।
খুলনায় ছয়টি সংসদীয় আসন রয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপি ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করে। একটি আসন স্থগিত রেখেছে।
মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- খুলনা-২ আসনে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৩ আসনে রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আসনে আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা-৫ আসনে আলী আসগর লবি এবং খুলনা-৬ আসনে খুলনা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী। তবে, খুলনা-১ আসনের প্রার্থী এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং মনিরুল হাসান বাপ্পির মনোনয়নকে নতুন চমক বলে অভিহিত করেছে।
সূত্র মতে, খুলনা-২ আসনে প্রত্যাশীদের মধ্যে নগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলমসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা মনোনয়ন ছিলেন। তবে, দল মঞ্জুকে বেছে নিয়েছে। যিনি ২০২৩ সাল থেকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যহতিপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু নগরীতে তার অনুসারীর সংখ্যা রয়েছে প্রচুর।
অনুভূতি প্রকাশ করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘‘দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের আস্থা ও স্বীকৃতির জন্য কৃতজ্ঞ।’’
খুলনা-৩ আসনে দলের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। যিনি আগে একই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
খুলনা-৪ আসনে বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিকের মধ্যে মনোনয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। কিন্তু দলটি অবশেষে হেলালকে মনোনয়ন দেয়।
খুলনা-৫ আসনে প্রাক্তন এমপি এবং প্রাক্তন বিসিবি সভাপতি আলী আসগর লবিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
তবে, সবচেয়ে বড় চমকটি এসেছে খুলনা-৬ আসনে। যেখানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, বাসস চেয়ারম্যান আনোয়ার আল-দীন এবং স্থানীয় নেতা ডা. আব্দুল মজিদ এবং রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র বিএনপি নেতাকে সামনের দৌড়ে দেখা গেছে। তবুও দলটি মনিরুল হাসান বাপ্পিকে বেছে নিয়েছে। যিনি সম্প্রতি জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব নিযুক্ত হয়েছেন।
মনোনয়নের কথা স্মরণ করে বাপ্পী বলেন, “আমি ৩৫ বছর ধরে এই দলে আছি। ছাত্রদল থেকে যুবদল ও বিএনপি। আমি সবসময় হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নেমেছি। দল আমার ত্যাগ স্বীকার করেছে। এই মনোনয়ন প্রমাণ করে যে নিষ্ঠা কখনও বৃথা যায় না।”
এদিকে, মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার থেকে খুলনার নির্বাচনী এলাকায় এরইমধ্যে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন।
খুলনা-৪ আসনের আজিজুল বারী হেলাল রূপসা ঘাটের ব্যাংক মোড়ে এক দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে তার প্রচারণা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আবারো আমার জন্মস্থানের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা অনেক সম্মানের।’’
খুলনা-৬ আসনের প্রার্থী মনিরুল হাসান বাপ্পী তার প্রচারণা শুরু করেন তার বাবার কবর জিয়ারত, হাসপাতালে অসুস্থ দলীয় নেতাদের সাথে দেখা করে এবং কয়রা ও পাইকগাছার উপজেলা নেতাদের সাথে কথা বলে।
তিনি বলেন, “বুধবার জেলা পর্যায়ের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে প্রচারণা আরো জোরদার করা হবে।”
এদিকে, খুলনা-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বর্তমানে অসুস্থ থাকায় তার অনুসারীদের মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করেছেন।
মঞ্জুর অনুসারি সাবেক ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “প্রার্থী ঘোষণার আগে থেকেই দলীয় কর্মীরা তার পক্ষে দিনব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এখনো চালাচ্ছেন।”
খুলনা-৩ আসনে রকিবুল ইসলামের পক্ষেও প্রচারণা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। বকুল সমর্থকরা দিনব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস