কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এনসিপির পক্ষ থেকে এই সাক্ষাৎকে ‘অনানুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাৎ’ উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, সেখানে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশে এ সাক্ষাৎ হয়। হেফাজতের আমিরের সঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলটির কয়েকজন নেতার একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে। হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় এসেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। গতকাল সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’-এ প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। এনসিপির দুজন নেতা বলেন, হেফাজতের আমির সাধারণত ঢাকায় আসেন না, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতেই থাকেন। বিভিন্ন দল-সংগঠনের প্রধানদের সঙ্গে গত এক বছরে এনসিপির নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু হেফাজতের আমিরের সঙ্গে তাঁদের সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ সেভাবে হয়নি।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও দলের রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘হেফাজতের আমির সাধারণত চট্টগ্রামেই থাকেন। তিনি বয়স্ক মানুষ, সাধারণত ঢাকায় আসেন না। তাঁদের একটি সাংগঠনিক কাজে যেহেতু ঢাকায় এসেছেন, সেই জায়গা থেকে এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে।’

হেফাজত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎটিকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলছেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাক্ষাতে আমরা হেফাজতে ইসলামের আমিরের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছি। সেখানে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি।’

গতকাল হেফাজতের আমিরের সঙ্গে শুধু এনসিপি নেতারাই সাক্ষাৎ করেছেন, তা নয়। সূত্র বলছে, গতকাল রাতে বসুন্ধরায় ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদও। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স জন য স ক ষ ৎ স ক ষ ৎ কর ছ এনস প র গতক ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।

৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।

এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।

বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।

বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ