রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করার পর কর্মবিরতির ডাক
Published: 20th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সিনেট ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলিম এ ঘোষণা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও কর্মবিরতিতে থাকবেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলিম বলেন, ‘শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাত্রদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আগামীকাল পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ঘোষণা করছি। দাবি না মানা হলে সোমবার থেকে কর্মবিরতি চলমান থাকবে। এই কর্মসূচি শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা–কর্মচারীও পালন করবেন।’
প্রসঙ্গত, শনিবার বেলা তিনটার দিকে সহ-উপাচার্য প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে এলে পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে তাঁর বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে তিনি জুবেরী ভবনের দিকে যান। সেখানে শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি তোলেন। তখন সেখানে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানও ছিলেন। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি থেকে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি হয়।
বিকেল সাড়ে চারটার দিক থেকে জুবেরী ভবনে সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই অবরুদ্ধ ছিলেন।
চলমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আবদুল আলিম জানান, আজ শনিবার আনুমানিক বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন দাপ্তরিক কাজ শেষে দুপুরের খাবারের জন্য বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠেন। এমতাবস্থায় কয়েকজন ছাত্র তাঁকে গাড়ি থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে নেন এবং অশালীন উক্তিসহ তাঁর গাড়ির ওপরে ভিক্ষা হিসেবে টাকা ছুড়ে দেন। এরপর হেঁটে তাঁর বাসায় ঢুকতে গেলে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। নিরুপায় হয়ে তিনি জুবেরী ভবনে গেলে তাঁকে ঘিরে নানা ধরনের কটূক্তি করেন এবং তাঁকে নিয়ে ধস্তাধস্তি করতে থাকেন।
আবদুল আলিম বলেন, ‘প্রক্টরসহ তাঁর বডির সদস্যবৃন্দ মাঈন উদ্দীনকে প্রোটেকশন দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রক্টরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় প্রক্টরের পকেট থেকে ১০ হাজার টাকা ও তাঁর হাতঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। সহ-উপাচার্য নিরুপায় হয়ে জুবেরী ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে আশ্রয় নিতে গেলে তাঁর গলা চেপে ধরে ও তাঁকে ধাক্কা মেরে সিঁড়িতে ফেলে দেয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবন একটি আবাসিক ও ক্লাব ভবন। এখানে অনেক পরিবার বাস করে।
অধ্যাপক আবদুল আলিম অভিযোগ করে বলেন, জুবেরী ভবনের অবস্থানরত কক্ষে বিদ্যুৎ–সংযোগ ও খাবার পানির ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিসহ স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ওই ভবনে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ভবনের পরিবারগুলো আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল আলিম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও রাকসুর নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হক জুবেরী ভবনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে ভবন থেকে বের করে হাসপাতালে নিতে হয়। এ ঘটনাবলি আসন্ন রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ বলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সহ-উপাচার্যকে আটকে বিক্ষোভ, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
বিকেল চারটার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা জুবেরী ভবনে ঢুকতে চাইলে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ শিক্ষার্থীরা তাঁদের সামনে দু-হাত প্রসারিত করে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
এরপর সহ-উপাচার্যসহ কর্মকর্তারা জুবেরী ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে যান। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনের সিঁড়ি ও বারান্দায় অবস্থান নিয়ে সহ-উপাচার্যকে আটকে রেখে বিক্ষোভ করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য ও সরেজমিনে দেখা যায়, আজ বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন থেকে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছিলেন সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ি আটকে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সহ-উপাচার্যের গাড়ির ইঞ্জিনের ওপর প্রতীকী ‘ভিক্ষা’ হিসেবে খুচরা টাকা দেন। প্রায় ২০ মিনিট সেখানে সহ–উপাচার্যকে গাড়িতে আটকে বিক্ষোভ করা হয়। এরপর গাড়িচালকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা গাড়ির চাবি কেড়ে নিলে সহ-উপাচার্য গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে তাঁর বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। তখন শিক্ষার্থীরা তাঁর পিছু নেন। একপর্যায়ে দৌড়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে সেখানে আটকা পড়েন সহ-উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ শর্তে ফিরল পোষ্য কোটা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্যের গাড়ি আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শনিবার বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে