পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন আন্তস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার পর দেবীগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ (এন এন) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে দেবীগঞ্জ-সোনাহার আঞ্চলিক সড়কে দেবীগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং দেবীগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের উত্তেজনা চলে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত।

সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এ সময় গুরুতর আহত তিনজনের অবস্থার অবনতি হলে তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়া অন্য দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।

সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনার পরপরই দেবীগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা দেবীগঞ্জ-ডোমার মহাসড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় সড়কের দুই পাশে শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিকেলে দেবীগঞ্জ মিনি স্টেডিয়ামে ৫২তম গ্রীষ্মকালীন আন্তস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফুটবল খেলা শুরু হয়। খেলায় দেবীগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং দেবীগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। টাইব্রেকারে দেবীগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ৪-২ গোলে দেবীগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজকে পরাজিত করে। খেলা শেষে মাঠ থেকে চলে যাওয়ার সময় হঠাৎ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।

দেবীগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জি এম রুহুল আমিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা খেলা শেষে বিজয় মিছিল করে বিদ্যালয়ে আসছিল। স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছালে মিছিলের পেছনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পরে আমাদের শিক্ষার্থীরা স্কুলের ভেতরে ঢুকে মূল ফটক বন্ধ করে দিলেও টেকনিক্যালের শিক্ষার্থীরা আমাদের মুল ফটকে এসে আঘাত শুরু করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পরে টেকনিক্যালের শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যায়। আমাদের কিছু প্রাক্তন ছাত্র স্কুলে আসে। তখন ছাত্ররা আবারও স্কুল থেকে বের হয়ে টেকনিক্যাল স্কুলের সামনে গিয়ে কিছু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় সড়ক অবরোধ করা টেকনিক্যালের শিক্ষার্থীরা আবারও আমাদের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে।’

দেবীগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলাকে বলেন, ‘এন এন স্কুলের ফুটবল দলে তিনজন বহিরাগত খেলোয়ার ছিল। এটা চিহ্নিত করার পরে তারা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ঘটনাটা সেখান থেকেই শুরু। খেলা পুরো সময়টাই তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে মাঠে বসে ছিল। খেলা শেষে আমাদের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার পথে এন এন স্কুলের সামনে এলে তাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এমনকি তাদের স্কুলের গেটের ভেতর থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়। এর প্রায় এক ঘণ্টা পরে এসে এন এন স্কুলের শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে এসে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।’

দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা স্বপূর্ণ কুমার সাহা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত অবস্থায় মোট ১৬ জন শিক্ষার্থী এসেছিল। তাদের মধ্যে সূর্য রহমান রাজা (১৫), ওয়ালিদ (১৩) ও বিভোর (১৫) নামের তিনজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা বলেন, ফুটবল খেলে শেষে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। একটি পক্ষ সড়ক অবরোধ করে। ইউএনও ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি শান্ত করা হয়ে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স আম দ র শ ক ষ র থ জন শ ক ষ র থ ফ টবল খ ল দ র ওপর আহত হয় স ঘর ষ এন এন উপজ ল র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তে গাজীপুরে উদীচীর প্রতিবাদ কর্মসূচি

প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক পদ বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও পদটি পুনর্বহালের দাবিতে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কর্মসূচি পালন করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার সত্যেন সেন সংগীত একাডেমির সামনে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গাজীপুর ও কাপাসিয়া শাখার অর্ধশতাধিক শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী এ কর্মসূচি পালন করেন।

উদীচীর গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত শিশুদের মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের বিরুদ্ধে অবস্থান। সৌদি আরবে যেখানে হাজার হাজার নারী শিক্ষককে সংগীতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে আমরা উল্টো পথে হাঁটছি। এটি জাতির জন্য লজ্জাজনক।

অদৃশ্য কোনো কারণে পদগুলো বাতিল করা হয়েছে দাবি করে উদীচী কাপাসিয়া শাখার সভাপতি নুরুল আমীন সিকদার বলেন, সংস্কৃতি ও শিক্ষা একে অপরের পরিপূরক। আমরা চাই, প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে প্রশিক্ষিত সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কাপাসিয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিক ফকির বলেন, এটি শুধু শিক্ষক বাতিলের বিষয় নয়, সংস্কৃতিবিরোধী সিদ্ধান্ত। এখনই সবাইকে একত্রে প্রতিবাদে নামতে হবে।

সমাবেশ শেষে সত্যেন সেন সংগীত একাডেমির শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুপ্রেরণামূলক গান ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে...’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ