বাংলাদেশে কারাগারে বন্দীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই বিচারাধীন মামলায় বন্দী হয়ে আছেন। বিচার হলে হয়তো তাঁরা দুই থেকে তিন মাস কারাগারে থাকতেন। কারাগার মানেই মানুষকে শাস্তি দেওয়া। এ মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথা উঠে আসে। ‘জেনুইন রিফর্ম অর কসমেটিক শিফট’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা ডি–কেজ। ফৌজদারি আইনের আওতায় আসা মানুষের মানবাধিকারের বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা ও লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সংস্থাটি কাজ করে।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো.

মোতাহের হোসেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ কারাগারের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন।

কারা মহাপরিদর্শক জানান, ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ নামে নতুন প্রস্তাবে কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বন্দী থাকার সমস্যা, অপরাধীর সংশোধনকে অগ্রাধিকার, বন্দীদের আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে আপিলের সুযোগ, উন্মুক্ত জেল ধারণা, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বন্দী হলে অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত রাখার প্রস্তাব (যাঁরা মজুরির ভিত্তিতে কাজ করবেন) প্রভৃতি বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে।

গত এক বছরে নতুন করে ছয়টি কারাগার চালু করা হয়েছে জানিয়ে মোতাহের হোসেন বলেন, ‘কারাগার আইনে অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে। আমরা এখনো ব্রিটিশ সময়ে প্রণীত আইন অনুযায়ী কারাগার পরিচালনা করছি। আধুনিক সময়ে এটা বেমানান।’

নতুন প্রস্তাবে বন্দীদের মজুরির ভিত্তিতে কাজের সুযোগ থাকছে জানিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ‘বর্তমান নিয়মে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিন মাত্র দুই টাকা মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে হয়। এটা বাস্তবসম্মত নয়। নতুন প্রস্তাবে আমরা চেষ্টা করছি, যে প্রোডাক্টে বন্দী কাজ করবেন, সেটার প্রফিটের ৫০ পার্সেন্ট আমরা দেব। কারেকশন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্ম নামের একটা জিনিস অ্যাড করতে চাচ্ছি। যেখানে হয়তো পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপের প্রোডাকশনেরে ইউনিট হবে। যেখানে বন্দীরা স্যালারির ভিত্তিতে কাজ করবে।’

বাংলাদেশে কারাবন্দীদের কোনো কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার নেই উল্লেখ করে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এখনো সংখ্যার দিক থেকে বিচারাধীন বন্দীর সংখ্যা বেশি। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বিচার ছাড়াই কারাগারে আটকে আছেন।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কোনো বন্দীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিযোগ থাকলে তিনি জামিন পেলেও দেশের সব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অনুমতি ব্যতীত ছাড়া পান না। এই প্রক্রিয়া কারাবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি (সিপিসি), ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) কোথাও নেই। কিন্তু এটা অনেক বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে এটা হয়েছে। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তথ্যের ভিত্তিতে জেলগেট থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া সাধারণ একটা ব্যাপার ছিল। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পরও এসব পরিস্থিতির খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।

অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কারাবন্দীদের আমিষের চাহিদা পূরণে এত দিন ৩৬ গ্রাম আমিষ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার এটাকে ৫৪ গ্রাম করেছে।’

সমাজে কারাবন্দীদের গ্রহণযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে, এমন ব্যবস্থাপনায় কারাগারকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তৌহিদুল হক।

একসেস টু জাস্টিস ফর উইমেনের (জিআইজেড) উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাহজাহান কোরেশি বলেন, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত মিলে প্রায় ৪৫ লাখ মামলা অপেক্ষমাণ। এসব মামলার তালিকা নিয়ে কাজ করা জরুরি।

আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মূসার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এরশাদুল বারী খন্দকার, সাংবাদিক জিয়া চৌধুরী প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন দ দ র প রস ত ব ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ বিশ্বকাপ: ৩২ দল নিশ্চিত, টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায় ১৬

২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো- এই তিন দেশে আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ে বসছে ফুটবলের ২৩তম মহাযজ্ঞ। ইতিহাসে এবারই প্রথম ৪৮ দল নিয়ে হতে যাচ্ছে টুর্নামেন্টের মূল পর্ব।

বাছাই পর্বের লড়াই শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপের টিকিট পকেটে পুরে ফেলেছে ৩২ দল। বাকি ১৬ জায়গা এখনো খোলা। যেগুলোর মালিকানা নির্ধারণ হবে মার্চের প্লে-অফে। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন চলছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচ, দাবায় উত্তেজনাপূর্ণ গাণিতিক হিসাব।

আরো পড়ুন:

পূর্ণ ২৪ পয়েন্ট ও কোনো গোল হজম না করেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড

অদম্য স্পেন বিশ্বকাপের দোরগোড়ায়

ইউরোপে রোমাঞ্চ, ইতালির সামনে কঠিন পথ:
রবিবার ইউরোপিয়ান বাছাইয়ে দুই বড় জয়ের মধ্য দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে নরওয়ে ও পর্তুগাল। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে নরওয়ে নিশ্চিত করেছে তাদের জায়গা। অন্যদিকে আর্মেনিয়ার জালে গোলের বন্যা বইয়ে ৯-১ ব্যবধানে বড় জয় তুলে নিয়ে টিকিট নিশ্চিত করেছে পর্তুগালও।

ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, পর্তুগাল ও নরওয়ে জায়গা পেয়ে গেলেও স্পেন, জার্মানি, বেলজিয়ামদের অপেক্ষা এখনো শেষ হয়নি। আর ইতালিকে যেতে হবে মহাদেশীয় প্লে-অফের কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে।

এশিয়া-আফ্রিকা-দক্ষিণ আমেরিকা: কোটা পূর্ণ
এশিয়া থেকে আটটি দল ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার, উজবেকিস্তান। আরেকটি সুযোগ আছে প্লে-অফে। যেখানে লড়বে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরাক।

দক্ষিণ আমেরিকা থেকেও নির্ধারিত ছয় দলের সবাই জায়গা পেয়ে গেছে- আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও প্যারাগুয়ে। বলিভিয়া অপেক্ষায় আছে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের।

আফ্রিকা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ৯ দলের কোটা পূরণ করেছে- আলজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, মিশর, ঘানা, মরক্কো, তিউনিসিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেপ ভার্দে ও সেনেগাল। প্লে-অফে সুযোগ পেয়েছে কঙ্গো।

ওশেনিয়া ও কনকাকাফে শেষ লড়াই:
ওশেনিয়া অঞ্চলে নিশ্চিত হয়েছে নিউ জিল্যান্ড। নিউ ক্যালেডোনিয়া যাবে প্লে-অফে।

কনকাকাফে আয়োজক তিন দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো আগেই নিশ্চিত। বাকি তিন আসনের দৌড়ে এগিয়ে আছে সুরিনাম, কুরাসাও ও হন্ডুরাস। দু’টি দল পাবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ খেলার সুযোগ।

চূড়ান্ত প্লে-অফ: মার্চে ভাগ্য নির্ধারণ
মার্চ ২০২৬ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের শেষ এবং সবচেয়ে নাটকীয় লড়াই- ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্লে-অফ।

এখানের ৬ দলের মধ্য থেকে দুটি দল পাবে মূল পর্বের শেষ দুটি টিকিট।
অংশ নেবে—
১টি দল আফ্রিকা থেকে
১টি এশিয়া থেকে
২টি কনকাকাফ থেকে
১টি ওশেনিয়া থেকে
১টি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে।

এই ম্যাচগুলো আয়োজক দেশের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে, টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি যাচাইয়ের অংশ হিসেবে।

৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ড্র:
সব দল চূড়ান্ত হওয়ার পর ৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। এরপরই জানা যাবে কোন দল কোন গ্রুপে। আর কাদের বিপক্ষে শুরু হবে ফুটবলের পরবর্তী মহাযুদ্ধ। 

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ