ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়ে এত কালি খরচ হয়েছে, কিন্তু কবিতার প্রতি তাঁর ভালোবাসা নিয়ে প্রায় কিছুই লেখা হয়নি। অথচ অন্তত একটি কবিতা আছে, যেটি তিনি ভীষণ পছন্দ করেন এবং নিয়মিত উল্লসিত জনতার সামনে আবৃত্তি করেন।

গত মাসে হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের এই আবৃত্তি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছে। কবিতাটির নাম ‘দ্য স্নেক’। এটি মূলত অস্কার ব্রাউন জুনিয়রের লেখা একটি গান। এই কবিতা ট্রাম্পের ভীষণ প্রিয় এবং এটি তাঁর জীবনদর্শনের কাছাকাছি যায়।

কবিতাটি শুরু হয় প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রায় জমে যাওয়া একটি সাপের কথা দিয়ে। ‘তুষারে জমাট বাঁধা’ সাপটি একটু উষ্ণতার জন্য করুণ মিনতি করছে। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছে না। তার এই অনুরোধ শোনেন এক ‘সহৃদয়া নারী’।

কবিতায় বলা হচ্ছে, ‘তিনি (ওই নারী) সাপটিকে সিল্কের আরামদায়ক চাদরে মুড়ে নিলেন। তারপর মধু ও দুধ দিয়ে চুলার পাশে রাখলেন। সাপটির সুন্দর ত্বক ছুঁয়ে আদর করলেন, চুমু খেলেন, তাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলেন। কিন্তু ধন্যবাদ জানানোর বদলে সাপটি দিল এক ভয়ানক দংশন।’

আরও পড়ুনভারতকে বশ মানাতে গিয়ে উল্টো বিপদে ট্রাম্প০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এই কথাগুলো আসলে ট্রাম্পবাদের সারমর্ম: বাইরের কাউকে খুব কাছে টেনে নিয়ো না, কারণ, তার বিনিময়ে তুমি পাবে বিষ।

ট্রাম্পবাদের কাছে বাইরের থেকে আসা মানুষের জন্য কোনো আলিঙ্গন নেই, আছে শুধু শোষণ। ব্যবসা, রাজনীতি আর স্বাভাবিকভাবেই অভিবাসন—সবকিছুকে ট্রাম্প এভাবেই দেখেন।

হোয়াইট হাউসের বানানো তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের আবৃত্তিকে নেপথ্য কণ্ঠে রাখা হয়েছে। এ সময় ভেসে ওঠে হাতকড়া পরানো বাদামি-চামড়ার সেই লোকদের ছবি, যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এই সপ্তাহে জাতিসংঘে ট্রাম্পের অসাধারণ ভাষণ শোনার সময় আমি আবারও ‘দ্য স্নেক’-এর কথা ভেবেছিলাম। এটি ট্রাম্প আর ব্রিটিশ অভিজাত শ্রেণির সম্পর্কের নিখুঁত চিত্র, যেখানে ট্রাম্প হলো সেই ভয়ংকর সাপ আর ব্রিটিশ অভিজাত গোষ্ঠী হলেন সেই নারী।

গত সপ্তাহে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সবচেয়ে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ট্রাম্প। তিনি উইনসর ক্যাসেলে এক রাজকীয় ভোজ উপভোগ করেছেন। এ সময় রাজা চার্লস তাঁকে ‘সবচেয়ে নিকট আত্মীয়’ বলে অভিহিত করেন। অথচ ফিরতি ফ্লাইটে উঠেই ট্রাম্প তাঁর আতিথেয়তা দেওয়া ব্রিটিশদের দিকে ছুরি চালালেন।

গত সপ্তাহে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সবচেয়ে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ট্রাম্প। তিনি উইনসর ক্যাসেলে এক রাজকীয় ভোজ উপভোগ করেছেন। এ সময় রাজা চার্লস তাঁকে ‘সবচেয়ে নিকট আত্মীয়’ বলে অভিহিত করেন। অথচ ফিরতি ফ্লাইটে উঠেই ট্রাম্প তাঁর আতিথেয়তা দেওয়া ব্রিটিশদের দিকে ছুরি চালালেন। তিনি ‘আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শুনছেন’ বলে চরম অবমাননামূলক মন্তব্য করলেন এবং যুক্তরাজ্যকে সেই পুরোনো দুনিয়ার ‘নরকে যাওয়া’ দেশগুলোর কাতারে নামিয়ে আনলেন।

এসব দেখে আমার মনে পড়ল কবিতাটির শেষ দুই লাইন। যেখানে নারী ওই সাপকে বললেন, ‘তুমি আমাকে কামড়েছ, কিন্তু কেন? তুমি তো জানতেই তোমার কামড় বিষাক্ত আর এখন আমি মারা যাচ্ছি।’

প্রায় এক বছর ধরে স্টারমার ট্রাম্পকে যতটা সম্ভব আঁকড়ে ধরে রেখেছেন, নজিরবিহীন দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর, একটি দুর্গে রাতযাপন ও চেকার্সে এক দিন কাটানো, রাজপরিবারের সঙ্গে ফটোসেশন—সবই কেবল ডলারের আশায়। কম শুল্ক আর বেশি বিনিয়োগ, এই হলো স্টারমারের আরওআই (রিটার্ন অন ইনগ্র্যাটিয়েশন)। গত সপ্তাহে তিনি পেলেন সবচেয়ে বড় পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি চুক্তি। এটিকে ‘রেকর্ড-ব্রেকিং’ বিনিয়োগ বলে ঘোষণা দিল ডাউনিং স্ট্রিট।

আরও পড়ুন‘পাগল’ ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে দুই ভাগ করে ফেলছেন০৪ নভেম্বর ২০২৪

‘একেবারে বিস্ময়কর বোঝাপড়া’ বলে এর সঙ্গে একমত হলেন বিবিসির প্রখ্যাত বিজনেস এডিটর সাইমন জ্যাক।

কিন্তু প্রস্তুত থাকুন, আগামী সপ্তাহে লেবার কনফারেন্সে এটি নিয়ে হুল্লোড় হবে আর সংবাদমাধ্যমও মাথা নাড়বে। সাংবাদিকেরা এটিকে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করবেন। তাঁরা তো গত সপ্তাহে পরিসংখ্যানের ভেতরে ঢুকে প্রকৃত অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তিগত বিশদ নিয়ে আলোচনা না করে মেলানিয়ার টুপি দেখতে বেশি সময় কাটিয়েছেন।

কিন্তু যদি লেবার সদস্যরা ও অন্যান্য ভোটাররা জানতে পারেন আসলে তাঁদের নামে কী সই করা হয়েছে, তবে তাঁরা আনন্দিত নয়, ক্ষুব্ধ হবেন। সত্যের কাছাকাছি ব্যাপারটি হচ্ছে একটা ডোরাকাটা চামড়ার সাপ ধীরে ধীরে পেঁচিয়ে ধরছে আপনার জমি, আপনার ডেটা, আপনার পানির জোগান আর বিদ্যুতের খুঁটি। আর সেই মুহূর্ত দাবি করা হচ্ছে, এগুলো নাকি আপনার ভালোর জন্য।

শুধু তাই নয়, এম ২৫-এর ধারে গুগলের জমকালো উদ্বোধন বা নর্থাম্বারল্যান্ডে ব্ল্যাকস্টোনের বিনিয়োগের মতো এক বছরের বেশি আগে ঘোষিত প্রকল্পগুলোকে আবারও নতুন করে গোনায় ধরে দেখানো হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের এটাই নোংরা মানদণ্ড।

আরও পড়ুনপুতিন না ট্রাম্প— কে কাকে আসলে ফাঁদে ফেলছেন১৩ আগস্ট ২০২৫

তবে আরও চমকপ্রদ হলো স্টারমারের বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য টুপি খোলা আর তাঁদের ‘জীবন-পরিবর্তনকারী’ বলে ঘোষণা করা। অধিকাংশ ব্রিটিশরা অবশ্য ভিন্নভাবে দেখবেন। গ্লেজার পরিবার, ব্ল্যাকস্টোন আর ম্যাকোয়ারি—সবই ‘বিদেশি বিনিয়োগ’-এর উদাহরণ। কিন্তু সেগুলোর ফল কতটা ভালো হয়েছে, তা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভক্তরা, সাউদার্ন ক্রস কেয়ার হোমের রোগীরা আর টেমস ওয়াটারের গ্রাহকেরা এমপিদের বলে দিতে পারবেন।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে প্রযুক্তি খাতে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগের সঙ্গেও তাই ঘটবে। হোয়াইট হলের নিজস্ব প্রকাশনাতেই স্পষ্ট করে বলা আছে, মার্কিন মূলধনের বেশির ভাগই নতুন ব্যবসা বা ঝকঝকে নতুন অফিসে যাচ্ছে না। মূল অর্থ বড় ডেটা সেন্টারে যাচ্ছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ব্রিটিশ রাজনীতিতে তা তেমন আলোচিত হয় না।

সরকার এগুলোকে ‘এআই চালানোর কারখানা’ বলে প্রচার করছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে এগুলো অনেকটা আধুনিক গুদামের মতো, যেখানে মানুষ নয়, মেশিন রাখা হয়। এগুলো কিছু উৎপাদন করে না, শুধু সংরক্ষণ করে আমার ও আপনার ডেটা। আর কর্মসংস্থানও তেমন দেয় না।নর্থাম্বারল্যান্ডের ব্লাইথের বাইরে ব্ল্যাকস্টোনের নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা নথি দেখুন, ৫ লাখ বর্গমিটারের বেশি জায়গায় ১০টি ডেটা সেন্টার। ব্ল্যাকস্টোন অনুমান করছে, নির্মাণকাজের শীর্ষ সময়ে প্রয়োজন হবে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ জন শ্রমিক এবং তা চলবে আনুমানিক ১০ বছর।

আরও পড়ুননা, লেনদেনে ট্রাম্প ভরসা করার মতো লোক নন০৬ আগস্ট ২০২৫

‘চাকরি, চাকরি, চাকরি’—এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্টারমার। কিন্তু একবার চালু হয়ে গেলে এই বিশাল কমপ্লেক্সের প্রতিটি ডেটা সেন্টারের জন্য লাগবে মাত্র ৪০ জন কর্মী। কিন্তু এই লেবার নেতা তাঁর অনেক আগেই বিদায় নেবেন।

ব্ল্যাকস্টোনকে জিজ্ঞাসা করুন স্থায়ী কর্মীরা কী করবেন। তাঁরা একেবারেই সোজাসাপটা উত্তর দেবেন, তাঁরা নতুন ডেটা অর্থনীতির সেনাপতি হবেন না, বরং নিম্নপদের সৈনিক হবেন, সেই অনুযায়ী মজুরি পাবেন। তাঁরা মেইনটেন্যান্স, সাপোর্ট ও নিরাপত্তারক্ষার কাজ করবেন।

এই জমি একসময় ব্রিটিশভোল্ট কারখানার জন্য নির্ধারিত ছিল। তখন বরিস জনসন তাঁর সবচেয়ে উৎসাহী অবস্থায় ছিলেন। এখন তা এক বিশাল ফাঁকা জায়গায় পরিণত হবে।

এই হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টারগুলো মাইক্রোসফট, গুগল এবং অন্যান্য মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্য অপরিহার্য। মালিকানা, পরিচালনা ও সরঞ্জাম আসবে সিলিকন ভ্যালি থেকে আর আমাদের দেশে আসা অর্থের বড় অংশ আবার পশ্চিমে চলে যাবে। মূল ব্যয় আসলে ডেটা সেন্টারের ইটপাথর নয়, ভেতরে বসানো এনভিডিয়া চিপস।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এআই বিশেষজ্ঞ সিসিলিয়া রিক্যাপ বলেন, ‘এগুলো ব্রিটিশ ভূমিতে আমেরিকান সামরিক ঘাঁটির সমতুল্য।’ এগুলো এমন এক পরিসর, যেখানে কোনো নজরদারি নেই (সরকার জানেই না ব্রিটিশ মাটিতে মোট কতটি ডেটা সেন্টার আছে)।

আরও পড়ুনট্রাম্প আসলে ভারতকে ততটা গুরুত্বই দেননি০৯ আগস্ট ২০২৫

এসব দেখে আমার মনে পড়ছে স্নেক কবিতার সেই লাইন, ‘“আমাকে আশ্রয় দাও, হে কোমল হৃদয়ের নারী/আমাকে আশ্রয় দাও, খোদার দোহাই” বলে নিশ্বাস ফেলে বলল সেই হিংস্র সাপ।’

সিলিকন ভ্যালি আগামী দিনের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ দখল করছে। সাধারণ মানুষের জন্য পরিস্থিতি ভিন্ন: লন্ডনের পূর্বাঞ্চলীয় টাওয়ার হ্যামলেটস বরো ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, ডেটা সেন্টারের হঠাৎ বেড়ে যাওয়া সংযোগের কারণে বিদ্যুৎ ও পানির জোগান বাড়তি চাপ নিতে পারে, যা বড় পরিসরে বাড়ি নির্মাণ অন্তত ১০ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

গত সপ্তাহে সতর্ক করে নিক ক্লেগ বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য এক “ভ্যাসাল স্টেটে” পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ২০১০ সালের পর এই প্রথম আমরা সবাই নিকের সঙ্গে একমত হতে পারি। কারণ, আমরা নিজেদের বেঁধে দিচ্ছি সিলিকন ভ্যালির এআই অবকাঠামোর সঙ্গে। আমরা তাদের ডেটা সেন্টার, তাদের ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে যাচ্ছি। আমাদের তথ্যভিত্তিক অর্থনীতির পাইপলাইন ও সংযোগব্যবস্থা মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাম্পের আমেরিকা।

আরও পড়ুনট্রাম্প যা করছেন, তাতে তুরস্ক আর হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যখন প্রেসিডেন্ট স্ট্যানস্টেডে অবতরণ করলেন, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক ডেপুটি গভর্নর জন কানলিফ তখন সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সহজেই আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমে তার আধিপত্যকে ‘অস্ত্রে পরিণত’ করতে পারে এবং হোয়াইট হাউসের হুকুম অমান্যকারী যেকোনো দেশকে এক ঝটকায় ‘কিল সুইচ’ টিপে অচল করে দিতে পারে। কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হতে না চায় বা ডেনমার্ক যদি গ্রিনল্যান্ডকে ধরে রাখার ব্যাপারে অনড় থাকে, তাহলে তাদের ব্যাপারে ট্রাম্প এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।

আর যদি এখনো মনে করেন ট্রাম্প বিশাল আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে তার রাজনৈতিক ইচ্ছার সামনে নতজানু করতে পারবেন না, তাহলে ট্রাম্পের সমালোচনা করে চাকরি হারানো উপস্থাপক জিমি কিমেলকেই এ বিষয়ে শুধু জিজ্ঞাসা করে দেখুন। জবাবে তিনি হয়তো স্নেক কবিতার লাইন আওড়াবেন, ‘চুপ করো নির্বোধ নারী, তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি এক সাপ, তবু কেন আশ্রয় দিলে।’

আদিত্য চক্রবর্তী দ্য গার্ডিয়ানের কলামিস্ট

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র হ য় ইট হ র জন য সবচ য় আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ বিশ্বকাপ: ৩২ দল নিশ্চিত, টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায় ১৬

২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো- এই তিন দেশে আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ে বসছে ফুটবলের ২৩তম মহাযজ্ঞ। ইতিহাসে এবারই প্রথম ৪৮ দল নিয়ে হতে যাচ্ছে টুর্নামেন্টের মূল পর্ব।

বাছাই পর্বের লড়াই শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপের টিকিট পকেটে পুরে ফেলেছে ৩২ দল। বাকি ১৬ জায়গা এখনো খোলা। যেগুলোর মালিকানা নির্ধারণ হবে মার্চের প্লে-অফে। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন চলছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচ, দাবায় উত্তেজনাপূর্ণ গাণিতিক হিসাব।

আরো পড়ুন:

পূর্ণ ২৪ পয়েন্ট ও কোনো গোল হজম না করেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড

অদম্য স্পেন বিশ্বকাপের দোরগোড়ায়

ইউরোপে রোমাঞ্চ, ইতালির সামনে কঠিন পথ:
রবিবার ইউরোপিয়ান বাছাইয়ে দুই বড় জয়ের মধ্য দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে নরওয়ে ও পর্তুগাল। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে নরওয়ে নিশ্চিত করেছে তাদের জায়গা। অন্যদিকে আর্মেনিয়ার জালে গোলের বন্যা বইয়ে ৯-১ ব্যবধানে বড় জয় তুলে নিয়ে টিকিট নিশ্চিত করেছে পর্তুগালও।

ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, পর্তুগাল ও নরওয়ে জায়গা পেয়ে গেলেও স্পেন, জার্মানি, বেলজিয়ামদের অপেক্ষা এখনো শেষ হয়নি। আর ইতালিকে যেতে হবে মহাদেশীয় প্লে-অফের কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে।

এশিয়া-আফ্রিকা-দক্ষিণ আমেরিকা: কোটা পূর্ণ
এশিয়া থেকে আটটি দল ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার, উজবেকিস্তান। আরেকটি সুযোগ আছে প্লে-অফে। যেখানে লড়বে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরাক।

দক্ষিণ আমেরিকা থেকেও নির্ধারিত ছয় দলের সবাই জায়গা পেয়ে গেছে- আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও প্যারাগুয়ে। বলিভিয়া অপেক্ষায় আছে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের।

আফ্রিকা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ৯ দলের কোটা পূরণ করেছে- আলজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, মিশর, ঘানা, মরক্কো, তিউনিসিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেপ ভার্দে ও সেনেগাল। প্লে-অফে সুযোগ পেয়েছে কঙ্গো।

ওশেনিয়া ও কনকাকাফে শেষ লড়াই:
ওশেনিয়া অঞ্চলে নিশ্চিত হয়েছে নিউ জিল্যান্ড। নিউ ক্যালেডোনিয়া যাবে প্লে-অফে।

কনকাকাফে আয়োজক তিন দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো আগেই নিশ্চিত। বাকি তিন আসনের দৌড়ে এগিয়ে আছে সুরিনাম, কুরাসাও ও হন্ডুরাস। দু’টি দল পাবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ খেলার সুযোগ।

চূড়ান্ত প্লে-অফ: মার্চে ভাগ্য নির্ধারণ
মার্চ ২০২৬ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের শেষ এবং সবচেয়ে নাটকীয় লড়াই- ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্লে-অফ।

এখানের ৬ দলের মধ্য থেকে দুটি দল পাবে মূল পর্বের শেষ দুটি টিকিট।
অংশ নেবে—
১টি দল আফ্রিকা থেকে
১টি এশিয়া থেকে
২টি কনকাকাফ থেকে
১টি ওশেনিয়া থেকে
১টি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে।

এই ম্যাচগুলো আয়োজক দেশের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে, টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি যাচাইয়ের অংশ হিসেবে।

৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ড্র:
সব দল চূড়ান্ত হওয়ার পর ৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। এরপরই জানা যাবে কোন দল কোন গ্রুপে। আর কাদের বিপক্ষে শুরু হবে ফুটবলের পরবর্তী মহাযুদ্ধ। 

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ