নবীজির মসজিদে শিশুদের অপূর্ব অধিকার
Published: 3rd, October 2025 GMT
নবীজি (সা.)-এর মসজিদ ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে যেমন পুরুষেরা যেতেন, তেমনি যেতেন নারী ও শিশুরাও। তারা নবীজির পেছনে নামাজ আদায় করতেন, বক্তৃতা শুনতেন এবং ইসলামের জ্ঞান শিক্ষা করতেন।
সাহাবিরা তাঁদের শিশুদের নিয়ে মসজিদে যেতেন। নবীজি (সা.) স্বয়ং তার দৌহিত্রদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদে গিয়েছেন। পাশে রেখে নামাজ আদায় করেছেন, কখনও কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
শিশুদের কাতার নির্ধারণমসজিদে নববিতে পুরুষের জন্য যেমন কাতার ছিল, তেমনি ছিল নারী ও শিশুদের কাতার। পুরুষদের কাতার ছিল সর্বাগ্রে, তাদের পেছনে শিশুদের এবং সর্বশেষ ছিল নারীদের কাতার।
মসজিদে নববিতে পুরুষের জন্য যেমন কাতার ছিল, তেমনি ছিল নারী ও শিশুদের কাতার। পুরুষদের কাতার ছিল সর্বাগ্রে, তাদের পেছনে শিশুদের এবং সর্বশেষ ছিল নারীদের কাতার।আবু মালিক আশয়ারি (রা.
শিশুদের জন্য আলাদা কাতার নির্ধারিত থাকা প্রমাণ করে মসজিদে নববিতে পুরুষদের মতো শিশুরাও গুরুত্ব পেতেন। তারা নিয়মিত মসজিদে আসতেন।
কান্নার শব্দ শুনে নামাজ সংক্ষিপ্ত করামসজিদে নববিতে অনেক শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে আসতেন। নামাজের ভেতর কখনও কখনও তারা কান্না করতেন। নবীজি (সা.) শিশুদের কান্নার শব্দ শুনে নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন।
আরও পড়ুনজাতীয় ঐক্যের অনন্য দৃষ্টান্ত মদিনা সনদ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে নামাজ শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার নামাজ সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে, তা আমি জানি। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৬৭৪)
শিশুদের কান্নার শব্দ শুনে নবীজি নামাজ সংক্ষেপ করেছেন, কিন্তু মসজিদে তাদের নিয়ে যেতে নিষেধ করেননি।
নবীজির সঙ্গে শিশুদের আগমনকেবল মুসলিমগণ নন, নবীজি (সা.) স্বয়ং তার দৌহিত্রকে নিয়ে মসজিদে এসেছেন, নামাজের সময় তিনি নবীজির সঙ্গে ছিলেন। এমনকি সিজদার সময় তিনি নবীজির পিঠে বসেছেন, নবীজি (সা.) সেই সিজদা দীর্ঘ করেছেন।
আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে নামাজ শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার নামাজ সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে, তা আমি জানি।সহিহ বুখারি, হাদিস, ৬৭৪শাদ্দাদ (রা.) বলেন, এক ইশার নামাজে নবীজি (সা.) আমাদের দিকে বেরিয়ে আসলেন। তখন তিনি হাসান অথবা হুসাইন (রা.)-কে সঙ্গে করে এসেছিলেন। নবীজি (সা.) সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে রেখে দিলেন। তারপর নামাজের জন্য তাকবীর বললেন ও নামাজ আদায় করলেন। নামাজের মধ্যে একটি সিজদা দীর্ঘ করলেন।
শাদ্দাদ বলেন, আমি আমার মাথা উঠিয়ে দেখলাম, ঐ ছেলেটি নবীজি (সা.)-এর পিঠের উপর রয়েছেন। আর তিনি সিজদারত। তারপর আমি সিজদায় গেলাম। নবীজি (সা.) নামাজ শেষ করলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আপনার নামাজের মধ্যে একটি সিজদা এত লম্বা করলেন, যাতে আমরা ধারণা করলাম, হয়তো কোনো ব্যাপার ঘটে থাকবে। অথবা আপনার ওপর ওহি নাযিল হচ্ছে।
তিনি বললেন, এর কোনোটাই ঘটেনি। বরং আমার এ সন্তান আমাকে সওয়ারি বানিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যেন সে তার কাজ সমাধা করতে পারে। (সুনানে নাসায়ী, হাদিস, ১,১৪১)
আরও পড়ুনশিশুদের প্রতি মহানবী (সা.)–এর বৈষম্যহীন ভালোবাসা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরেকবার নবীজি (সা.) খুতবা প্রদানকালে তার দৌহিত্রদ্বয় অল্প বয়সের কারণে মসজিদে আসার সময় পড়ে যান, তিনি খুতবা বন্ধ করে তাদের তুলে নেন।
আবদুল্লাহ ইবনে বুরায়দা (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিস আছে। যেখানে নবীজি (সা.) আমাদের সামনে খুতবা প্রদানকালে হাসান এবং হুসাইন (রা.) লাল ডোরা জামা পরে সেখানে আসার সময় পিছলিয়ে পড়ে যান। নবীজি খুতবা বন্ধ করে মিম্বর থেকে নেমে তাঁদের নিয়ে আবার মিম্বরে আরোহণ করেন।
এরপর বলেন, আল্লাহ–তাআলা সত্য বলেছেন, ‘তোমাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তানাদি ফিতনাস্বরূপ।’ আমি উভয়কে পড়ে যেতে দেখে সহ্য করতে পারিনি। তারপর তিনি খুতবা দেওয়া শুরু করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,১০৯)
অনেকে মেয়েশিশুদের মসজিদে নিয়ে আসতে অপছন্দ করেন। অথচ নবীজি তার নাতনীকে নিয়ে মসজিদে নববিতে এসেছেন, তাকে পাশে নিয়ে নামাজ আদায় করেছেন।জুমার দিনে আমাদের মসজিদগুলোতে ছেলে শিশুরা এলেও মেয়েশিশুদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। বরং অনেকে মেয়েশিশুদের মসজিদে নিয়ে আসতে অপছন্দ করেন। অথচ নবীজি তার নাতনীকে নিয়ে মসজিদে নববিতে এসেছেন, তাকে পাশে নিয়ে নামাজ আদায় করেছেন।
আবু কাতাদা আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) তাঁর মেয়ে যয়নাবের গর্ভজাত ও আবুল আস ইবনে রবিয়া ইবনে আবদে শামস (রা.) এর ঔরসজাত কন্যা উমামা (রা.)-কে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করতেন। তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯২)
শিশুরা একাটি জাতির ভবিষ্যৎ। তারা বড়দের সঙ্গে মসজিদে এসে নামাজ শেখে, ধর্মীয় আলোচনা শুনে এবং ইবাদতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। সমাজ, সম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্বের প্রতি সচেষ্ট হয়। ধীরে ধীরে একদিন তারা প্রথম কাতারে চলে আসে।
তাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন, মসজিদে নিয়ে আসতে বাঁধা প্রদান না করে তাদের প্রতি কোমল ও স্নেহশীল হওয়া কর্তব্য। নবীজির সময়ে তার মসজিদের দৃশ্য এমনই ছিল।
আরও পড়ুনশিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচাতে১৫ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘ কর র মসজ দ নব জ র কর ছ ন র জন য র সময় করত ন নবব ত
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ‘স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী’ নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবে কেন ভোট দেয়নি রাশিয়া, জানালেন জাতিসংঘে রুশ রাষ্ট্রদূত
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের ওপর রাশিয়া কেন ভোটদানে বিরত ছিল—সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্ব সংস্থায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে এই প্রস্তাব করায়নি বলে অভিযোগ করেছেন রুশ রাষ্ট্রদূত।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নেবেনজিয়া বলেছেন, এই দলিলটি (বা নথিটি) যেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘অজুহাত’ না হয়ে ওঠে। ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তারা যে অবাধে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে, এই দলিলটি যেন তার জন্য ঢাল না হয়ে দাঁড়ায়।
নেবেনজিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী (আইএসএফ) কীভাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সঙ্গে কাজ করবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী, এই বাহিনী ‘রামাল্লার অবস্থান বা মতামতকে কোনো রকম তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিতভাবে কাজ করবে বলে মনে হচ্ছে।’
রাশিয়ার দূত বলেন, ‘এটি গাজা উপত্যকাকে পশ্চিম তীর থেকে আলাদা করে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও দৃঢ় করতে পারে। এটি উপনিবেশিক পদ্ধতি এবং ফিলিস্তিনের ওপর জাতিপুঞ্জের ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের সময়কার কথা কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই সময়ও ফিলিস্তিনিদের নিজেদের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।’
নেবেনজিয়া আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার অধীনে এই বাহিনীর ম্যান্ডেট নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে তাদের ‘শান্তি বাস্তবায়নের কাজ আসলে কি তাকে সংঘাতের একটি পক্ষ হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারে, যা শান্তি রক্ষার সীমানা ছাড়িয়ে যাবে’।