নবীজি (সা.)-এর মসজিদ ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে যেমন পুরুষেরা যেতেন, তেমনি যেতেন নারী ও শিশুরাও। তারা নবীজির পেছনে নামাজ আদায় করতেন, বক্তৃতা শুনতেন এবং ইসলামের জ্ঞান শিক্ষা করতেন।

সাহাবিরা তাঁদের শিশুদের নিয়ে মসজিদে যেতেন। নবীজি (সা.) স্বয়ং তার দৌহিত্রদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদে গিয়েছেন। পাশে রেখে নামাজ আদায় করেছেন, কখনও কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

শিশুদের কাতার নির্ধারণ

মসজিদে নববিতে পুরুষের জন্য যেমন কাতার ছিল, তেমনি ছিল নারী ও শিশুদের কাতার। পুরুষদের কাতার ছিল সর্বাগ্রে, তাদের পেছনে শিশুদের এবং সর্বশেষ ছিল নারীদের কাতার।

মসজিদে নববিতে পুরুষের জন্য যেমন কাতার ছিল, তেমনি ছিল নারী ও শিশুদের কাতার। পুরুষদের কাতার ছিল সর্বাগ্রে, তাদের পেছনে শিশুদের এবং সর্বশেষ ছিল নারীদের কাতার।

আবু মালিক আশয়ারি (রা.

) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) চার রাকাত নামাজের মধ্যে কিরাত ও কিয়ামের (দাঁড়ানোর) ক্ষেত্রে সমতা রাখতেন। তবে প্রথম রাকাত একটু লম্বা করতেন যাতে বেশি মানুষ নামাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। পুরুষদের বালকদের আগে দাঁড় করাতেন, আর বালকদের তাদের পেছনে দাঁড় করাতেন, আর নারীদের তাদের পেছনের কাতারে দাঁড় করাতেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৪৮৩)

শিশুদের জন্য আলাদা কাতার নির্ধারিত থাকা প্রমাণ করে মসজিদে নববিতে পুরুষদের মতো শিশুরাও গুরুত্ব পেতেন। তারা নিয়মিত মসজিদে আসতেন।

কান্নার শব্দ শুনে নামাজ সংক্ষিপ্ত করা

মসজিদে নববিতে অনেক শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে আসতেন। নামাজের ভেতর কখনও কখনও তারা কান্না করতেন। নবীজি (সা.) শিশুদের কান্নার শব্দ শুনে নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন।

আরও পড়ুনজাতীয় ঐক্যের অনন্য দৃষ্টান্ত মদিনা সনদ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে নামাজ শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার নামাজ সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে, তা আমি জানি। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৬৭৪)

শিশুদের কান্নার শব্দ শুনে নবীজি নামাজ সংক্ষেপ করেছেন, কিন্তু মসজিদে তাদের নিয়ে যেতে নিষেধ করেননি।

নবীজির সঙ্গে শিশুদের আগমন

কেবল মুসলিমগণ নন, নবীজি (সা.) স্বয়ং তার দৌহিত্রকে নিয়ে মসজিদে এসেছেন, নামাজের সময় তিনি নবীজির সঙ্গে ছিলেন। এমনকি সিজদার সময় তিনি নবীজির পিঠে বসেছেন, নবীজি (সা.) সেই সিজদা দীর্ঘ করেছেন।

আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে নামাজ শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার নামাজ সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে, তা আমি জানি।সহিহ বুখারি, হাদিস, ৬৭৪

শাদ্দাদ (রা.) বলেন, এক ইশার নামাজে নবীজি (সা.) আমাদের দিকে বেরিয়ে আসলেন। তখন তিনি হাসান অথবা হুসাইন (রা.)-কে সঙ্গে করে এসেছিলেন। নবীজি (সা.) সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে রেখে দিলেন। তারপর নামাজের জন্য তাকবীর বললেন ও নামাজ আদায় করলেন। নামাজের মধ্যে একটি সিজদা দীর্ঘ করলেন।

শাদ্দাদ বলেন, আমি আমার মাথা উঠিয়ে দেখলাম, ঐ ছেলেটি নবীজি (সা.)-এর পিঠের উপর রয়েছেন। আর তিনি সিজদারত। তারপর আমি সিজদায় গেলাম। নবীজি (সা.) নামাজ শেষ করলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আপনার নামাজের মধ্যে একটি সিজদা এত লম্বা করলেন, যাতে আমরা ধারণা করলাম, হয়তো কোনো ব্যাপার ঘটে থাকবে। অথবা আপনার ওপর ওহি নাযিল হচ্ছে।

তিনি বললেন, এর কোনোটাই ঘটেনি। বরং আমার এ সন্তান আমাকে সওয়ারি বানিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যেন সে তার কাজ সমাধা করতে পারে। (সুনানে নাসায়ী, হাদিস, ১,১৪১)

আরও পড়ুনশিশুদের প্রতি মহানবী (সা.)–এর বৈষম্যহীন ভালোবাসা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরেকবার নবীজি (সা.) খুতবা প্রদানকালে তার দৌহিত্রদ্বয় অল্প বয়সের কারণে মসজিদে আসার সময় পড়ে যান, তিনি খুতবা বন্ধ করে তাদের তুলে নেন।

আবদুল্লাহ ইবনে বুরায়দা (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিস আছে। যেখানে নবীজি (সা.) আমাদের সামনে খুতবা প্রদানকালে হাসান এবং হুসাইন (রা.) লাল ডোরা জামা পরে সেখানে আসার সময় পিছলিয়ে পড়ে যান। নবীজি খুতবা বন্ধ করে মিম্বর থেকে নেমে তাঁদের নিয়ে আবার মিম্বরে আরোহণ করেন।

এরপর বলেন, আল্লাহ–তাআলা সত্য বলেছেন, ‘তোমাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তানাদি ফিতনাস্বরূপ।’ আমি উভয়কে পড়ে যেতে দেখে সহ্য করতে পারিনি। তারপর তিনি খুতবা দেওয়া শুরু করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,১০৯)

অনেকে মেয়েশিশুদের মসজিদে নিয়ে আসতে অপছন্দ করেন। অথচ নবীজি তার নাতনীকে নিয়ে মসজিদে নববিতে এসেছেন, তাকে পাশে নিয়ে নামাজ আদায় করেছেন।

জুমার দিনে আমাদের মসজিদগুলোতে ছেলে শিশুরা এলেও মেয়েশিশুদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। বরং অনেকে মেয়েশিশুদের মসজিদে নিয়ে আসতে অপছন্দ করেন। অথচ নবীজি তার নাতনীকে নিয়ে মসজিদে নববিতে এসেছেন, তাকে পাশে নিয়ে নামাজ আদায় করেছেন।

আবু কাতাদা আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) তাঁর মেয়ে যয়নাবের গর্ভজাত ও আবুল আস ইবনে রবিয়া ইবনে আবদে শামস (রা.) এর ঔরসজাত কন্যা উমামা (রা.)-কে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করতেন। তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯২)

শিশুরা একাটি জাতির ভবিষ্যৎ। তারা বড়দের সঙ্গে মসজিদে এসে নামাজ শেখে, ধর্মীয় আলোচনা শুনে এবং ইবাদতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। সমাজ, সম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্বের প্রতি সচেষ্ট হয়। ধীরে ধীরে একদিন তারা প্রথম কাতারে চলে আসে।

তাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন, মসজিদে নিয়ে আসতে বাঁধা প্রদান না করে তাদের প্রতি কোমল ও স্নেহশীল হওয়া কর্তব্য। নবীজির সময়ে তার মসজিদের দৃশ্য এমনই ছিল।

আরও পড়ুনশিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচাতে১৫ আগস্ট ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘ কর র মসজ দ নব জ র কর ছ ন র জন য র সময় করত ন নবব ত

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে কোস্টগার্ডের অভিযানে দস্যুদের কবল থেকে ৪ জেলে উদ্ধার

সুন্দরবনে মুক্তিপণের দাবিতে বনদস্যু জাহাঙ্গীর বাহিনীর হাতে জিম্মি চার জেলেকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। আজ শুক্রবার ভোরে সুন্দরবনের শিবসা নদীসংলগ্ন আড়বাউনি খালে অভিযান চালিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। এ সময় দস্যুদের আস্তানা থেকে অস্ত্র ও গুলি জব্দ করা হয়।

উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেন খুলনার কয়রা উপজেলার মফিজুল ইসলাম (৪২), হাবিবুর রহমান (৩৭), দাকোপ উপজেলার মো. হাবিবুর (৩৫) এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার শাহজাহান গাজী (৪০)। কোস্টগার্ড জানায়, তাঁদের ১০ দিন ধরে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য দফায় দফায় নির্যাতন চালিয়েছে দস্যুরা।

আজ শুক্রবার সকালে কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ওই স্থানে কয়েকজন জেলেকে জিম্মি করে রেখেছিল জাহাঙ্গীর বাহিনী। অভিযানের সময় ডাকাত দলটিকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে কোস্টগার্ড। পরে দস্যুরা নৌকা ও জিম্মিদের ফেলে বনের ভেতরে পালিয়ে যায়। নৌকাটিতে তল্লাশি চালিয়ে একটি একনলা বন্দুক, দুটি এয়ারগান ও তিনটি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। নৌকাটি থেকে চার জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুনদস্যুতায় ফিরছে আত্মসমর্পণকারীরা, ‘দুলাভাই বাহিনী’সহ ১৪ দল সক্রিয় ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কোস্টগার্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ১৮ জন দস্যুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২৩১টি গুলি।

সার্বিক বিষয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. কমান্ডার আবরার হাসান বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে নিয়মিত অপারেশন, হটস্পট এলাকায় বিশেষ টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনপাচারকারীসহ আরও কিছু কারণে হুমকির মুখে সুন্দরবনের বাঘ২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ