তুরাগ নদে বিজয়া দশমীতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ দুই শিশুর মধ্যে একজনের লাশ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বরিয়াবহ এলাকায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ভেসে উঠেছে। আজ শনিবার সকালে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করেছেন। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে আরেক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়।

এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৩৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এলাকার প্রায় সব প্রতিমা তুরাগ নদে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিজয়া দশমীর দিন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হিজলতলী এলাকায় বিসর্জনের সময় একটি নৌকা ডুবে যায়। এ ঘটনায় বেশির ভাগ মানুষ সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ৪ বছরের অঙ্কিতা ও ৯ বছরের তন্ময় নিখোঁজ হয়। গতকাল সকালে ডুবুরি দল অঙ্কিতার লাশ উদ্ধার করে। সারা দিন তন্ময়কে খোঁজাখুঁজি করা হলেও পাওয়া যায়নি। আজ সকালে স্থানীয় লোকজন বরিয়াবহ-রসুলপুর ব্রিজের পাশে ঘাটাখালী নদীতে তন্ময়ের লাশ ভেসে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করেন।

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ইফতেখার রায়হান চৌধুরী বলেন, তুরাগ নদের স্রোতে শিশুটির লাশ ভেসে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে চলে যায়। যার কারণে শুক্রবার সারা দিন ডুবুরি দল চেষ্টা করেও লাশ খুঁজে পায়নি। আজ সকালে ঘাটাখালী নদীর বরিয়াবহ এলাকায় লাশ ভেসে উঠলে স্থানীয় লোকজন দেখতে পান। পরে লাশ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সেপ্টেম্বরে সড়কে ঝরে ৪১৭ প্রাণ

গত সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে ৪৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪১৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৮২ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৬৩ জন ও শিশু ৪৭ জন।

শনিবার (৪ অক্টোবর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে প্রাইভেটকার-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে যুবক নিহত

জুমার নামাজ পড়াতে যাওয়ার পথে প্রাণ গেল ইমামের

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৩ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এছাড়া দুর্ঘটনায় ১১২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৬ জন, অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।

একই সময়ে দেশে ১৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। পাশাপাশি ২৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৪৩ জন (৩৪.২৯ শতাংশ), বাসযাত্রী ৩৫ জন (৮.৩৯ শতাংশ), ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ও ট্রাক্টরের আরোহী ২৩ জন (৫.৫১ শতাংশ), প্রাইভেটকারের যাত্রী ৮ জন (১.৯১ শতাংশ), থ্রি–হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান) যাত্রী ৬৯ জন (১৬.৫৪ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, টমটম, মাহিন্দ্র) যাত্রী ১৬ জন (৩.৮৩ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল ও রিকশা আরোহী ১১ জন (২.৬৩ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনার স্থান ও ধরন সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট দুর্ঘটনার মধ্যে ৩৬ দশমিক ০৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩১ দশমিক ১৬ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে এবং ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ শহরের সড়কে ঘটেছে।

ধরন অনুযায়ী দেখা যায়, ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ দুর্ঘটনা মুখোমুখি সংঘর্ষে, ৩৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ২৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ পথচারীকে ধাক্কা বা চাপা দিয়ে, ১৩ শতাংশ পেছন থেকে আঘাতে এবং ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় জড়িত ৬৬১টি যানবাহনের মধ্যে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, ড্রাম ট্রাকসহ ভারী যানবাহন ছিল ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, বাস ১৮ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৪ দশমিক ০৫ শতাংশ, থ্রি–হুইলার ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যান ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, মাইক্রোবাস–প্রাইভেটকার–জিপ ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বাইসাইকেল–রিকশা ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী সময় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার ৩০ শতাংশ সকালবেলা, ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ রাতে, ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ দুপুরে, ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ বিকেলে, ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ সন্ধ্যায় এবং ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোরে ঘটেছে।

বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে–১২৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ১২৪ জন। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ শতাংশ দুর্ঘটনা, রাজশাহী বিভাগে ১৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সিলেটে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, রংপুরে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, খুলনায় ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং বরিশালে ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে ১৪ জনের।

একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রামে ৫২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৫ জন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা মাগুরায়–৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ১ জন। রাজধানী ঢাকায় সেপ্টেম্বর মাসে ৪২টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ২ জন, শিক্ষক ৭ জন, সাংবাদিক ৩ জন, ব্যাংক ও বিমা খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারী ৬ জন, এনজিও কর্মী ৭ জন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ইউপি সদস্য ৬ জন, ব্যবসায়ী ১৮ জন, বিক্রয় প্রতিনিধি ৯ জন, মোটর মেকানিক ২ জন, পোশাক শ্রমিক ৪ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৩ জন, কৃষি শ্রমিক ৩ জন, চা শ্রমিক ১ জন, উদীচী কর্মী ১ জন এবং শিক্ষার্থী ৪৯ জন।

প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার ১১টি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে–ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, খারাপ সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা অনির্দিষ্ট থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যান চলাচল, তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন অমান্য, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

এমন অবস্থায় দুর্ঘটনা রোধে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ, চালকদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও বেতন, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, মহাসড়কে সার্ভিস রোড তৈরি, রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, রেল ও নৌপথ উন্নয়ন, টেকসই পরিবহন কৌশল বাস্তবায়ন এবং ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার সুপারিশ জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ