এসো

এই গ্রীষ্মের প্রান্তরে অজৈব ছায়ায় একটানা হেঁটে হেঁটে
ভীষণ ফ্যাকাসে হয়ে গেছ
এসো অযান্ত্রিক রোদে, খানিক জিরিয়ে নাও।

না হয় কবুল করে নিলে হতশ্রী সংসার
তথাপি ভাবনা কী; শিরীষপাতায় আছে শিশিরের গান
রূপা-জোছনায় জুঁইফুলের গন্ধ!

জীবনের ঘাম লহমায় মুছে ফেলার কোনো রুমাল নেই
ছত্রখান ভালোবাসায় তোমাকে পাহাড়ি বাংলোর মতো
একান্ত ঝলমলে গল্প উপহার দেব—
এসো বিশ্বস্ত রোদে, জিরিয়ে নাও
অজৈব ছায়ায় হেঁটে হেঁটে ভীষণ ফ্যাকাসে হয়ে গেছ!

জনৈক নির্জন রোদ

জনৈক নির্জন রোদ, মতিচ্ছন্ন;
বুকে তার অসুখের মতো ভালোবাসার বেদনা
সেই আলোড়ন টের পেয়ে মাঝে মাঝে
দু চারটে সুমিষ্ট গোলাপ
বেদনার ভাগ নেবে বলে সাড়া দিয়েছিল।

মতিচ্ছন্নের জ্বরের তন্তু জাগা মুখ
চালচুলাহীন পাতাঝরা শীতের দুপুর
সামান্য সুবাস ছড়িয়েই একে একে
সরে গেল সব বিষয়ী-গোলাপ!

নির্জন রোদ্দুর তার গহিনের স্বরলিপি যত
জমা রাখে কুয়াশার বুকে
সে সংগীত জেগে থাকে শুধু বৃষ্টির জন্মরেখায়।

নগরজন্ম

একদিন মানচিত্রে কোথাও ছিল না এই নগরের দাগ
ছিল না হিরণদ্যুতি-প্রাসাদের গগনছোঁয়া গরিমা
নিতল কুয়াশা; গভীর আড়ালে তার ছিল শুধু ছিন্নঘুম
জল স্থল অন্তরিক্ষে ছিল কিছু জোনাকি-সংকেত
কোনো এক মানবসংগমে হঠাৎ জেগে ওঠার!

মোহনায় মিলনগামী সে অনেক বিরহজল
প্রকাশে ইচ্ছুক আকাশে আকাশে দগ্ধতারা-নীল
ছিন্নঘুমে ডুবে থাকা অন্ধ স্বপ্নরেশ
পৃথিবীর বুকে লুপ্ত কোটি ফসলের চোয়ানো নির্যাস থেকে
ইট কাঠ বালি জল সিমেন্ট ও পাথরের মিলিত উল্লাসে
একদিন কুয়াশার ঘের ভেঙে মাথা তোলা রাতুল নগর!

কতবার কত মেঘ জমতে জমতে ভেঙে গেছে আকাশেই
কতবার গন্ধরাশি সেতু ভেঙে পড়ে গেছে আগুন নদীতে
মেলেনি ফুলের সঙ্গ
আজ নগরের দেহ ধুয়ে বিমোহিত বৃষ্টিজল
অযুত সৌগন্ধে হেসে ওঠা অগণিত পুষ্পোদ্যান!

আমি এই নগরের অনিন্দ্য রূপে অবাক-চোখ শিশু
বাতাসের সঙ্গে ভেসে ভেসে দেখি যাবতীয় কুশল নির্মাণ
নগরের হৃৎপিণ্ডে কান পাতি—
শুনি হরপ্পা নালন্দা তক্ষশীলা
রোম স্পার্টা এথেন্স অ্যাশিরিয়ান; হাজার বিলুপ্ত নগরের শ্বাস!

দিনলিপি

কিশোরের গোপন কোঁচড় থেকে
সরে গেছে আমকাটা চাকু; সে-ও কতকাল!
ভার্চ্যুয়াল ফেনায় ফেনায় চমৎকার হাবুডুবু দিন
পতিত আকাশখাতা
আপতিক ঝড়ে থেমে যাওয়া ডানালেখা।

শব্দের প্লাবন, ভুলভাল কথামূর্তি, সুচতুর গড়াপেটা
সবখানে ঢুকে পড়া জল—আলাপ ও আহ্লাদের পচ্।
খরার ভেতর যে ফুলগাছটি প্রাণপণ বেঁচেছিল
জলত্রাসে ওর নিশ্বাস নেওয়াই দায়!
ঘরে ঘরে বিপ্রতীপ ঘুম, প্রত্যেকের স্বপ্নের স্বতন্ত্র শিং
মাত্র দু ফালি মেঘের যৌথমুখ
তা-ও কোনো আয়না ধারণ করতে অনিচ্ছুক।

ঝড় ও প্লাবন, খরা বা ভাঙন—এসব ছাপিয়ে
রিরংসার বাহারি শকুন ওড়ে আকাশে আকাশে।

অতিমারী

শোন্ অরুন্ধতী,
তুই যখন ঢাউস অন্ধকার-বেষ্টিত খুব একাকী
তখন হয়তো চাঁদের ছবি উঁকি দেবে মনে
কিন্তু তোকে যদি তুমুল পূর্ণিমায় ছেড়ে দিই
দেখবি সুখদ-আগুনে মন মোটেও পুড়ছে না
হয়তো অস্ফুটে উচ্চারণ করবি—‘এত আলো’!
তাতে বুকে এক লাইন কবিতাও আসবে না—
আজকাল এমনটিই হচ্ছে, বিশ্বাস কর।

ধর, ধু-ধু মরুবালির ওপর তোর হাঁসফাঁস জীবন
টলটলে জলস্রোতের স্বপ্ন দেখছিস
তোকে যদি থই থই কোনো নদীর ধারে নিয়ে যাই
দেখবি ভেতর থেকে এক তিল মরুক্লান্তি সরছে না
সেই চাঁদ, সেই পুরাতন নদী; বিচ্ছেদশরে রক্তাক্ত!
চারপাশে চলমান মনগুলো বাজিয়ে দ্যাখ্
ন্যূনতম জলধর্ম নেই—
মনেরও কি তবে অতিমারি হয়?
ওরাও কি পেল কোনো অদৃশ্য সঙ্গনিরোধ আজ্ঞা!
 
টের পাচ্ছিস, মহার্ঘ মোহনা আর উজানচিহ্নগুলো
চোখের সামনে কেমন বাষ্প হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে!

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশিত

নৈতিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবকেন্দ্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পন্ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি মূল্যায়ন (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট—র‌্যাম) প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এআই গ্রহণের মাধ্যমে অধিকার সুরক্ষা, অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করার পথনির্দেশক হিসেবে এ প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আজ বৃহস্পতিবার অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট—এটুআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার আইসিটি টাওয়ারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মিলনায়তনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, এটুআই, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে র‌্যাম প্রতিবেদনটি উন্মোচন করা হয়। এতে বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

প্রতিবেদনটিতে এআই বিষয়ে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক, আইনগত, সামাজিক ও কারিগরি প্রস্তুতির প্রথম সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল সরকারব্যবস্থায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে ও সরকারি ডিজিটাল সেবার প্রতি নাগরিকদের আস্থার মাত্রাও উচ্চমানের। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে অনিয়মিত ইন্টারনেট সংযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, লিঙ্গভিত্তিক ও শহর-গ্রামের দীর্ঘস্থায়ী ডিজিটাল বৈষম্য, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং তথ্য সুরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধির ঘাটতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘এই মূল্যায়ন প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে প্রকাশিত হলো। বাংলাদেশ এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে এখন নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো আগামী কয়েক দশক ধরে সমাজকে প্রভাবিত করবে। এই প্রতিবেদন আমাদের স্পষ্টভাবে দেখায় আমরা কোন অবস্থানে আছি এবং কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বিচারের বিকল্প না হয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করে। আর নাগরিকদের শোষণ না করে তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত করে।’

আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী চলমান নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায়, বিশেষ করে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে র‌্যাম প্রতিবেদনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নীতি নির্ধারণ হতে হবে অনুমাননির্ভর নয়, প্রমাণনির্ভর।

ইউনেসকোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত নীতিনির্দেশনা-ভিত্তিক সুপারিশের আলোকে প্রণীত এ মূল্যায়নে জাতীয় পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিস্তৃত পরামর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ইউনেসকো কার্যালয়ের প্রধান ও কান্ট্রি প্রতিনিধি সুসান ভাইজ তাঁর বক্তব্যে র‌্যাম প্রতিবেদনকে একই সঙ্গে ‘একটি দর্পণ এবং একটি রূপরেখা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। একদিকে শাসনব্যবস্থা, অবকাঠামো, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ও তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন এতে রয়েছে, অন্যদিকে অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ নির্ধারণে সহায়ক সুস্পষ্ট রূপরেখা এতে আছে। তিনি তথ্য সুরক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা, বাংলা ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় উচ্চমানের তথ্যভান্ডার তৈরি এবং কন্যাশিশু ও নারীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, এআই ব্যবধান কমাবে নাকি বাড়াবে, তা নির্ভর করবে দেশগুলো এখন কী সিদ্ধান্ত নেয় তার ওপর। সংযোগ, দক্ষতা, ডেটা এবং কম্পিউটিং অবকাঠামো শক্তিশালী করা, নির্ভরযোগ্য নিয়ন্ত্রক ও শাসনকাঠামো তৈরি করা এবং জাতীয় সক্ষমতার সঙ্গে এআই কৌশলগুলোকে খাপ খাইয়ে নেওয়া—এই সবকিছুই নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিমালার ওপর ইউনেসকোর সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা মানবাধিকার, ন্যায়বিচার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে গতিশীল করবে।

এটুআই কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক মোহা. আবদুর রফিক র‌্যাম প্রতিবেদনে উত্থাপিত সুপারিশগুলোকে সেবাদানে দৃশ্যমান উন্নতিতে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, র‌্যাম প্রতিবেদন নাগরিকমুখী সেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করা যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবে, যাতে মানুষ দ্রুততর, ন্যায্য ও আরও নির্ভরযোগ্য সাড়া পায়, কিন্তু বিদ্যমান ডিজিটাল বৈষম্য যেন কোনোভাবেই না বাড়ে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দপ্তরের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান মিখাল ক্রেজা বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই প্রতিবেদন একটি আস্থাভিত্তিক এআই ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে সহায়তা করবে, যাতে উদ্ভাবনের সুফল সব নাগরিকের কাছে পৌঁছে যায়। বিশেষ করে তরুণ, নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ