ছেলেদের আধা পাকা ঘরের পাশে মায়ের ঝুপড়ি, অযত্ন-অবহেলায় দীর্ঘশ্বাস
Published: 5th, October 2025 GMT
নবতিপর হালিমা বেগম বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। থাকেন ছোট্ট একটা ঝুপড়িতে। মাটি ছুঁই ছুঁই একটি চৌকির ওপর প্লাস্টিকের কয়েকটি বয়াম ও প্লেট। তেলচিটচিটে একটি বালিশ, একটি কম্বল ও এক প্রান্তে প্লাস্টিকের একটি বস্তা। ঘরের এক কোনায় প্লাস্টিকের কমোডওয়ালা চেয়ার বসানো। একচালা ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ে। মেঝেতে ইঁদুর মাটি উঠিয়েছে। প্রায় অন্ধকার ঘরটির মাথার ওপর বাঁশের সঙ্গে ঝুলছে একটি টেবিল ফ্যান। জীবনসায়াহ্নে এই ঘরের চৌকিতে শুয়ে-বসে কাটছে তাঁর সময়।
হালিমার ঝুপড়ির সঙ্গে দুই ছেলের আধা পাকা ঘর। সেখানে বৃদ্ধ মায়ের জায়গা হয়নি। পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা সেখানে বসবাস করেন। ছোট্ট চৌকিতে শুয়ে-বসে তাঁদের হাঁটাচলা দেখেন হালিমা। দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে। বৃদ্ধার চার মেয়ে ও তিন ছেলে। তাঁদের মধ্যে দুটি ছেলে মারা গেছেন। বাকি পাঁচজনের কেউ ঠিকমতো খবর রাখেন না।
হালিমা বেগমের বাড়ি জামালপুর পৌর শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকায়। স্বামী মফিজ উদ্দিন প্রায় ৪৫ বছর আগে মারা গেছেন। কাঁচামাল ব্যবসায়ী স্বামীর মৃত্যুর পর হালিমাই কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছেন। মেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেদের মধ্যে সবার ছোট শহীদ শেখ ঢাকায় ব্যবসা করেন। সন্তানদের সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে কিছুই বলতে চাইছিলেন না। দুই পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা সামনে থেকে সরে গেলে আক্ষেপের কথা বললেন। বয়স্ক ভাতার টাকাটাও নাকি ছেলের কাছে আসে বলে জানালেন।
বয়সের ভারে হালিমার হাত-মুখের চামড়া কুঁচকে গেছে। শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা হয় না। আগে লাঠিতে ভর দিয়ে চলতে পারলেও এখন সেটাও পারেন না। ডান চোখে একেবারেই দেখেন না। আক্ষেপ করে হালিমা বলেন, ‘এই সংসারে কতই–না কষ্ট করেছি। নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আজ সেই সন্তানেরা একবারও জিজ্ঞেস করে না, কেমন আছি?’ এরপর হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
ঝুপড়ির পাশেই ছেলেদের আধা পাকা ঘর। পুত্রবধূসহ নাতি-নাতনিরা থাকলেও সেখানে জায়গা হয়নি বৃদ্ধা মায়ের। শনিবার দুপুরে জামালপুর পৌর শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সন ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি বন্ধ করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়সহ সব শাখা কার্যালয় থেকে সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড বিক্রিসহ পাঁচ ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এই সেবা বন্ধের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, সদরঘাট, বরিশাল ও রংপুর কার্যালয় থেকে এই পাঁচ সেবা দেওয়া বন্ধ। সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড ছাড়া বন্ধ হওয়া সেবার তালিকায় আরও রয়েছে ছেঁড়াফাটা নোট বদল, সরকারি চালানের টাকা জমা দেওয়া ও চালানসংক্রান্ত ভাংতি টাকা প্রদান। এখন থেকে গ্রাহকদের এসব সেবা নিতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার ও ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এসব সেবা বন্ধ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিশ্বের কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাউন্টার থেকে সরাসরি সাধারণ মানুষকে এ ধরনের সেবা দেওয়া হয় না। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহক–সংশ্লিষ্ট এসব সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন নির্বিঘ্নে সাধারণ মানুষকে এসব সেবা দেয়, তা নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়াবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে এ সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিকভাবে ১ ডিসেম্বর থেকে এই সেবা বন্ধের কথা বলা হয়। এরপর ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শাখা কার্যালয় থেকে এ ধরনের সব সেবা বন্ধের পরিকল্পনা নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে একাধিক সভার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এখন তার আগে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয় থেকে এসব সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজই এসব সেবা দেওয়ার শেষ দিন ছিল।