মেটা এআই চ্যাটবটে কথোপকথনের তথ্য ব্যবহার করবে বিজ্ঞাপন দেখানোর কাজে
Published: 5th, October 2025 GMT
মেটা তাদের গোপনীয়তা নীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর ওপর। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ব্যবহারকারীদের এআই চ্যাটবট ও অন্যান্য সৃজনশীল টুল ব্যবহারের তথ্য বিজ্ঞাপন পার্সোনালাইজেশনের কাজে লাগানো হবে।
মেটার এআই চ্যাটবট ও অন্যান্য সুবিধা আগের মতোই বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যাবে। ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে সরাসরি কোনো অর্থ নেওয়ার পরিকল্পনা নেই প্রতিষ্ঠানটির। তবে বিজ্ঞাপন থেকে আয় বাড়ানোই এ পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য।
বিজ্ঞাপনই মেটার আয়ের প্রধান উৎস এবং নতুন নীতির মাধ্যমে সে আয় আরও শক্তিশালী হবে। মেটা বলছে, এআই ব্যবহারের তথ্য কাজে লাগানো হলে বিজ্ঞাপন আরও প্রাসঙ্গিক মনে হবে। যদি কোনো ব্যবহারকারী হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাটবটে ব্যায়াম পরিকল্পনা চান, তবে পরে ইনস্টাগ্রামে তার সামনে ফিটনেস সামগ্রীর বিজ্ঞাপন আসতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে নতুন ধরনের উদ্বেগও তৈরি হবে। ব্যবহারকারীর কাছে সহায়ক টুল আর নজরদারি ব্যবস্থার সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। কারণ, কোনো ধরনের অপ্ট–আউট সুবিধা থাকবে না। ফলে ভ্রমণসংক্রান্ত তথ্য খোঁজা থেকে শুরু করে রান্নার রেসিপি পর্যন্ত প্রতিদিনের নানা প্রশ্নই মেটার বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে।
মেটা জানিয়েছে, রাজনীতি, ধর্ম, স্বাস্থ্য, যৌনতা বা বর্ণ নিয়ে কথোপকথনের তথ্য বিজ্ঞাপন দেখানোর কাজে ব্যবহার করা হবে না। তবে শখ, পছন্দ কিংবা কেনাকাটাসংক্রান্ত তথ্য বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করা হবে। যেহেতু মেটার প্ল্যাটফর্মগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত, তাই ফেসবুকের চ্যাটবটে দেওয়া তথ্য ইনস্টাগ্রামে দেখা বিজ্ঞাপনের ধরনও প্রভাবিত করতে পারে। প্রযুক্তি খাতের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এ ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। অ্যামাজন ইতিমধ্যে অ্যালেক্সা প্লাস–এ কথোপকথনের ভেতর সরাসরি বিজ্ঞাপন চালুর ঘোষণা দিয়েছে। গুগল ও মাইক্রোসফটও জেনারেটিভ এআইতে বিজ্ঞাপনের পরীক্ষা চালাচ্ছে। তবে তারা একে ‘স্পন্সরড রেজাল্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করছে। ফলে মেটাও এই প্রচলিত প্রবণতার দিকেই এগোচ্ছে।
মেটার হিসাবে, বর্তমানে প্রতি মাসে ১০০ কোটির বেশি মানুষ তাদের এআই সেবা ব্যবহার করছেন। এতে এআই এখন বিশাল এক ডেটার ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। চ্যাটবটের কথোপকথনকে বিজ্ঞাপনের সংকেত হিসেবে কাজে লাগিয়ে মেটা তাদের মূল আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন ব্যবসার সঙ্গে এআই সরাসরি যুক্ত করছে। অর্থাৎ, যত বেশি ব্যবহারকারী চ্যাট করবেন, বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে তাঁদের মূল্য তত বাড়বে।
সূত্র: নিউজ১৮ ডটকম
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর চ য টবট
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিচার: আসামিপক্ষের দুর্বল আইনি সহায়তা ও ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক যুক্তি
শেখ হাসিনার এই বিচারে দুটি গুরুতর সমস্যা আছে। প্রথমত, আদালতের নিযুক্ত আসামিপক্ষে যে আইনজীবী ছিলেন, তিনি প্রসিকিউশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলো নিয়ে একেবারে সাধারণ যে প্রশ্নগুলো তোলা উচিত ছিল, সেগুলোও তুলতে ‘ব্যর্থ’ হয়েছেন।
দ্বিতীয় সমস্যা হলো, বিচারকেরা নিজেদের উদ্যোগেও প্রমাণগুলো কঠোরভাবে খতিয়ে দেখেননি, সব ক্ষেত্রে না হলেও অন্তত কয়েকটি ক্ষেত্রে তা হয়েছে। প্রসিকিউশনের পেশকৃত চিত্র এবং তাদের দেওয়া সাক্ষী-প্রমাণ দ্বারা কী প্রতিষ্ঠিত হয়, সে বিষয়ে আদালত প্রসিকিউশনের অবস্থানটাই মেনে নিয়েছেন বলে মনে হয়েছে। আসামিপক্ষের দুর্বল আইনি লড়াইয়ের কারণে বিষয়টা আরও বেশি সমস্যাজনক হয়ে উঠেছে।
এই দুই সমস্যার ফলে আদালত বিচারের রায়ে যেসব যুক্তি নিয়ে এসেছেন, তার ভেতর কিছু ত্রুটি দেখা যাচ্ছে। এর একটি দৃষ্টান্ত হলো ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ইন্টারসেপ্টেড) ফোনকল। ছাত্র আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার কুখ্যাত ‘রাজাকার’ মন্তব্যের পর ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং এর ফলে আন্দোলন আরও উত্তাল হয়। সেই মন্তব্যেরই কয়েক ঘণ্টা পর উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপটি হয়েছিল।
প্রসিকিউশন যুক্তি দিয়েছে, ওই ফোনকল প্রমাণ করে, হাসিনা ছাত্রদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, আদালত যেভাবে পড়ে শুনিয়েছেন, তাতে হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগের দুটির ক্ষেত্রে এই নির্দিষ্ট দাবিটি একটি ভিত্তি হিসেবে এসেছে। রায়ে ট্রাইব্যুনাল এই অভিযোগকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই ব্যাখ্যা প্রশ্নের সৃষ্টি করে।
আদালতে পাঠ করা রায়ে বিচারপতি শফিউল আলম বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে আসামি হাসিনা উল্লেখ করেন, যেভাবে রাজাকারদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, ঠিকে সেভাবে ছাত্রদের ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য তিনি ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন।’
কিন্তু হাসিনার কথোপকথন বিশ্লেষণ করলে আদালতের এই ব্যাখ্যায় (ইন্টারপ্রিটেশনে) ভুল আছে বলে ধারণা হয়। ট্রাইব্যুনালের দাবি প্রমাণ করতে বিচারক হাসিনার কথোপকথনের তিনটি অংশ আদালতে পড়ে শোনান।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার ফাঁসির রায় এবং তাঁর রাজনৈতিক মৃত্যু১৭ নভেম্বর ২০২৫প্রথমটিতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘তো রাজাকারের তো ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও তাই করব। একটাও ছাড়ব না, আমি বলে দিছি।’ দ্বিতীয়টিতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘কোন দেশে বাস করি আমরা? রাজাকারদের কী অবস্থা হয়েছে দেখিস নাই, এবার তোদেরও ছাড়ব না।’ তৃতীয়টিতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘সব এইগুলাকে বাইর করে দিতে হবে…আমি বলে দিচ্ছি আজকে সহ্য করার পরে অ্যারেস্ট করবে, ধরে নেবে এবং যা অ্যাকশন নেওয়ার নেবে।’
প্রথম দুটি বক্তব্য স্পষ্টভাবে রাগের বহিঃপ্রকাশ। এটি সহিংস ভাষা, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি যে বিষয়টি বলছেন, তা বিচারিক শাস্তির কথা, তা বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা নয়। হাসিনা আইসিটি রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের সঙ্গে ছাত্রদের তুলনা করছেন। তার অর্থ, তিনি চেয়েছেন আদালতের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তাঁর বক্তব্য আক্রমণাত্মক হলেও তিনি কোথাও বলেননি, তিনি রাস্তায় আন্দোলনকারীদের হত্যা করতে চান।
এমনকি তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয়, হাসিনা ‘ফাঁসি’ শব্দটি ‘হত্যা’বোঝাতে ব্যবহার করেছেন, তাহলেও কথোপকথনের কোথাও তিনি বলেননি, তিনি এমন কোনো আদেশ ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। অথচ বিচারক এমনটিই দাবি করেছেন।
ট্রাইব্যুনাল যেভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা হয়তো হাসিনা যেভাবে কথাটা বলেছিলেন সে কারণে, ‘আমি বলে দিছি’। কিন্তু তাঁর এই উক্তি সুস্পষ্ট না, এবং এর অর্থ এটা দাঁড় করানো মুশকিল যে হাসিনা এর মাধ্যমে হত্যার ‘নির্দেশ’ দিয়ে দিয়েছেন। অথবা ট্রাইব্যুনালের এই ব্যাখ্যার পেছনে আরেকটি কারণ হতে পারে যে ট্রাইব্যুনাল ভুলবশত ফোনকলের দুটি সম্পর্কহীন অংশকে একসঙ্গে করেছেন।
শেষ উদ্ধৃতিটি, ‘আমি বলে দিচ্ছি’—এসেছে কেবল তখনই, যখন উপাচার্য বলেন, ‘হ্যাঁ—এবার এই ঝামেলাটা যাক। এরপরে আমিও নিজে ধরে ধরে যারা এই অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, (এর পেছনে) মেইন যারা আছে এদেরকে বহিষ্কার করব ইউনিভার্সিটি থেকে।’
এই পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনার ‘আদেশ’ বলতে ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার আদেশ বোঝানো হয়েছে। এই ‘আদেশ’ মানে ছাত্রদের আটক করার আদেশ, যা কিনা তিনি পরে বাস্তবে করেছিলেন। এখানে কোথাও ফাঁসি দেওয়া, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বা কাউকে হত্যা করার কোনো নির্দেশের কথা নেই।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার সাজা: আরও শহীদ পরিবার বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছে২৩ মিনিট আগেঅতএব, ১৪ জুলাইয়ের ফোনালাপ প্রমাণ করে হাসিনা ‘আগেই’ হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন বলে প্রসিকিউশন যে দাবি করেছে এবং ট্রাইব্যুনাল যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তার ভিত্তি বেশ দুর্বল বলা যায়। বরং প্রাপ্ত প্রমাণ থেকে বোঝা যায় ওই ঘটনার চার দিন পর, অর্থাৎ ১৮ জুলাই হাসিনা স্পষ্টভাবে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ দেন।
সাবেক মেয়র তাপসের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন, ‘আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিছি এখন, এখন লেথাল উইপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে।’
হাসিনা এই নির্দেশ দিয়েছেন তার সপক্ষে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সাক্ষ্য রয়েছে। ১৪ জুলাইয়ের ফোনালাপকে হত্যার আদেশ হিসেবে দেখা পুরোপুরি ভুল ছিল এবং সত্যিকার হত্যার আদেশ আসলে ১৮ জুলাই দেওয়া হয়েছিল। ১৮ জুলাই পর্যন্ত কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ যে দেওয়া হয়নি, তা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ। এর বড় প্রভাব বা গুরুত্ব আছে।
যদি ট্রাইব্যুনাল-১ যথাযথ যোগ্য ও অভিজ্ঞ ডিফেন্স আইনজীবী নিয়োগ করতেন, তাহলে তাঁরা আসামিকে বাঁচাতে জোর চেষ্টা করতেন। তাঁরা প্রায় নিশ্চিতভাবেই ১৪ জুলাইয়ের কথোপকথন–সম্পর্কিত প্রসিকিউশনের ব্যাখ্যা খতিয়ে দেখতেন এবং ওপরে উল্লেখিত পয়েন্টগুলো তুলে ধরতেন। কিন্তু তা না করে তার বদলে ডিফেন্স আইনজীবী শুধু দাবি করেছেন, ফোনালাপগুলো এআই দিয়ে তৈরি করা। তাঁরা এসব ফোনালাপের কোনো স্বাধীন পরীক্ষার আয়োজনও করেননি।প্রথমত, এটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ১-এর ভিত্তিকে দুর্বল করে। ওই অভিযোগে বলা হয়, ১৫-১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের অংশ ছিল। ওই অভিযোগে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই অভিযোগ মূলত ১৪ জুলাই উপাচার্যের সঙ্গে হাসিনার কথোপকথনের ভুল ব্যাখ্যার ওপরই নির্ভর করছে বলে প্রতীয়মান হয়।
দ্বিতীয়ত, এটি রংপুর ও চট্টগ্রামে ১৬ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চলমান আইসিটি তদন্ত ও মামলার ওপর গুরুতর সংশয় তৈরি করে, যার আরও কিছু বিষয়ের ওপর বৃহত্তর প্রভাব থাকবে।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা কি তাহলে পুলিশের ওপরই সব দায় চাপিয়ে দিলেন০৬ নভেম্বর ২০২৫এর মধ্যে আছে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ হত্যাসংক্রান্ত বিচার এবং চট্টগ্রাম শহরে তিনজন মানুষ হত্যার তদন্ত (যার অন্যতম ফলাফল হিসেবে নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী ৯ মাস যাবৎ আটক রয়েছেন)। বিশেষভাবে এই মামলাগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে দেখা শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। কারণ, ১৬ জুলাই বা তার আগের ঘটনাগুলোকে ‘নাগরিক জনগণের ওপর ব্যাপক বা পরিকল্পিত আক্রমণ’ হিসেবে দেখানো কঠিন। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য এ বিষয়টি প্রমাণ হওয়া আবশ্যক।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রসিকিউশন এই যুক্তি ব্যবহার করছিল যে হাসিনা ১৪ জুলাই ইতিমধ্যেই হত্যার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু এই দাবি ভিত্তিহীন। আর যদি এই দাবির ভিত্তি না থাকে, তাহলে ১৬ জুলাই হত্যাকাণ্ডগুলোকে ‘রাষ্ট্রের নীতি অনুযায়ী সংঘটিত’ বলা (যা মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণ করার জন্য খুব জরুরি) এবং সেটার পক্ষে যুক্তি দেওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো আবু সাঈদ হত্যার বিচার নিয়ে কাজ করা ট্রাইব্যুনাল-২ কি ট্রাইব্যুনাল-১-এর (যা হাসিনার বিচারের আদেশ দিয়েছিল) আইনগত ও বিষয়ভিত্তিক যুক্তি অনুসরণ করতে বাধ্য, নাকি তা থেকে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আরও পড়ুনদ্য উইকে শেখ হাসিনার নিবন্ধ, অস্বীকারের রাজনীতি ও অসত্য চর্চার নমুনা১৪ নভেম্বর ২০২৫যদি ট্রাইব্যুনাল-১ যথাযথ যোগ্য ও অভিজ্ঞ ডিফেন্স আইনজীবী নিয়োগ করতেন, তাহলে তাঁরা আসামিকে বাঁচাতে জোর চেষ্টা করতেন। তাঁরা প্রায় নিশ্চিতভাবেই ১৪ জুলাইয়ের কথোপকথন–সম্পর্কিত প্রসিকিউশনের ব্যাখ্যা খতিয়ে দেখতেন এবং ওপরে উল্লেখিত পয়েন্টগুলো তুলে ধরতেন। কিন্তু তা না করে তার বদলে ডিফেন্স আইনজীবী শুধু দাবি করেছেন, ফোনালাপগুলো এআই দিয়ে তৈরি করা। তাঁরা এসব ফোনালাপের কোনো স্বাধীন পরীক্ষার আয়োজনও করেননি।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীর ব্যর্থতা বিচারকদের দায় কমায় না। বিচারকদের নিজেদেরই, বিশেষ করে ১৪ জুলাইয়ের কথোপকথনের ক্ষেত্রে প্রমাণগুলো স্বাধীন ও ন্যায়সংগতভাবে বিবেচনা করা উচিত ছিল, কিন্তু তারা তা করেছেন বলে মনে হয়নি।
পরিপূর্ণ রায় পাওয়ার পর বোঝা সম্ভব হবে সেখানে ১৪ জুলাইয়ের ফোনালাপ নিয়ে ট্রাইব্যুনালের যে ভাষ্য এখন পাওয়া গেছে, তার বিস্তারিত আইনি যুক্তি ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে কি না।
ডেভিড বার্গম্যান সাংবাদিক। বহু বছর ধরে আইসিটির বিচার কার্যক্রম ও বাংলাদেশ নিয়ে লিখছেন। তাঁর সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করা যাবে এখানে: david.bergman.77377
*মতামত লেখকের নিজস্ব