শিক্ষকদের সুষম বেতন কাঠামোসহ ইউট্যাবের ১২ দফা
Published: 5th, October 2025 GMT
সব স্তরের শিক্ষকদের জন্য একটি সুষম ও মর্যাদাসম্পন্ন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
রবিবার (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার পি জে হার্টজ ইন্টারন্যাশনাল হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব দাবি জানান।
আরো পড়ুন:
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
ফিলিস্তিনের মানুষ মুসলমান বলেই ইজরায়েল হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে: ইউটিএল
এ সময় লিখিত বক্তব্যে ইউট্যাবের সভাপতি ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “শিক্ষার ভিত্তি তৈরির মূল দায়িত্ব পালন করেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকবৃন্দ। অথচ এই দুই স্তরের শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি জাতীয় বেতন স্কেলে নিম্ন স্তরে আটকে আছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ লাভ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এটি সর্বনিম্ন।”
তিনি আরো বলেন, “মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ বেতন ও অন্যান্য পেশাগত সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিতে চরম বৈষম্যের শিকার। দেশের মাধ্যমিক স্তরের ৯৭ শতাংশ শিক্ষা কার্যক্রম চলছে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে। এতে কর্মরত বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়নি।”
“জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেসব বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স চালু আছে, সেখানে কর্মরত শিক্ষকদের এখন পর্যন্ত এমপিওভূক্ত করা হয়নি। এটি শিক্ষকদের প্রতি সরকারের এটি চরম বৈষম্যমূলক নীতি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষকগণ অন্যান্য সমযোগ্যতার সরকারি কর্মকর্তাদের তুলনায় কেবল আর্থিক সুযোগ সুবিধায়ই পিছিয়ে নন, পদোন্নতি প্রক্রিয়ায়ও তারা চরম বৈষম্যের শিকার। দীর্ঘদিন একই পদে চাকুরি করেও নানা জটিলতার কারণে শিক্ষকরা সময়মত পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এমনকি শিক্ষকদের আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি, ডিজিটাল শিক্ষণ প্রযুক্তি ও গবেষণায় প্রশিক্ষণের সুযোগও সীমিত,” যুক্ত করেন ইউট্যাব সভাপতি।
ইউট্যাব সভাপতি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দেশের উচ্চশিক্ষার মূল কারিগর হলেও অন্যান্য সরকারি ক্যাডারের তুলনায় তারা আর্থিক সুবিধাদী লাভে পিছিয়ে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত গবেষণা তহবিল নেই। ফলে যোগ্য শিক্ষক ও গবেষক থাকলেও বিশ্বমানের গবেষণার সুযোগ তারা পান না। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ন হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এমনকি রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে শুধু পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়া নয়, অনেকে চাকুরিচ্যুতও হয়েছেন।”
ইউট্যাব সভাপতি আরো বলেন, “শিক্ষা ও প্রযুক্তিনির্ভর, গবেষণামুখী ও নৈতিকভাবে সচেতন একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা টেকসই উন্নয়নের মূলশর্ত। আর একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরির মূল কারিগর হলেন শিক্ষক। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষকরা আজ অর্থনৈতিক অনটন ও পেশাগত অবমূল্যায়নের কারণে হতাশ।”
এ অবস্থার উত্তরণে ইউট্যাব ১২ দফা দাবি জানায়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতি গড়ার কারিগর সকল স্তরের শিক্ষকদের জন্য একটি সুষম ও মর্যাদাসম্পন্ন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে; শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করতে হবে; শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ, গবেষণা সুযোগ ও ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে; শিক্ষকদের প্রকৃত শিক্ষাদানে মনোনিবেশ করার জন্য প্রশাসনিক কাজ কমিয়ে আনতে হবে; সকল স্তরের বেসরকারি শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে হবে এবং অবসর গ্রহণকারী বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধাসহ সকল পাওনা অবিলম্বে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে; আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র, মর্যাদাপূর্ণ ও উচ্চতর বেতন স্কেল প্রবর্তন করতে হবে।
অন্য দাবিগুলো হলো- শিক্ষকদের গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে গবেষণা ভাতা প্রদান করতে হবে; পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও গবেষণার মানোন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিবছর ন্যূনতম ১ টি আন্তর্জাতিক ও ১ টি জাতীয় পর্যায়ে কনফারেন্স/সেমিনারে অংশগ্রহণ ও গবেষণাপত্র উপস্থাপনের জন্য ভ্রমণ ভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে; উন্নতমানের জার্নালে গবেষণাপত্র ও স্বীকৃত মানের গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের চাকরির নিশ্চয়তা, বেতন কাঠামো নির্ধারণ ও গবেষণা সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মুক্তবুদ্ধি চর্চার সুযোগ অবারিতকরণসহ শিক্ষা ও গবেষণা বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; শিক্ষকদের সম্মান, সামাজিক মর্যাদা ও কর্মক্ষেত্রে সকল প্রকার অনিশ্চয়তা দূর করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সোহাগ আউয়াল, ইউট্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুর রশিদ, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম, অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন, অধ্যাপক মেহেদী হাসান খান, অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম, অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম রুবেল প্রমুখ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র জন য স তর র শ ক ইউট য ব র অন য ন য ব সরক র শ ক ষকর আর থ ক প শ গত
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক ২ কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসানের নামে থাকা সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রবিবার (৯ নভেম্বর) দুদক সূত্র জানায়, নোটিশ পাঠানোর ২১ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। না হলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পৃথক নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে কমিশন বিশ্বাস করেছে যে তারা জ্ঞাত আয়ের বাইরে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
দুদক আইন, ২০০৪-এর ধারা ২৬(১) অনুযায়ী তাদের, তাদের স্ত্রীর এবং নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে থাকা সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস এবং সম্পদ অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ ২১ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে হবে।
দুদক সতর্ক করেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করা বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া হলে ধারা ২৬(২) অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত ২৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী দুদকে ডা. মাহমুদুল হাসান ও তুহিন ফারাবি বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ এনে অনুসন্ধানের আবেদন করেন। এরপর এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। আর গত ২১ মে সাবেক এই দুই কর্মকর্তাকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
গত ২৭ মে তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসানের নামে বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে চিকিৎসক বদলি, টেন্ডার ও প্রশাসনিক তদবিরের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা