৮ মাস আগে মা মারা যান ক্যানসারে, আজ ছেলের মৃত্যু ডেঙ্গুজ্বরে
Published: 5th, October 2025 GMT
নেছার পাটোয়ারীর মা মাহফুজা বেগম ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান প্রায় আট মাস আগে। সেই শোক কাটতে না কাটতেই আজ রোববার সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেলেন নেছার পাটোয়ারীও (৩২)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। অল্প সময়ের ব্যবধানে মা-ছেলের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে গভীর শোক।
নেছার পাটোয়ারীর বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর এলাকায়। ইউসুফ পাটোয়ারী ও মাহফুজা বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজ। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনিই একমাত্র ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় ব্যবসা করতেন এবং সেখানেই থাকতেন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভোগার পর আট মাস আগে মারা যান নেছারের মা। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আজ সকালে আবার নেমে এল মৃত্যু-বিষাদ। সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান নেছার পাটোয়ারী।
নেছার পাটোয়ারীর চাচা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিপন মীর বলেন, গত সপ্তাহে নেছার পাটোয়ারী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ সকালে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে পাঁচটায় তিনি না-ফেরার দেশে চলে যান।
নেছারের বোন বিউটি আক্তার ও নারগিস আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমাদের দুই বোনের একটাই ভাই। মাকে হারিয়ে ভাইকে নিয়েই সান্ত্বনা পেতাম। ভাইয়ের দিকে তাকালেই মা হারানোর শোক ভুলে যেতাম। আজ সেই ভাইও আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন। আমরা বড়ই নিঃস্ব হয়ে গেলাম। ভাই হারানোর এই কষ্ট ভুলব ক্যামনে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নীলফামারীতে বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, রেড অ্যালার্ট
ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
রোববার সকাল ছয়টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১২ ঘণ্টার ব্যবধানের সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ওই পয়েন্টে তিস্তা নদীর বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। সকাল ৬টায় প্রবাহিত হচ্ছিল ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার দিয়ে। সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে প্রবাহিত হচ্ছিল ৫২ দশমিক ২৮ মিটার দিয়ে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার ডান তীরের বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে বাশের পাইলিং করে বালির বস্তা নিক্ষেপ করছে পাউবো।
তিস্তার তীরবর্তী ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম এবং চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, রোববার দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা অব্যাহত আছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেরস্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারের চর, খোকার চর, খাড়াপাড়া, ফ্লাটপাড়াসহ তিস্তাপারের বিভিন্ন চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমন খেত তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্রমতে, রোববার সকাল ছয়টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৪৮ মিটার, দুপুর ১২টায় ৫২ মিটার, বেলা তিনটায় ৫২ দশমিক ১৪ মিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক দশমিক ২৮ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল তিস্তা নদীর পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কালীগঞ্জ নামের স্থানে তিস্তার ডান তীরের প্রধান বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেটির মেরামতকাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪ টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে সন্ধ্যায় মাইকিং করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।