জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের প্রস্তাব চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পথে: সালাহউদ্দিন
Published: 5th, October 2025 GMT
জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ রোববার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চতুর্থ দিনের আলোচনা শেষে একথা জানিয়েছেন তিনি।
জুলাই সনদ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে একটা ফাইনাল স্টেজে (চূড়ান্ত ধাপে) আমরা আছি… মোটা দাগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে মনে হয় আমরা এগোতে পেরেছি।'
গণভোটের প্রস্তাব প্রসঙ্গে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা সকল রাজনৈতিক দল মিলে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করি কি না—এটা একটা প্রশ্ন। তাই জনগণের কাছে যদি সম্মতি নেওয়া যায় যে আমরা রাজনৈতিক দলসমূহ জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করেছি, অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছি—জনগণ তার পক্ষে আছে কি না, তখনই হবে জনগণের পক্ষ থেকে এই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটা চূড়ান্ত অভিমত।’
গণভোটের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘রেফারেন্ডামের (গণভোট) যে আর্টিকেল ১৪২ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার উড়িয়ে দিয়েছিল, সেটা হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে রিইনস্টেট (পুনপ্রতিষ্ঠা) হয়েছে… এখন সংবিধানের আর কোথাও রেফারেন্ডাম করা যাবে না এমন কোনো বিধান নাই। সুতরাং একটা অর্ডিনেন্স জারি করে নির্বাচন কমিশনকে এখতিয়ার দেওয়া যেতে পারে একই দিনে সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি আলাদা ব্যালটে রেফারেন্ডাম (গণভোট) করার জন্য।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রেফারেন্ডামের (গণভোট) মাধ্যমে যে জনরায় আসবে সেটা সার্বভৌম ক্ষমতার একটা রায়। সুতরাং সমস্ত সংসদ সদস্যগণ সেটা মানতে বাধ্য হবে।’
এ সময় সাংবাদিকেরা প্রশ্ন রাখেন, যদি আগামী সংসদে জুলাই সনদের বিরোধী এমপিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়, তবে কি তারা গণরায় মানতে বাধ্য থাকবে? জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জনরায় হচ্ছে চূড়ান্ত… যখন পক্ষে বলবে তখন সেই সংসদ এবং সংসদ সদস্যগণ সেটা মানতে বাধ্য।’
বৈঠকে জুলাই সনদের বিভিন্ন ধারার ওপর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকা নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জুলাই সনদ প্রণীত হবে, স্বাক্ষরিত হবে, অঙ্গীকারনামায় সবাই সই করবে… ওয়েবসাইটে যাবে, সমস্ত পার্টির ইশতেহারে থাকবে… জনগণ জানবে জুলাই সনদে কী আছে। যারা ম্যান্ডেট পাবে, তারা তাদের নোট অব ডিসেন্ট অনুসারে যেতে পারবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ জ ল ই সনদ র জন ত ক দ বল ন গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে কঠোর কর্মসূচি: বাম গণতান্ত্রিক জোট
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি শাহ আলম। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চট্টগ্রাম নগরের পুরোনো রেলস্টেশন চত্বরে আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চাইছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোকে বন্দর ইজারা দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য পরিষ্কার করার আহ্বান জানান শাহ আলম। তিনি বলেন, এনসিপি ও জামায়াতকে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার করতে হবে। তারা বন্দর ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে কী ভাবছে, তা জনগণ জানতে চায়। এখন পর্যন্ত তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি।
বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার উদ্যোগে এই গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। ‘জনমত উপেক্ষা করে লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়া চলবে না’, এমন ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়।
সমাবেশে সিপিবি নেতা শাহ আলম আরও বলেন, ‘দেশবিরোধী চক্রান্ত চলছে। মিয়ানমারে করিডর দেওয়ার আলোচনা আমরা শুনেছি। এখন বন্দর দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বুকের রক্ত দিয়ে হলেও বন্দর রক্ষা করব।’
চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে শুরু হওয়া সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারের চুক্তি করার কথা রয়েছে।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে চলেছে বিভিন্ন সংগঠন। গত ২২ অক্টোবর ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।
আজ আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। বন্দর বিদেশিদের হাতে গেলে দেশীয় শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সরকার যেন আগেভাগেই দায় এড়াতে পারে, সে জন্যই বন্দরের মাশুল ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, কাল রোববার থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। এ সময়ের মধ্যে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করা হবে। তাতেও সফল না হলে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।
‘তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ বলেন, সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ইজারার সিদ্ধান্তও তারই অংশ। এখনই এ সিদ্ধান্ত থেকে না ফিরলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, সরকার নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারের অঙ্গীকার থেকে সরে গিয়ে দেশবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। বন্দরের লাভজনক টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনায় বদনাম আছে।
গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন নাসু বলেন, ‘জনগণের মত ছাড়া কোনোভাবেই বন্দর ইজারা দেওয়া যাবে না। কিন্তু সরকার জনগণের মতের তোয়াক্কা না করেই সরকার বিভিন্ন চুক্তি করেছে। এই সরকার এনজিওবাদী সরকার। এরা সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে কাজ করছে।’
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বাসদ (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সেক্রেটারি শেখ নুরুল্লাহ বাহার প্রমুখ। সমাবেশ শেষে রেলস্টেশন চত্বর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত মশালমিছিল করেন অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীরা।