রাজধানীর সবচেয়ে জনবহুল সিটি করপোরেশন ঢাকা দক্ষিণে নেই পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক, শূন্য পড়ে আছে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এতে ভেঙে পড়েছে সেবা কার্যক্রম, বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ। সড়ক মেরামত থেকে শুরু করে মশা নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা—সবখানেই চরম স্থবিরতা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান মিয়াকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ঢাকা ওয়াসারও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। একদিকে সিটি করপোরেশন, অন্যদিকে রাজধানীর প্রধান পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সংস্থা—এভাবে একই কর্মকর্তার ওপর দুটি গুরু দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ায় কার্যত কোনো প্রতিষ্ঠানই সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

আমরা কর দিই, কিন্তু সেবার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ওয়ার্ড অফিসে গিয়ে দেখি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নেই, কাগজপত্র ঝুলে থাকে মাসের পর মাস। এটা কি সিটি করপোরেশন চালানোর ধরন?আফজাল হোসেন, ধানমন্ডির বাসিন্দা

খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারাই বলছেন, স্থায়ী প্রশাসক না থাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রধান ব্যক্তিদের পদ শূন্য থাকায় নাগরিক সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত করা, মশার উৎপাত থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো, সিটি করপোরেশনের সম্পদ রক্ষা করা, জন্মনিবন্ধন সনদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সনদ প্রদানে নাগরিকদের দুর্ভোগ কমানো—সব কাজই ঢিমেতালে চলছে। এতে মানুষজন সিটি করপোরেশনের ওপর দিন দিন ভীষণ বিরক্ত হয়ে পড়ছেন।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। উত্তর সিটির সব কাজই দক্ষিণ সিটির তুলনায় দ্রুত এগোচ্ছে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই ব্যক্তি দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে কোনো প্রতিষ্ঠানই পূর্ণ মনোযোগ পায় না। এর ফলে নাগরিক সেবা ব্যাহত হয়, প্রশাসনিক জটিলতা বাড়ে।

আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এটা হয়ে যাবেস্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন আগে দেশ ছেড়ে যান সংস্থাটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তিনজন কর্মকর্তা ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে বর্তমান প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে। একই ব্যক্তি একাধিক দায়িত্বে থাকার কারণে দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে নিয়মিত আসতে পারছেন না মো.

শাহজাহান মিয়া। তিনি মাঝেমধ্যে নগর ভবনে এসে ফাইল সই করেন। নিয়মিত নগর ভবনে না আসার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফাইল দিনের পর দিন পড়ে থাকছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে একজন পূর্ণ প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এটা হয়ে যাবে।’

১১ পদে নেই কর্মকর্তা

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সচিব দপ্তর সূত্র বলছে, বর্তমানে সংস্থাটির ১১টি গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো কর্মকর্তা নেই। এর মধ্যে রয়েছে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও নিরীক্ষা কর্মকর্তা। প্রতিটি পদই সংস্থার মূল কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ছোটখাটো সমস্যার সমাধানের জন্যও তাঁদের বারবার সিটি করপোরেশনের মূল কার্যালয়ে যেতে হচ্ছে।

সংস্থাটির দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা না থাকায় সিটি করপোরেশনের আয় বাড়ানোর কাজ স্থবির হয়ে আছে। সম্পত্তি কর্মকর্তা না থাকায় কিছু কিছু এলাকায় দখলমুক্ত করা জমি আবারও দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে ডেঙ্গু ও অন্যান্য জনস্বাস্থ্য সংকটে সঠিক উদ্যোগ নিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের অনুপস্থিতিতে উন্নয়নকাজ হচ্ছে পরিকল্পনাহীনভাবে, যা নগরের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ডেকে আনছে। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও নিরীক্ষক না থাকায় আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাও সম্ভব হচ্ছে না।

এ ছাড়া সংস্থাটির পাঁচ অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা নেই। অঞ্চল-১, অঞ্চল-৩, অঞ্চল-৭, অঞ্চল-৯ ও অঞ্চল-১০—প্রতিটি অঞ্চলে একাধিক ওয়ার্ড রয়েছে। ওই সব অঞ্চলের সড়ক মেরামত, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতা ও নাগরিক সেবা তদারকির দায়িত্বে থাকেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা। কিন্তু এতগুলো অঞ্চল নির্বাহী কর্মকর্তাশূন্য থাকায় সেবা কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ছোটখাটো সমস্যার সমাধানের জন্যও তাঁদের বারবার সিটি করপোরেশনের মূল কার্যালয়ে যেতে হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, গুলিস্তান এলাকায় সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিপণিবিতানগুলোতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। একটি চক্র ভেঙে ফেলা সেসব দোকান আবার তৈরি করে বাণিজ্য করছে। এ ছাড়া করপোরেশনের বিভিন্ন সম্পত্তি নানাভাবে বেহাত হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা না থাকার কারণে করপোরেশনের সচিব অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই পদ সামলাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সচিব নিজেই তাঁর দপ্তরের কাজ শেষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ সামলানো তাঁর পক্ষে অসম্ভব।

গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কর্মকর্তা না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে স্থানীয় প্রশাসন এখন সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়েই চলছে। এর ফলে কর্মকর্তাদের একটা শূন্যতা তো আছেই। একই সঙ্গে ভালো, যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তা পাওয়াটাও অনেক সময় মুশকিল হয়ে যায়। যদিও এখন ঢাকা দক্ষিণ সিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে ইতিমধ্যে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই নিয়োগগুলো হয়ে গেলে স্থবিরতা অনেকটাই কাটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাস্তা, ড্রেনেজ, ময়লা অপসারণ, স্বাস্থ্যসেবা—সবকিছুই নির্ভর করে এই প্রতিষ্ঠানের ওপর। কিন্তু শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় নাগরিকেরা প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।সেবার সংকটে নাগরিকেরাএক বছরের বেশি সময় ধরে সরকার একজন ব্যক্তিকে ঠিক করতে পারেনি, যিনি এই সিটির স্থায়ী প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন। এটা সরকারের অনেক বড় গাফিলতি।আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা তসলিম হোসেন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রায় এক কোটির বেশি নাগরিক বসবাস করেন। তাঁদের প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কাজ সরাসরি জড়িত। রাস্তা, ড্রেনেজ, ময়লা অপসারণ, স্বাস্থ্যসেবা—সবকিছুই নির্ভর করে এই প্রতিষ্ঠানের ওপর। কিন্তু শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় নাগরিকেরা প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
ধানমন্ডির এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা কর দিই, কিন্তু সেবার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ওয়ার্ড অফিসে গিয়ে দেখি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নেই, কাগজপত্র ঝুলে থাকে মাসের পর মাস। এটা কি সিটি করপোরেশন চালানোর ধরন?’

নাগরিকদের সেবা প্রদানে ধীরগতি ও চরম অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজধানীর আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা তসলিম হোসেন বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে সরকার একজন ব্যক্তিকে ঠিক করতে পারেনি, যিনি এই সিটির স্থায়ী প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন। এটা সরকারের অনেক বড় গাফিলতি। দ্রুত শূন্য পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে নাগরিক সেবা আরও নির্বিঘ্ন করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র কর মকর ত র প রথম আল ক সরক র র প রক শ বলছ ন র ওপর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশিত

নৈতিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবকেন্দ্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পন্ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি মূল্যায়ন (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট—র‌্যাম) প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এআই গ্রহণের মাধ্যমে অধিকার সুরক্ষা, অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করার পথনির্দেশক হিসেবে এ প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আজ বৃহস্পতিবার অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট—এটুআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার আইসিটি টাওয়ারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মিলনায়তনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, এটুআই, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে র‌্যাম প্রতিবেদনটি উন্মোচন করা হয়। এতে বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

প্রতিবেদনটিতে এআই বিষয়ে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক, আইনগত, সামাজিক ও কারিগরি প্রস্তুতির প্রথম সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল সরকারব্যবস্থায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে ও সরকারি ডিজিটাল সেবার প্রতি নাগরিকদের আস্থার মাত্রাও উচ্চমানের। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে অনিয়মিত ইন্টারনেট সংযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, লিঙ্গভিত্তিক ও শহর-গ্রামের দীর্ঘস্থায়ী ডিজিটাল বৈষম্য, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং তথ্য সুরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধির ঘাটতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘এই মূল্যায়ন প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে প্রকাশিত হলো। বাংলাদেশ এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে এখন নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো আগামী কয়েক দশক ধরে সমাজকে প্রভাবিত করবে। এই প্রতিবেদন আমাদের স্পষ্টভাবে দেখায় আমরা কোন অবস্থানে আছি এবং কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বিচারের বিকল্প না হয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করে। আর নাগরিকদের শোষণ না করে তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত করে।’

আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী চলমান নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায়, বিশেষ করে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে র‌্যাম প্রতিবেদনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নীতি নির্ধারণ হতে হবে অনুমাননির্ভর নয়, প্রমাণনির্ভর।

ইউনেসকোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত নীতিনির্দেশনা-ভিত্তিক সুপারিশের আলোকে প্রণীত এ মূল্যায়নে জাতীয় পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিস্তৃত পরামর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ইউনেসকো কার্যালয়ের প্রধান ও কান্ট্রি প্রতিনিধি সুসান ভাইজ তাঁর বক্তব্যে র‌্যাম প্রতিবেদনকে একই সঙ্গে ‘একটি দর্পণ এবং একটি রূপরেখা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। একদিকে শাসনব্যবস্থা, অবকাঠামো, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ও তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন এতে রয়েছে, অন্যদিকে অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ নির্ধারণে সহায়ক সুস্পষ্ট রূপরেখা এতে আছে। তিনি তথ্য সুরক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা, বাংলা ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় উচ্চমানের তথ্যভান্ডার তৈরি এবং কন্যাশিশু ও নারীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, এআই ব্যবধান কমাবে নাকি বাড়াবে, তা নির্ভর করবে দেশগুলো এখন কী সিদ্ধান্ত নেয় তার ওপর। সংযোগ, দক্ষতা, ডেটা এবং কম্পিউটিং অবকাঠামো শক্তিশালী করা, নির্ভরযোগ্য নিয়ন্ত্রক ও শাসনকাঠামো তৈরি করা এবং জাতীয় সক্ষমতার সঙ্গে এআই কৌশলগুলোকে খাপ খাইয়ে নেওয়া—এই সবকিছুই নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিমালার ওপর ইউনেসকোর সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা মানবাধিকার, ন্যায়বিচার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে গতিশীল করবে।

এটুআই কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক মোহা. আবদুর রফিক র‌্যাম প্রতিবেদনে উত্থাপিত সুপারিশগুলোকে সেবাদানে দৃশ্যমান উন্নতিতে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, র‌্যাম প্রতিবেদন নাগরিকমুখী সেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করা যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবে, যাতে মানুষ দ্রুততর, ন্যায্য ও আরও নির্ভরযোগ্য সাড়া পায়, কিন্তু বিদ্যমান ডিজিটাল বৈষম্য যেন কোনোভাবেই না বাড়ে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দপ্তরের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান মিখাল ক্রেজা বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই প্রতিবেদন একটি আস্থাভিত্তিক এআই ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে সহায়তা করবে, যাতে উদ্ভাবনের সুফল সব নাগরিকের কাছে পৌঁছে যায়। বিশেষ করে তরুণ, নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ