নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রায়ই গর্ব করেন। অথচ সরকারের নীতিগত ভুলের কারণে মাঝবয়সী নারীরা যখন চাকরি হারিয়ে বিপাকে পড়েন, তার চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য আপা, ডে কেয়ার ও জয়িতার মতো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আড়াই হাজারের বেশি কর্মী চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন নারী।
শুধু কর্মসংস্থানের প্রশ্ন নয়, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সরকারি সেবার তথ্য নারীদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এই কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হঠাৎ করে প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সেবাগ্রহীতা নারীরাও সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
কোনো একটি প্রকল্প টেকসই হবে কি না, উদ্দেশ্য পূরণ হবে কি না—এসব বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা না করেই প্রকল্প চালু করার যে সংস্কৃতি বিগত সরকারগুলো ও আমলাতন্ত্র করে এসেছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো তার ব্যতিক্রম নয়। সরকার পরিবর্তন হলে কোনো বিচার-বিবেচনা ছাড়াই আগের আমলে নেওয়া প্রকল্প বাদ দেওয়ার নজিরও এখানে চালু রয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়া এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প বন্ধ—এই দুইয়ের মাঝে পড়ে শেষ পর্যন্ত নাগরিকেরাই যে পিষ্ট হন, সেটা নীতিনির্ধারকেরা কখনো ভেবে দেখেন না। অথচ চব্বিশের অভ্যুত্থান এই বাজে ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসার একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল।
বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, তার পেছনে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের ভূমিকা কেউই অস্বীকার করবে না। কিন্তু নারীরা যাতে নিশ্চিন্তে কাজ করে যেতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা যাতে গড়ে ওঠে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ যেখানে ৩৫-৩৮ শতাংশ, সেখানে পাড়ায়-মহল্লায় সাধ্যের মধ্যে দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে ওঠাটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সেটা শুধু অপ্রতুলই নয়, ব্যয়বহুলও। এ বাস্তবতায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ বছরের জুলাই মাস থেকে মহিলা ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০টি ডে কেয়ার সেন্টারের কর্মীদের বেতন বন্ধ। নতুন প্রকল্প কবে চালু হবে, সেটা চালু হলে পুরোনো কর্মীদের জায়গা হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আবার যেসব অভিভাবক সন্তানদের এসব দিবাযত্ন কেন্দ্রে রেখে নিশ্চিন্তে চাকরি করতেন, তাঁরা এখন কী করবেন?
তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা সম্প্রতি চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৭২ দিন আন্দোলন করার পর সরকারের আশ্বাসে চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু তাঁদের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। প্রকল্পের প্রস্তাব ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এ প্রকল্পের প্রায় দেড় হাজার কর্মীর চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রকল্পের প্রস্তাব যদি ত্রুটিপূর্ণ থাকে, তার দায় কি প্রকল্পে কাজ করা কর্মীদের, নাকি যাঁরা প্রকল্প তৈরি করছেন তাঁদের?
নীতিনির্ধারকদের ভুল কিংবা খামখেয়ালির কারণে মাঝবয়সে নারীদের কাজ হারিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হচ্ছে। এটা নিশ্চিত করেই নারীর ক্ষমতায়নের পথে বড় বাধা তৈরি করছে। ফলে প্রকল্প নেওয়ার আগেই সেটা টেকসই হবে কি না, উদ্দেশ্য পূরণ করা যাবে কি না, সেই প্রশ্নগুলোর মীমাংসা জরুরি। টেকসই হবে না এমন প্রকল্প নেওয়া ঠেকাতে অবশ্যই এ ধরনের প্রকল্প তৈরির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
তথ্য আপা, ডে কেয়ার ও জয়িতার কর্মীদের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, দ্রুত তার সমাধান করা প্রয়োজন। নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান প্রশ্নে কোনো আপস করা চলবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র কর ম দ র র কর ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে আপস নয়
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রায়ই গর্ব করেন। অথচ সরকারের নীতিগত ভুলের কারণে মাঝবয়সী নারীরা যখন চাকরি হারিয়ে বিপাকে পড়েন, তার চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য আপা, ডে কেয়ার ও জয়িতার মতো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আড়াই হাজারের বেশি কর্মী চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন নারী।
শুধু কর্মসংস্থানের প্রশ্ন নয়, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সরকারি সেবার তথ্য নারীদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এই কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হঠাৎ করে প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সেবাগ্রহীতা নারীরাও সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
কোনো একটি প্রকল্প টেকসই হবে কি না, উদ্দেশ্য পূরণ হবে কি না—এসব বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা না করেই প্রকল্প চালু করার যে সংস্কৃতি বিগত সরকারগুলো ও আমলাতন্ত্র করে এসেছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো তার ব্যতিক্রম নয়। সরকার পরিবর্তন হলে কোনো বিচার-বিবেচনা ছাড়াই আগের আমলে নেওয়া প্রকল্প বাদ দেওয়ার নজিরও এখানে চালু রয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়া এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প বন্ধ—এই দুইয়ের মাঝে পড়ে শেষ পর্যন্ত নাগরিকেরাই যে পিষ্ট হন, সেটা নীতিনির্ধারকেরা কখনো ভেবে দেখেন না। অথচ চব্বিশের অভ্যুত্থান এই বাজে ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসার একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল।
বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, তার পেছনে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের ভূমিকা কেউই অস্বীকার করবে না। কিন্তু নারীরা যাতে নিশ্চিন্তে কাজ করে যেতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা যাতে গড়ে ওঠে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ যেখানে ৩৫-৩৮ শতাংশ, সেখানে পাড়ায়-মহল্লায় সাধ্যের মধ্যে দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে ওঠাটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সেটা শুধু অপ্রতুলই নয়, ব্যয়বহুলও। এ বাস্তবতায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ বছরের জুলাই মাস থেকে মহিলা ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০টি ডে কেয়ার সেন্টারের কর্মীদের বেতন বন্ধ। নতুন প্রকল্প কবে চালু হবে, সেটা চালু হলে পুরোনো কর্মীদের জায়গা হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আবার যেসব অভিভাবক সন্তানদের এসব দিবাযত্ন কেন্দ্রে রেখে নিশ্চিন্তে চাকরি করতেন, তাঁরা এখন কী করবেন?
তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা সম্প্রতি চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৭২ দিন আন্দোলন করার পর সরকারের আশ্বাসে চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু তাঁদের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। প্রকল্পের প্রস্তাব ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এ প্রকল্পের প্রায় দেড় হাজার কর্মীর চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রকল্পের প্রস্তাব যদি ত্রুটিপূর্ণ থাকে, তার দায় কি প্রকল্পে কাজ করা কর্মীদের, নাকি যাঁরা প্রকল্প তৈরি করছেন তাঁদের?
নীতিনির্ধারকদের ভুল কিংবা খামখেয়ালির কারণে মাঝবয়সে নারীদের কাজ হারিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হচ্ছে। এটা নিশ্চিত করেই নারীর ক্ষমতায়নের পথে বড় বাধা তৈরি করছে। ফলে প্রকল্প নেওয়ার আগেই সেটা টেকসই হবে কি না, উদ্দেশ্য পূরণ করা যাবে কি না, সেই প্রশ্নগুলোর মীমাংসা জরুরি। টেকসই হবে না এমন প্রকল্প নেওয়া ঠেকাতে অবশ্যই এ ধরনের প্রকল্প তৈরির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
তথ্য আপা, ডে কেয়ার ও জয়িতার কর্মীদের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, দ্রুত তার সমাধান করা প্রয়োজন। নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান প্রশ্নে কোনো আপস করা চলবে না।